image

মাতামুহুরীর নির্মল বাতাসে স্নিগ্ধতা বাড়াচ্ছে নতুন ধানের আগমনী বার্তা

image

মাতামুহুরীর বুক ভরে উঠেছে ভূমিহীন ও অন্যান্য চাষীদের বোরো ধানে। মৃতপ্রায় এসব নদ-নদীতে জেগে ওঠা বালুচরে বোরো ধান চাষ করছেন ভূমিহীন ও দরিদ্র কৃষকরা। এতে নদীর তীরের বোরে ধানে চাষাবাদে অনেক কৃষকদের  সচ্ছলতাও এসেছে।

পার্বত্য বান্দরবানের আলীকদম-লামা ও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী  প্রমত্তা মাতামুহুরি নদী নাব্যতা হারিয়ে মরে যেতে বসেছে। প্রতিবছরই উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বালু ও পলি জমে ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। কমে যাচ্ছে পানির প্রবাহ। নদীর বুকে জেগে উঠছে নতুন নতুন চর। 

জানা যায়, বান্দরবানের  মাইভার পর্বত (মিয়ানমার সীমান্ত) থেকে উৎপত্তি মাতামুহুরীর। এরপর সাপের মতো আঁকাবাঁকা পথে নদীটি বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৭০ কিলোমিটার। এর মধ্যে চকরিয়া উপজেলায় পড়েছে ৪০ কিলোমিটার। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদীর তলাট ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর বুকে কৃষকরা বিভিন্ন শাখ সবজি আবাদ করছে। তাছাড়া  বোরো ধানের চাষাবাদের উপযোগী হওয়ায়  এই তিন উপজেলার শত শত একর চরে বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে।

লামা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, চার দশক আগেও থই থই পানিতে বাদাম তুলে নৌকা চলত। কোথাও বা জাল দিয়ে মাছ ধরত জেলেরা। এখন আর সেই পালতোলা নৌকা আর জেলেদের মাছধরা দেখা যায় না। 
এখন নদী দেখে বোঝার উপায় নেই এটা নদী না ফসলের মাঠ। যতদূর চোখযায় ততদূর দেখাযায় সবুজ আর সবুজ। 

চট্রগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাযায়, মাতামুহুরী নদীটি এখনো ড্রেজিং করার জন্য আওতায় আসেনি ।

মো. ইউনুছ, শাহাজামাল, নাজমা আক্তার, অক্রয় মার্মা,ধুমাচিং মার্মাসহ অনেক  কৃষষ-কৃষানীর সাথে সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন হয় ২৫ থেকে ৩০ মণ করে। খরচ কম হওয়ায় অধিকাংশ কৃষকই লাভবান হয়েছেন। এসব বোরো আবাদে পানি সেচ লাগে না। খুব বেশি সারও ব্যবহার করতে হয় না। তাই লাভ বেশি হয়, এবং তাদের পরিবারেও স্বচ্ছলতাও এসেছে।

লামা কৃষি কর্মকর্তা সানজিদা বিনতে সালাম জানান,এসব নদ-নদীর আশপাশের গ্রামগুলোর অধিকাংশ কৃষকই ভূমিহীন। তাঁদের অনেকেই আগে মাছ ধরতেন। নদ-নদী মরে যাওয়ায় আগের মতো আর মাছ পান না। তাই পেশা বদলে ফেলেছেন তাঁরা। অধিকাংশই গত ১০/১২ বছর ধরে জেগে ওঠা চরে বোরো মৌসুমে ধান চাষ করছেন। নভেম্বর মাস থেকে নদীর পানি কমে এলে বালুচরগুলোয় বোরো চাষের উপযোগী করে তোলার কাজে নেমে পড়েন তাঁরা। কঠোর পরিশ্রম করে বালু দিয়ে আইল বেঁধে পানি আটকান তাঁরা। এরপর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে চলে রোপণের কাজ। সাধারণত, ব্রি- ২৮ এবং ব্রি- ৩২ জাতের ধানের আবাদ করা হয়। 

লামা মৎস কর্মকর্তা মোঃ মকসুদ হোসেন জানান, শুকনো মৌসুমে নদ-নদীর জেগে ওঠা চরে তামাক, ধান,বাদামসহ নানা প্রকার রবিশষ্যচাষাবাদ করায় পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা থেকে যায়। বিশেষ করে তামাক চাষে প্রচুর পরিমানে সার ও কীটনাশকের ব্যবহারে মাছসহ নানা প্রজাতির জলজ প্রাণীদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।