image

কক্সবাজারে ঝুঁপড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ : মাদক-অস্ত্র ও নারী দিয়ে বিচারক পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টা

image

কক্সবাজারের খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়া রফিকের ঘোনা এলাকায় বিচারক পরিবার ও বনবিভাগের ভূমিতে দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখতে গভীর রাতে গোপন বৈঠকে করেছে দখলদাররা। বৈঠকে যে কোনো মূল্যে বিচারক পরিবারকে এলাকা ছাড়া করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমি দস্যুরা মিলে গতকাল রাতে নিজেরা নিজেদের ঘর পুড়িয়ে দেয় এবং জায়গার বৈধ মালিককে মামলায় জড়ানোর জন্য কল্পনা প্রসুত মিথ্যা কাহিনি রচনার অভিযোগ উঠেছে। কামাল বাহিনীর ৩ সদস্য গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকলেও দখলকৃত জমিতে গড়ে তোলা ঝুপড়িঘর কামাল বাহিনী লোকজন নিজের ঘর নিজেরা পুড়িয়ে দিয়ে ১০ পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার পায়তারা চালাচ্ছে। 

দখলদারদের পরিকল্পনা ও বৈঠকের বিষয়ে অবগত এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দখল করে নির্মাণ করা ঝুপড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে বিচারক পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করা হয় বৈঠকে।

এছাড়াও বিচারক কামাল উদ্দীন পরিবারের বাগান পাহারায় থাকা কযেকটি ঘরের মধ্যে যে কোনও ঘরে মাদক -অস্ত্র ঢুকিয়ে তাৎক্ষণিক আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী দিয়ে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি আরও জানান, ওই বৈঠকে সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দিনের পিতা রফিক আহমেদ, ছেলে সরওয়ার অথবা ভাতিজা আনইনজীবী বোরহান উদ্দীন এই তিনজনের মধ্যে যে কোনও একজনকে ভাড়াটিয়া মহিলাদের দিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে গণধোলাই দেয়ার পরিকল্পনা আঁটা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পাশাপাশি দখলদারদের উচ্ছেদ না করার দাবিতে ভূমিহীনদের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিচারক কামাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার বিষয়টা গুরুত্ব পায় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য আনইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানী বলেন, আমাদের পরিবারকে ফাঁসাতে মামলায় জড়াতে গোপন বৈঠকে জঘন্য পরিকল্পনার বিষয়গুলো অবগত হয়েছি। এসব বিষয়ে কামাল উদ্দিন, শেখ কামাল, আবু বক্কর

ছিদ্দিক, আবু ছৈয়দ প্রকাশ মুন্সি আবু ছৈয়দ এর বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় জিডি করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর মডেল থানার জিডি নং-১২০৭,তাং-২৫/৪/২০২১।

তিনি আরও জানান, জুহুর আলমের স্ত্রীর ইসমত আরা ( পিতার নাম মোহাম্মদ জালাল)। খুরুশকুল মনুপাড়া মসজিদের পাশে তার বাপের বাড়ি। তাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল কক্সবাজার পাহাড়তলী। সেখান থেকে সে তেতৈয়া জলিয়াবাপের পাড়ায় এসে গোলাম হোসেনর বাড়ির পাশে বন বিভাগের একখন্ড জমি গোলাম হোসেন থেকে কিনে নিয়ে একটি সুন্দর বাড়ি নির্মান করে। এর পর সে জামাত নেতা ও ভূমি দস্যু আবু বক্কর ও কামালের সাথে যোগ দিয়ে ফৌজের ঘোনায় বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের জায়গায় রাতারাতি ঘর নির্মাণ করে।

তার অবৈধ ঘর বাঁচানোর জন্য তিনি ও তার সাথে থাকা ভূমি দস্যুরা মিলে গতকাল রাতে নিজেরা নিজেদের ঘর পুড়িয়ে দেয় এবং জায়গার বৈধ মালিককে মামলায় জড়ানোর জন্য কল্পনা প্রসুত মিথ্যা কাহিনি রচনা করে। 

ওই নারীর বড় মামা নুরুল ইসলামের মতে, সে একজন উশৃংখল ও মাদকাসক্ত নারী। জনশ্রুতি অাছে যে অনেকের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক অাছে। যার কারণে সে স্বামীর অবাধ্য হয়ে বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের জায়গায় দখল করার জন্য যায়। কামাল ও শেখ কামালের বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেফতারের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সে এ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ঘটনা রচনা করছে। এটি তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।

কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আমিন-আল পারভেজ বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। যেহেতু উচ্চ আদালত আশ্রয়ন প্রকল্পে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। জোরপূর্বক অবৈধভাবে আশ্রয়ন প্রকল্পের নাম করে বসতি নির্মাণ করে বসবাসের সুযোগ নেই। যে কোনও সময় দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।

প্রসংগত, সম্প্রতি কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়া রফিকের ঘোনা এলাকায় চট্টগ্রাম আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দীনের পরিবারের দুই একরের বেশি কৃষিজমি ও সামাজিক বানায়ন দখল করে ‘মুজিবনগর’ নাম দিয়ে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আশ্রয়ন’ ব্যানার টাঙিয়ে শতাধিক ঝুপড়ি নির্মাণ করে দখলদাররা।

ব্যানারে দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের ছবি। লেখা হয়েছে-‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার। এছাড়াও ব্যানারে দেওয়া হয়েছে অভিযুক্ত কামাল উদ্দীন কামালের ছবিও।

জোরপূর্বক যে জমি জবরদখল করা হয়েছে সেটির মালিক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ব্রিটিশ ভারতের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ফৌজ আর্মির সদস্য মৃত আবুল হোসেন। তিনি খুরুশকুলের তেতৈয়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দিন, হাইকোর্টের আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানীসহ পাঁচ ব্যক্তির পরিবার এসব কৃষিজমির মালিক। জমির মালিক খুরুস্কুল দক্ষিণ পাড়া তেতৈয়া এলাকার মৃত হাজী আবুল হোছাইনের ছেলে রফিক আহম্মদ বাদী হয়ে ভুমি জবরদখলকারী 

কামাল উদ্দিন প্রকাশ কামাল, শেখ কামাল, আবু বক্কর সিদ্দিক, আবু সৈয়দ প্রকাশ মুন্সি আবু সৈয়দ, মো.ইলিয়াস, মো.কাসেম, মনিউল আলম, শাহিন আলম, মিজানুর রহমান, সেলিম উল্লাহ, হামিদ হোসেন সহ ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। কক্সবাজার সদর মডেল থানার মামলা নং-৩৬, জিআর-২৫৫।তাং-২০/৪/২০২১। 

গত ২৮ এপ্রিল ডিবি ডিসি ডিএমপি ঢাকার সহায়তায় একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয় কালাম উদ্দিন প্রকাশ কামাল,শেখ কামাল ও আবু বক্কর ছিদ্দিকে। তারা বর্তমানে কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন। দখলকৃত ঝুপড়িঘর কামাল বাহিনী লোকজন নিজের ঘর নিজেরা পুড়িয়ে দিয়ে ১০ পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার পায়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।