image

রাঙ্গুনিয়ায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুল : মিললো ভালবাসা মানবিকতার অনন্য পাঠশালার স্বীকৃতি

image

চট্টগ্রামে মে দিবস উপলক্ষে ট্রাফিক প্রশিক্ষণ দান ও সড়ক সচেতনতা সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুল ও এর  প্রতিষ্ঠাতা চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীমকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চালক ও শ্রমিকেরা।

শনিবার (১ মে) দুপুর ২ টায় শ্রমিক প্রতিনিধিরা রাঙ্গুনিয়া- রাউজান সার্কেল কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হয়ে এই শুভেচ্ছা জানান।

এসময় শ্রমিকদের পক্ষ হতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুলের কার্যক্রমকে ধন্যবাদ জানিয়ে সার্কেল এএসপির নিকট একটি  ধন্যবাদপত্রও হস্তান্তর করা হয়। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে, স্যানিটাইজার ছিটিয়ে ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সার্কেল এএসপি এসব ফুল এবং ধন্যবাদপত্র গ্রহণ করেন।

এসময় তিনি  চালক-শ্রমিকদেরকে নিত্যদিনের সহযাত্রী অভিহিত করে তাদের কল্যানে সবসময় কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি সরকারি আদেশের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে 'একটু কষ্ট' করে হলেও লকডাউনের সময় গণপরিবহন রাস্তায় বের না করা ও সকল ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান করার জন্য তাদের প্রতি অনুরোধ জানান। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে  কোন শুভেচ্ছা জানাতে হলে এভাবে ফুল না এনে অনলাইনে তা জানানোর আহ্বানও রাখেন তিনি। পরবর্তীতে এএসপির অনুরোধে উপস্থিত চালক- শ্রমিকেরা কিছুসময় লকডাউন নিশ্চিতে তৎপরতা এবং পথচারীদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, সার্কেল এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম'র উদ্যোগে গত বছরের আগস্টে প্রতিষ্ঠালাভের পর গত ৮ মাসে চট্টগ্রামের সহস্রাধিক চালক-শ্রমিককে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুল। বিশেষ করে ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারী চালকদেরকে এই স্কুলের মাধ্যমে কয়েক ঘন্টাব্যাপী ট্রাফিক আইনের পাঠ দেওয়া হয়, যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। এছাড়া  বিভিন্ন সময় চালানো হয় সড়ক সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমও। মূলত চালক শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সড়ক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সার্কেল এএসপি এবং তার প্রতিষ্ঠিত ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুল কর্তৃক অনন্য ভূমিকা পালনের জন্যই এই শুভেচ্ছা জ্ঞাপন বলে জানাচ্ছেন আয়োজকেরা।

নোয়াপাড়া সিএনজি অটোরিকশা চালক-শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন জানান, আমাদের লক্ষ্য ছিল অনেক বড় অনুষ্ঠান করে করে ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুল এবং এএসপি মহোদয়কে সংবর্ধনা দিব। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা সেটা না করে শুধু নেতৃস্থানীয় কয়েকজন শ্রমিকনেতা এসে ফুল ও শুভেচ্ছাবার্তাটা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের জন্য যে এএসপি স্যার কত কিছু করেছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। আগে স্লিপ বিক্রির নামে অসহায় চালকশ্রমিকদের কাছ থেকে লাখলাখ টাকা চাঁদা নেওয়া৷ হত, বহুযুগ এইভাবে চলার পর আজ শুধু উনার কারণে রাঙ্গুনিয়া রাউজানে চাঁদামুক্ত সড়ক প্রতিষ্ঠা হয়েছে। উনি একজন বিসিএস ক্যাডার হওয়া সত্ত্বেও দিন নাই রাত নাই আমাদের সাথে ঘুরে ঘুরে সবাইকে ট্রাফিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আমরা সবাই স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ।"

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, যোগদানের পর থেকেই উত্তর চট্টগ্রামের ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যে ধারাবাহিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন সহকারী পুলিশ সুপার (রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম। প্রথমেই তিনি যাত্রী ওঠানামা তথা স্টপেজ ব্যবস্থার সমস্যা সমাধান করার জন্য বিভিন্ন মোড় ও বাজারে লাল রশি টানিয়ে লেইন নির্ধারণ করে দেন।  বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল স্থানে যানবাহন চলাচল ও স্টপেজের প্রতিবন্ধক খানাখন্দ  তিনি স্থানীয় জনতাকে সাথে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে ঠিক করে নেন। রাস্তার চাদাবাজি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তিনি। গত শীতে রাত্রিকালীন চালকদের ঘুমঘুম চোখে গাড়ি চালানো বন্ধ ও দুর্ঘটনা রোধ করতে তিনি রিফ্রেশমেন্ট কর্নার নামে চালকদের হাতমুখ ধোয়া ও বিনামূল্যে চা-বিস্কুট খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন, যা তখন দেশব্যাপী প্রশংসিতও হয়। সর্বোপরি চালকশ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দান ও সড়ক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুল। গত ৮ মাস ব্যাপী এই স্কুলের ক্রমাগত তৎপরতায় এই সড়কের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে অনেকটাই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, "আসলে কোন শুভেচ্ছা কিংবা সংবর্ধনা পেতে আমি এই স্কুলের কার্যক্রম শুরু করিনি। তবুও এই মে দিবসে আমাদের কথা স্মরণ করার জন্য আমি চালক শ্রমিক ভাইদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।"

আপনার এই মডেলটি গ্রহণ করে অন্য কেউ দেশের অন্যত্র এ ধরনের উদ্যোগ নিলে তা সমর্থন করবেন কিনা, জানতে চাইলে সার্কেল এএসপি বলেন, "এখানে সমর্থন না করার কিছু নেই, আমি বরং খুশিই হব। যেমন, কিছুদিন আগে দেখলাম কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে প্রায় একই নামে প্রায় অনুরূপ একটি উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে, আমি তখন ফেসবুকে পোস্ট করে উদ্যোক্তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। আমি আশা করব শুধু কুমিল্লা নয়, দেশের অন্যান্য অংশেও এই উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক।"