image

দোহাজারী হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টার যেনো ‘মরণ ফাঁদ‘

image

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত আবাসিক কোয়ার্টারগুলো সংস্কার না করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কোয়ার্টারগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছাদের আস্তরণ খসে প্রাণ হারানোর ভয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকেন তারা। কখন ঘটে দুর্ঘটনা, কে হারাবে জীবন? এই দুশ্চিন্তায় তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে চরম উৎকন্ঠায়। যে কোন মুহুর্তে ভবনগুলো ধসে পড়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে,দোহাজারী পৌরসভাসহ চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) উপজেলার আট ইউনিয়নের জনগণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য ১৯৬৫ সালে ১০ শয্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় দোহাজারী হাসপাতাল। চাহিদার উপর ভিত্তি করে পর্যায়ক্রমে ১৯৯০ সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য পৃথক ৭টি স্টাফ কোয়ার্টার রয়েছে। তাছাড়া একটি ডরমিটরিতে থাকেন তিন জন নার্স। দীর্ঘদিনের পুরানো এসব জরাজীর্ণ আবাসিক কোয়ার্টারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার পরিজনসহ বসবাস করে আসছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনগুলোর দরজা-জানালা ভাঙা। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। সেখান থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। দেয়ালের রং উঠে গিয়ে শ্যাওলা পড়ে জমাট বেঁধে আছে। এছাড়া ছাদের পাকা ঢালাই খসে পড়ে রড বেরিয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে ছাদের বড় বড় ফাটল দিয়ে পানি চুুঁইয়ে পড়ে প্রয়োজনীয় মালামাল নষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে একটি কোয়ার্টারের ছাদের ওপর পলিথিন বিছিয়ে ইট দিয়ে চাপা দিতেও দেখা গেছে। কয়েকটি কোয়ার্টারের দেয়ালের অধিকাংশ আস্তর খসে পড়ে গাছগাছালি ও লতাপাতা জন্মেছে। দেখলে মনে হয় পুরনো কোনো ভুতুড়ে এলাকা। এ ছাড়া কোয়ার্টারগুলোর দরজা জানালার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হওয়ায় সারাক্ষণ চুরি হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানান, গত মাসে গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ করে ছাদের আস্তরণ খসে খাটের ওপর পড়ে। এতে খাটের এক পাশ ভেঙে যায়। পড়ার আগেই শব্দ শুনে তিনি খাটের অপর পাশে চলে যাওয়ায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।

এব্যাপারে দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আবু তৈয়্যব বলেন, "স্টাফ কোয়ার্টারগুলো অত্যন্ত জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় সংস্কার করার মত অবস্থায় নেই। কয়েকটা কোয়ার্টার ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে কোয়ার্টারগুলো নতুন নির্মাণ করা ছাড়া সংস্কারযোগ্য নয়। সবগুলো কোয়ার্টার পরিত্যক্ত ঘোষণা করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। একতলা কোয়ার্টারগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বহুতল একটি ভবন নির্মাণ করলে অনেক যায়গা বেঁচে যাবে বলেও মত ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, ''হাসপাতালের দ্বিতল বিশিষ্ট মূল ভবন, ডক্টরস কোয়ার্টার ও স্টাফ কোয়ার্টার সংস্কারের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। আবেদনের প্রেক্ষিতে মূল ভবন সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে সংস্কারকাজ শুরু হবে। আশা করছি পরবর্তী ধাপে ডক্টরস কোয়ার্টার ও স্টাফ কোয়ার্টার সংস্কার হবে।

এব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী বলেন, দোহাজারী হাসপাতালের অবকাঠামো সংস্কারের বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যে মূল ভবন সংস্কার শুরু হবে। এটি শেষ হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অবকাঠামো সংস্কার হবে।

এব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোহসিন বলেন, দোহাজারী হাসপাতালের মূলভবন সংস্কারের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ঠিকাদার বাছাই প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কয়েকদিনের মধ্যে সংস্কারকাজ শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি। মূল ভবনের সংস্কারকাজ শুরু হলে ডক্টরস কোয়ার্টার ও স্টাফ কোয়ার্টারগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করবো। যেগুলো সংস্কারযোগ্য সেগুলো সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেগুলো সংস্কারযোগ্য নয় সেগুলোর স্থলে নতুন ভবন নির্মাণের সুপারিশ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্র প্রেরণ করবো।"