image

সাংবাদিক মন্টুর মৃত্যু রহস্যঃ পুলিশের অপেক্ষা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট

image

ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক শীর্ষ অপরাধ পত্রিকার সম্পাদক  ও প্রকাশক তরুণ সাংবাদিক  হুমায়ুন আহমেদ মন্টু’র মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ, স্বজন ও তার সহকর্মীরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ময়নাতদন্ত রিপোর্টের। ঘটনার দুই সপ্তাহ পরও মৃত্যু রহস্যের কোন কুলকিনারা হয়নি।।

গত ১৩নভেম্বর রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় তার মৃত্যু নিয়ে পুলিশই একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে।

গত ১৩ নভেম্বর ( শুক্রবার) তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত  মৃত্যুর কাছে হেরে যান এই তরুণ সাংবাদিক ও দৈনিক পত্রিকাটির সম্পাদক। ওই দিন ভোর পৌনে সাতটার দিকে ঢাকার ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা চিকিৎসাধীন মন্টুকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার মৃত সনদে লেখা হয়" মিথানল পইজনিং"। একজন তরুণ সাংবাদিক ও দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের মৃত্যু ঘটলো মিথানল পইজনিংয়ে।

পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত সাংবাদিক মন্টুর মৃত্যুর কারণ নিয়ে কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

এবার দেখা যাক মিথানল কী, কী কাজে তা ব্যবহার করা হয় ? : মিথানল, যা মিথাইল এলকোহল, উড এলকোহল, উড ন্যাপথা, উড স্পিরিট ইত্যাদি নামে পরিচিত, একটি রাসায়নিক পদার্থ। আধুনিক মিথানল সরাসরি কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন থেকে ক্যাটালাইটিক শিল্প পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়। অ্যালকোহলের প্রকারভেদের মধ্যে মিথানল সব থেকে সরল অ্যালকোহল। এটা হালকা, উদ্বায়ী, দহনশীল , বর্ণহীন তরল।ইথানলের মত গন্ধ থাকলেও মিথানল পানযোগ্য নয়। এটি খুবই বিষাক্ত এবং হজমের অনুপযোগী। কক্ষতাপমাত্রায় এটি পোলার দ্রাবক হিসেবে কাজ করে। এন্টিফ্রিজ, দ্রাবক, জ্বালানী হিসেবে মিথানল ব্যবহার করা হয়। শিল্প কারখারখানার জন্য আমদানীকৃত ইথানল পানের অনুপযোগী করতে এর সাথে মিথানল মিশ্রিত করা হয়।অধিক পরিমানে মিথানলের উপস্থিতি ফরমিক এসিড বা ফরমেট লবনের মেটাবোলাইজ ঘটায় যা কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর্। এর ফলে অন্ধত্ব, পঙ্গুত্ব এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। শিল্প কারখানার জন্য আমদানিকৃত মিথানল মিশ্রিত ইথানলকে বলা হয় মিথাইলেটেড স্পিরিট। দেশে প্রতিবছর অনেক মানুষ এই বিষাক্ত স্পিরিট পানের কারণে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।যে ঘটনার সর্বশেষ শিকার হলেন এই তরুণ সাংবাদিক মন্টু।কিন্তু তার এই মৃত্যু নিয়ে নানা কথার রসময় গল্প মুখে মুখে ছড়িয়ে যাচ্ছে করোনা ভাইরাসের মতো। কেউ বলছেন সাংবাদিক মন্টুকে পরিকল্পিতভাবেই মাদকে বিষ মিশিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কেউ বলছেন এই মৃত্যুর পেছনে প্রভাবশালী কারো চালবাজি রয়েছে। আবার কেউ বলছেন নারী ঘটিত ঘটনা এর পেছনে কাজ করেছে।

