image

কামরাঙ্গীরচরে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশসহ ছয়জন জেলে

image

পুলিশ যখন দেশব্যাপী ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরী করতে সমাবেশ করছে তখন পুলিশের এক এএসআই এর নেতৃত্বে ওই দিন সমাবেশ শেষে সন্ধ্যায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষক পুলিশ ও তার পাঁচসহযোগীকে আটক করা হলেও কঠোরতার সঙ্গে পুলিশের ধর্ষণে জড়িত থাকার বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়।

১৭ অক্টোবর ২০২০খ্রী: পুলিশের হাতে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে খোদ রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে গত ১৭ অক্টোরবর (শনিবার) কামরাঙ্গীরচরের কাওসার রোডে এক গৃহবধূকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ এএসআই করিম চৌধুরী নেতৃত্বে পালাক্রমে ছয়জন মিলে ধর্ষণ করে। এসময় ওই গৃহবধূর স্বামী বাড়িতে ছিলেন না।

জানা গেছে হাজারীবাগে ডাঃ তানিয়ার চেম্বারে ওই গৃহবধূর সঙ্গে পরিচয় হয় এএসআই করিম চৌধুরীর। কাওসার রোডের তিন তলা একটি বাড়ির ৩তলায় ওই গৃহবধূ স্বামী নিয়ে থাকতেন। তাদের কোন সন্তান নেই। গৃহবধূর স্বামী একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

ঘটনার একদিন পর গত ১৮ অক্টোবর ওই নারী কামরাঙ্গীর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ৩ উপধারা এবং ৩০নং ধারায় মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং ৩৭, তারিখ ১৮ (১০)২০।

ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ জানান, কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করার সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত এএসআইকে থানা হেফাজতে রেখে গৃহবধূর মেডিকেল পরীক্ষা করিয়ে এবং ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়েই এএসআই করিম চৌধুরীও তার পাঁচ সহযোগিকে আটক করা হয়।

আমাদের কামরাঙ্গীরচর সংবাদদাতা জানান, ১৮অক্টোবর মামলা দায়ের পর গত ২০ অক্টোবর অভিযুক্ত এএসআই করিম চৌধুরীসহ পাঁচজনকে আটক করে সিএমএম আদালতে উপস্থাপন করা হলে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

এবিষয়ে কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ হোক আর যেই হোক অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাই ভিকটিমের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এর সত্যতা নিশ্চিত হয়ে অভিযুক্ত পুলিশের এএসআই করিম চৌধুরী ও তার পাঁচ সহযোগীকে আটক করি এবং তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

জানা গেছে, ওই বাড়ির নীচতলার একটি ঘরে এএসআই করিম চৌধুরী নিয়মিত যাতায়াত করতেন তার এক সহকর্মীর বাসায়।

ঘটনার পর থেকেই নিরাপত্তাহীনতার কারণে ওই গৃহবধূ কামরাঙ্গীরচরের কাওসার রোডের বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন।

প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার পর পরই পুলিশ ওই বাড়ির অন্যদের শাসিয়ে যায় এ বিষয়ে কেউ যেন কথা না বলে।

ধর্ষিতার প্রতিবেশীরা জানান, এএসআই করিমকে আটকের দিন একগাড়ি পুলিশ এসে আশেপাশে সবাইকে শাসিয়ে যায় কোন সাংবাদিক বা কেউ আসলে যেন ধর্ষণে পুলিশ জড়িত এ বিষয়ে কেউ যেন কথা না বলে। যার ফলে দুই সপ্তাহ ধরে ওই বাড়িতে অপরিচিত কেউ গেলেই বাসিন্দারা চলে যান, কেউ কথা বলতে চান না।

এব্যাপারে কামরাঙ্গীরচর থানায় কঠোরভাবে সকল পুলিশকেই সতর্ক করা হয় কেউ যেন কথা না বলে।

ধর্মের কল যেমন বাতাসে নড়ে, তেমনী পাপ কখনও চাপা থাকেনা। বিলম্বে হলেও এলাকাবাসী মুখ খুলতে শুরু করেছে। তবে পুলিশের ভয়ে কেউ তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।

মামলার পর গত ২০ অক্টোবর এএসআই করিম চৌধুরীসহ ছয় আসামীকে অতিদ্রুততার সঙ্গে আদালতে প্রেরণ করে বিষয়টি  প্রকাশ না করার জন্য জিআরও অফিসে মৌখিক সর্তক বার্তা দেন কামরাঙ্গীরচর থানার পুলিশ। থানা পুলিশ বা আদালত কেউই এবিষয়ে কথা বলতে চাননি। সবার একই উত্তর কিছুই জানি না। গত একসপ্তাহ চেষ্টার পর প্রকাশ পায় পুলিশের ধর্ষণের ঘটনাটি। অনুসন্ধানে খোঁজ পাওয়া যায় ধর্ষিতা গৃহবধূরও। তবে নিরাপত্তার কারণে তার নাম পরিচয় ও ঠিকানা প্রকাশ করা হলো না।

উল্লেখ্য, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ৩ উপ ধারায় বলা হয়েছে, যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধ ভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ফলে নারী বা শিশুর মৃত্যু হয় তাহা হইলে ওই ব্যক্তির মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত হবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা অর্থ দন্ডেও দন্ডিত হইবেন। এ ছাড়া ৩০ ধারায় প্ররোচনা বা সহায়তায় শাস্তির বিধান রয়েছে।