image

আনোয়ারায় ভেজাল ঘিয়ের রমরমা বাণিজ্য

image

পবিত্র রমজান ও ঈদকে ঘিরে বাড়তি লাভের আশায় চট্টগ্রামের আনোয়ারার বিভিন্ন হাট-বাজারে ভেজাল ঘিয়ে সয়লাব। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি লোভের আশায় বিভিন্নস্থানে গোপনে এসব ভেজাল ঘি তৈরী করে বিএসটিআই’র নকল সিল বসিয়ে অবাধে বাজারজাত করছে বলে জানা গেছে।

নামিদামী ব্রান্ডের লেভেলে মোড়ানো এসব ভেজাল ঘি নিয়ে সাধারণ ক্রেতারা বিপাকে পড়ছেন। এছাড়া গরমের দিনে নানা রোগ বালাইও ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলায়। এসব ভেজাল ঘিয়ের ব্যাপারে শীঘ্রই অভিযান চালাবেন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেষ জোবায়ের আহমেদ।

জানা যায়, রমজান ও ঈদে মুসলমানদের ঘিয়ের চাহিদা থাকে বেশি। তাই রমজান মাস আসলেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় বিভিন্নস্থানে গোপনে এসব ভেজাল ঘি তৈরী করে। অনেক সময় প্রশাসনের ভয়ে এক সপ্তাহ পরপর তারা স্থান পরিবর্তন করে। এসব ঘি তৈরীর পর বিএসটিআই’র নকল সিল বসিয়ে উন্নত ব্রান্ডের মোড়ক লাগিয়ে অবাধে বাজারজাত করে তারা।

রবিবার (১৮ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার জুঁইদন্ডি, চাতরী চৌমুহনী বাজার, বটতলী রুস্তমহাট, বন্দর কমিউনিটি সেন্টার, ভিংরোল ছত্তারহাট, মালঘর বাজার ও আনোয়ারা সদরের জয়কালী হাটসহ বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ দোকানে খুচরা ও পাইকারি দরে ভেজাল ঘি বিক্রি হচ্ছে। এসব অবৈধ কোম্পানির ঘি বাজারের বিভিন্ন দোকানে খুচরা মূল্যে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বিক্রির জন্য রাখা ঘিয়ের কৌটায় দেখা গেছে ‘১০০ ভাগ খাঁটি ঘি’ বাক্যটি লেখা। সঙ্গে ঘিয়ের নামসংবলিত কাগজে বিএসটিআইয়ের নকল সিল মুদ্রণ করে রাখা হয়েছে।

ঘি তৈরির সঙ্গে যুক্ত এক কর্মচারীর জানান, উপজেলার বৈরাগ, চাতরী, জুঁইদন্ডী, বটতলী, শোলকাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৫-৬টি ভেজাল ঘিয়ের কারখানা আছে। এর বাইরে শহরের বিভিন্ন কারখানা থেকে উৎপাদিত ঘি নগরের পাশাপাশি এ উপজেলার গ্রামীণ হাটবাজারেও সরবরাহ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেজাল ঘি তৈরি করেন এমন একজন কারিগর জানান, বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে ছোট্ট কারখানা বসিয়ে এসব ভেজাল ঘি বানানো হয়। সাধারণত প্রতিটি কৌটায় ৯০০ গ্রাম ঘি থাকে। এ পরিমাণ ঘি তৈরিতে ৬০০ গ্রাম পাম ওয়েল, ২০০ গ্রাম ডালডা ও ১০০ গ্রাম খাঁটি ঘি দেওয়া হয়। এতে রং ও ব্যবহার করা হয়। এসব কাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়েই কৌশলে তারা এসব ঘি তৈরী করে বলে জানায়।

থ্রি স্টার গাওয়া ঘি’র স্বত্বাধিকারী আতারুল করিম জানায়, রমজানের আগেই ঘি তৈরী করে বাজারজাত করে দেওয়া হয়েছে। বাজারে পাওয়া যাবে এসব ঘি। তবে তিনি তাদের কাছে বিএসটিআই’ এর বৈধ কাগজপত্র রয়েছে বলে দাবী করে।

এ বিষয়ে বিএসটিআই দপ্তরের আনোয়ারার মাঠকর্মী আবদুল মান্নান জানান, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অজ্ঞাতস্থান ব্যবহার করে এসব ঘি তৈরি করে বাজারজাতকরণ করছে। পূর্বে একাধিকবার এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়েছে।’

আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু জাহিদ মোহাম্মদ সাইফু উদ্দীন জানান, ‘খাদ্যদ্রব্যে মিশ্রণের খুব ভালো রঙ হলেও সেটি দুই মাসের বেশি কার্যকারিতা হারিয়ে বিষাক্ত হয়ে পড়ে। আর যেহেতু ভেজাল ঘি তৈরি হচ্ছে, তাই সেখানে ভালো রঙ মেশানোর প্রশ্নই আসে না। এ-কারণে এসব ঘি খেয়ে পেটের অসুখ থেকে শুরু করে যকৃতের নানা সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘ভেজাল ঘি তৈরি করার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে শিগগির খোঁজ নিয়ে এসব ভেজাল ঘি উৎপাদনকারী ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে।’