সাংবাদিক মন্টু ছিলেন অবিবাহিত। বয়সে তরুণ এই সাংবাদিকদের আনুমানিক বয়স ৪৪বছর। পুরান ঢাকার হাজারীবাগ থানার বোরহান পুর লেনের ১০ নংগলি হিসেবে পরিচিত মহল্লায় তিনি বোনের বাসায় থাকতেন। তার অভিভাবক বলে তেমন কেউ নেই।নিজের মতো করেই চলতেন। সাত আট বছর আগে প্রথমে সাপ্তাহিক পরে দৈনিক পত্রিকা হিসেবে অনুমোদন নেন শীর্ষ অপরাধ পত্রিকাটির। এরপর থেকেই পত্রিকাটি নিয়মিতই প্রকাশ করে মিডিয়া তালিকাভুক্তির কাজ করছিলেন। তরুণ সাংবাদিক ও সম্পাদকের আর্কষিক মৃত্যু তার প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।কি কারণে তার মৃত্যু হলো? কেন কারা তাকে বিষ মিশিয়ে হত্যা করলো? এই হত্যার পেছনে কারা কলকাঠি চেলেছেন? কি এমন রাজ ফাঁস করে দিচ্ছিলেন সাংবাদিক মন্টু বা তার পত্রিকা?  যে কারনে তাকে মৃত্যুর পরিনতি ভোগ করতে হলো? এমন নানান প্রশ্নের উত্তর খোঁজে বেড়াচ্ছেন তার সহকর্মীরা। রাত বিরাতে সবার যে কোন বিপদ আপদ বা সাহায্যে এগিয়ে আসতেন, তাকে কেন এমন মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হলো?সবাই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। 

দুই রাত কোথায় ছিলেন মন্টু? গত ১১ নভেম্বর ভোরে মন্টুকে  অসুস্থ অবস্থায় বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন এক নারী।এরপর থেকেই তার আর জ্ঞান ফিরেনি।শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়।মৃত্যুর কারন হিসেবে মিথানল পইজনিং এর কথা বলা হয়েছে।তাই তার স্বজন, সহকর্মী ও এলাকাবাসীর  প্রশ্ন মন্টু তা হলে ৯ ও ১০ নভেম্বর এ দুই দিন কোথায় ছিলেন?সর্বশেষ ৯ নভেম্বর তার পত্রিকা প্রকাশিত হয়।রাতেই প্রেস থেকে হাজারীবাগ বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন একটি হাউজিং এ তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু  সঙ্গেই ছিলেন এমনটাই জানতে পেরেছেন তার স্বজনরা ও হাজারীবাগ থানার পুলিশ।জানাগেছে ওই রাতে পাসপোর্ট নামে একটি মদ সেবন করেন  দুই বন্ধু।এ সময় কামরাঙ্গীরচর একটি মার্কেটের মালিক তাদের  সঙ্গে থাকলেও তিনি মদ পান করেননি।মদ পান শেষে মন্টু রাতেই বাড়িতে চলে যায় এমনটাই জানান তার সঙ্গের বন্ধু। কিন্তু বুধবার সকালে মন্টু কে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যান এক নারী। পুলিশ ওই নারীর পরিচয় পেয়েছে বলে যানাগেছে।তাই ঘটনার পর দুইদিন মন্টু কি ওই নারীর বাসাই ছিলেন না অন্য কারো বাসায়? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলেই মন্টু মৃত্যুর রহস্যের জটিল খুলবে বলে অনেকেই মনে করেন।তারস্বজন ও সহকর্মীদের দাবি মদ পানে অসুস্থ  বেচে যাওয়া তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই সব রহস্যের জট খুলবে বলে তারা মনে করেন।

মৃত্যুর কারণ মিথানল পইজনিং : মন্টুর মৃত্যুর কারণ হিসেবে বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মিথানল পইজনিং বলে সনাক্ত করে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন তাদের পান করা মদের সরবরাহকারী কে? এবং কোন দোকান থেকে এই ভেজাল বিষাক্ত মদ বিক্রি করা হয়েছে? পুলিশ কেবল একটি ইউডি মামলা নিয়ে ময়নাতদন্তের অপেক্ষা করছে।বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, কে কার সাহায্যে কার কাছ থেকে ওই মদ ক্রয় করা হয়েছে পুলিশ তার সব তথ্য সংগ্রহ করছে।মন্টুর লাশের ময়নাতদন্তকারী  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সোহেল মাহমুদ জানান,তার মৃত্যুর প্রকৃত কারন নির্ণয়ে পাকস্থলী,রক্ত সহ বেশ কয়েকটি আলামত তারা রাসায়নিক- ক্যামিকেল টেস্টের জন্য মহাখালির ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছেন।সব গুলো টেস্টের রিপোর্ট আসলেই মৃত্যুর কারন জানাযাবে। তবে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর কারন বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে।