image

বাঁশখালীর পুইঁছড়িবাসীর দু:খ স্লুইসগেইট : নদীর জলে চোখের জলে একাকার জীবনধারা

image

অকেজো স্লুইসগেইট দিয়ে এবং অস্থায়ীবাঁধ ভেঙে প্রতিদিন জোয়ারের পানি ডুকছে লোকালয়ে। পানি প্রবেশের কারণে শংকিত বাঁশখালী উপজেলার সীমান্তবর্তী পুঁইছড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম পুঁইছড়ির লোকজন। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন পড়ে আছে পুইছড়ি ইউনিয়নের আরবশাহ ঘোনা পুটখালী জলকদর খালের উপর নির্মিত আরবশাহ বাজার সংযোগ স্লুইসগেইট (স্লুইসগেইট নং-০৪, পোল্ডার নং-৬৪/২ এ)।

১৯৮২ সালে নির্মিত আরবশাহ্ ঘোনা নাশি (স্লুইসগেইট) অকেজো হয়ে পড়ায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। স্লুইসগেইট সংযোগ দক্ষিণ পার্শ্বের বেড়ীবাঁধটিও ভেঙে যাওয়ায় প্রতিদিন দু'বার জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। এনিয়ে দক্ষিণ ও পশ্চিম পুইঁছড়ির প্রায় ১৮ হাজার বসতঘর শংকায় পার করছে জীবন। বর্ষার আগেই স্লুইসগেইট ও তৎসংলগ্ন বাঁধ নির্মাণ করা না হলে বন্যায় ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাবে দক্ষিণ পুইঁছড়ির ডাকাতিয়া ঘোনা, পন্ডিতকাটা ও সিকদার পাড়ার, আরবশাহ ঘোনার পূর্বাংশ, তেলিয়া পাড়া, আব্দুর পাড়া, মৌলার পাড়ার লোকজন। এতে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে নেমে আসবে স্থবিরতা। ক্ষেতের ফসলি জমি তলিয়ে যাবে পানিতে। চলতি বোরো মৌসুমে ধানি জমিতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় ধান কেটে বাড়ীতে উঠানোর সময় হিমশিম খেতে হয়েছে কৃষকদের। আরবশাহ্ ঘোনা স্লুইসগেইট দ্রুত সংস্কার করা না হলে বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যাবে পূঁইছড়ির পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চল এমনটাই তাদের আশংকা।

বেশ কয়েকবার অবহিত করার পরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফেলতির কারণে সংস্কার হচ্ছেনা বাঁশখালী উপজেলার সীমান্তবর্তী পুঁইছড়ি ইউনিয়নের আরবশাহ্ ঘোনা সংলগ্ন পুটখালী খালে নির্মিত স্লুইসগেইট এমন অভিযোগ এলাকার সচেতন মহলের।

স্থানীয়রা জানান, বাঁশখালী-পেকুয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী পুইঁছড়ি-টৈটং ইউনিয়ন সংযোগ ছড়া দিয়ে পুইছড়ির পূর্বাঞ্চল পাহাড়ি এলাকা থেকে বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ি ঢল নেমে আসে। পাহাড়ি পানি চলাচলের জন্য পুটখালী জলকদর খালে নির্মিত স্লুইসগেইট কয়েক বছর ধরে সংস্কার বিহীন পড়ে থাকায় স্বাভাবিকভাবে পানি চলাচল করতে সক্ষম না হওয়ায় বৃষ্টির মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের পানিতে এবং বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে উল্টো জোয়ারের পানি প্রবেশ করলে পুঁইছড়ির নির্মাঞ্চল পানির নিচে তলে যাবে। বর্ষার আগেই স্লুইসগেইট ও সংলগ্ন বেড়ীবাঁধ মেরামত করা না হলে পশ্চিম পুঁইছড়ির সাথে পার্শ্ববর্তী পেকুয়া উপজেলার আরবশাহ্ বাজারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। জোয়ারের পানিতে পুঁইছড়ির নির্মাঞ্চল তলিয়ে যাবে। এতে মাছের ঘোনা, চাষের ফসলি জমি সহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা রয়েছে।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী আরো জানান, স্লুইসগেইট অকেঁজো হওয়ার কারণে গত বর্ষামৌসুমে টানাবৃষ্টির ফলে পেকুয়া-বাঁশখালীর সীমান্তবর্তী পুঁইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ পুইঁছড়ীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডাকাতিয়া ঘোনা, পন্ডিতকাটা ও সিকদার পাড়ার প্রায় ২ হাজারের অধিক জনসংখ্যার ৫ শতাধিক বসতঘর পানিবন্ধি হয়ে পড়েছিল। এতে আমাদেরকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এখনও স্লুইসগেইট পুনঃনির্মাণ না করায় শংকায় জীবনযাপন করছি আমরা। কেউ স্লুইসগেইট  সংস্কারে এগিয়ে না আসায় জোয়ারের সময় পানি ঢুকে আর পাহাড়ী ঢলে পানি নিঃস্কাশনে বাঁধার ফলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়।

পুঁইছড়ি এলাকার রোটারিয়ান মুবিনুল হক মুবিন বলেন, 'গত বছর স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমি সরেজমিনে যাই। স্লুইসগেইট সংলগ্ন বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে দেখে আমি নিজের অর্থায়নে বাঁধ নির্মাণে সহায়তা করি। প্রাথমিকভাবে বড় কোন দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে শ্রমিক দিয়ে মাটিভরাটের ব্যবস্থা করি। চলতি এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে পূর্বের বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ডুকছে লোকালয়ে। এভাবে চলতে থাকলে বাঁধের বৃহত্তম অংশ ভেঙে গিয়ে বড় কোন দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, 'স্লুইসগেইট নির্মাণ ও বাঁধ সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার পাউবোকে অবহিত করলে তারা দ্রুত সংস্কার করবে বলে আশ্বস্থ করলেও আজ পর্যন্ত তাদের টনক নড়েনি।'

এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী মুহাম্মদ গালীব সাদলীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, 'পুটখালী জলকদর খালে নির্মিত  স্লুইসগেইট অকেঁজো হয়ে পড়া ও সংলগ্ন বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েছি। এটি মূলত দেখার বিষয় পাউবো'র। বরাদ্দ না থাকায় পরিষদের পক্ষে বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, আজকের উপজেলা মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে বিষয়টি আমি উত্থাপন করবো এবং এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করবো।'

চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা কে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করতে চাইলেও ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।