নারীর প্রতি সহিংসতা শুরু হয় জন্মের আগ থেকে; শেষ হয় মৃত্যুতে। যেহেতু বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফী করলে বুঝা যায় ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে? যদি পরিবার জানেন, মেয়ে হবে তাহলে মা সহ চৌদ্দগুষ্ঠির কেউ সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে পারেন না। অনেক নারীকেই দেখেছি, আমি শুধুমাত্র মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছেন বলে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে এবং সংসার ভাঙ্গতে। এমনকি কোন কোন স্বামী একাধিক বিয়ে করে বউ বাচ্চাকে রেখে ঘর ছেড়েছে।
মজার বিষয় বিজ্ঞান বলে সন্তান ছেলে কিংবা মেয়ে হবে সেখানে বাবার ভূমিকাই মূখ্য, মায়ের কোন ভূমিকা নাই। অথচ বলির পাঠা হচ্ছেন নারীরা। পরিবারে খাবার, পোশাক পড়াশুনা, খেলাধূলা করা, বাইরে বের হওয়া, চলাফেরা, কথাবার্তা, টাকা-পয়সা খরচ, কাজকর্ম, চাকুরি সবকিছু নিয়ে পরিবারে নারী পুরুষ সন্তানের মধ্যে চলে চরম বৈষম্য।
অধিকাংশ পরিবারের লোকজন মেয়েকে বোঝা মনে করেন বিয়ে দিলেই তাদের দায়িত্ব শেষ মনে করেন এটা আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র। তবে ব্যতিক্রম সামান্য কিছু আছে বটে। নারীরা বিয়ে পর যখন স্বামীর পরিবারে যান তখন স্বামীর পরিবারের সকল মানুষকে ভাল রাখতে হবে, কাজকর্ম, কথাবার্তা, আচার-আচারণ দিয়ে সবাইকে খুশি রাখতে হবে, কেউ খুশি না হলে শুরু হবে নিয়ার্তন গালিগালাজ এমনকি শারিরীক মানুষিক নির্যাতন। যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে মেরে ফেলেন এমন ঘটনা অহরহ।
নারীদেরকে সবকিছু নিরবে সহ্য করতেই হবে কারণ নারীদের নির্যাতন করার অধিকার এটা ঈশ্বরের নির্দেশ মনে করেন নির্যাতনকারীরা। কিছু ভদ্র সমাজের মানুষেরা মুখে মিডিয়াতে সভা সেমিনারে, স্লোগানে, প্লাকার্ডে, সমাজে, বিশেষ দিবসে বলে বেড়ান নারী অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন, সম্মান প্রদান করতে হবে, কিন্তু ঐ একই মানুষ ঘরে বাইরে নারীদের উপর শারিরীক মানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছেন এমন চিত্রও কম দেখা যায় না। অফিসের সহকর্মীদের কাছে নারীরা এখন নিরাপদ নয়, প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হচ্ছেন নানাভাবে কুরুচিপূর্ণ আলোচনা-সমালোচনার শিকার হচ্ছেন। আসলে নারীর সুরক্ষাটা কোথায় তাহলে? সমস্যাটা কোথায়? মস্তিষ্কে নয় কি?
নারীর পোশাককে দায়ী করে অশালীন কথা বার্তা ইভটিজিং করেন রাস্তায়, বাসায়, বাসে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হচ্ছে অবাধে। পোশাকে দোষ হলে আমার প্রশ্ন শিশু বৃদ্ধা এবং বোরকা হিজাব পরিহিতা নারী কেন ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছেন? বিকৃত বিকারগ্রস্থ মস্তিস্কের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য হচ্ছে ধর্ষণ। নারীকে পাচার, ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তি, যৌনদাসী, লালসা বন্তু, পণ্য,পরিবারের কাজে লোক, সন্তান লালন পালন করা এবং সন্তান উৎপাদনের বাক্স হিসাবে ব্যবহার করতে করতে একশ্রেণির মানুষের ভয়ানক এক অভ্যাসে পরিনিত হয়েছে সৃষ্টি থেকে। অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে, নারী কোন নির্যাতনের বস্তু নয় নারীরা আপনার আমার মত রক্ত মাংসে গড়া মানুষ তাদের প্রতি সর্বক্ষেত্রে সম্মান দেখাতে হবে। নারীরা সকল ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতা মেধার পরিচয় দিয়ে দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সকল ক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার, সমতা, সুয়োগ, প্রাপ্য নিশ্চিত করতে হবে। আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ করতে হবে।
নারীর প্রতি কোন সহিংসতা ঘটলে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সকল অভিভাবক, নারী, পুরুষ, পরিবার, সমাজ, সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একত্রে কাজ করতে হবে, নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। নারীর সমঅধিকার ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে দেশ সমাজ পরিবার সবই এগিয়ে যাবে। দৃষ্টিভঙ্গি আচার আচরণে পরিবর্তন এনে নারী দৃষ্টিতে বিশ্বকে দেখতে হবে। বিশ্বের সকল নারী সকল ক্ষেত্রে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকুক। সফল হোক ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১-এর প্রতিপাদ্য হলো ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব/ গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’।
লেখক : আবু বক্কার লিটন, উন্নয়ন কর্মী।
Developed By Muktodhara Technology Limited