image

ট্রাক কাভার্ডভ্যানের দখলে সীতাকুণ্ড আউটার রিং রোড

image

আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন চট্টগ্রামের দক্ষিন সীতাকুণ্ডে  আউটার রিং রোড ট্রাক স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) শহরের যানজট নিরসনের জন্য সড়কটি নির্মাণ করলেও এটিতে নতুন করে যানজট তৈরির পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দূর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি দলের মদদপুষ্ট ঢাকাকেন্দ্রীক কিছু শিল্পগ্রুপ সড়কের পাশের জমিতে অবৈধভাবে গড়ে তুলেছে ট্রাক স্ট্যান্ড। অবৈধ এসব স্ট্যান্ডের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে মূল সড়কটিকেই তারা স্ট্যান্ড বানিয়ে রেখেছে। সিডিএ বলছে, পতেঙ্গাসহ আশেপাশের গড়ে ওঠা ট্রাকস্ট্যান্ডগুলো অবৈধ। সড়কটিতে ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখাও অবৈধ। পুলিশ বলছে, রাস্তার উপর রাখা গাড়ি জব্দ করা হবে।

সূত্রে জানা গেছে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-এর সহযোগিতায় ১ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড নির্মাণ শুরু করে সিডিএ। পরবর্তীতে সড়কটিতে নানান সুবিধা যুক্ত করতে ব্যয় বাড়িয়ে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। গত জানুয়ারিতে তৃতীয় দফায় আবারো ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৬৭৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থ ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৩২ কোটি ৪০ লাখ ৪২ হাজার আর জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ৬৪৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮ হাজার টাকা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকে হালিশহরের দিকে ৫ কিলোমিটার, দক্ষিণ কাট্টলী থেকে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম রিং রোড সিইপিজেডের সঙ্গে যুক্ত হবে। আউটার রিং রোড প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে চট্টগ্রাম বন্দর ও ইপিজেডমুখী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং লরির মতো ভারী যানবাহন নগরের অভ্যন্তরীণ রুট ব্যবহার করবে না।নগর থেকে এই রোড ব্যবহার করে সীতাকুন্ড হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা সহজেই যাতায়াত করতে পারবে, পাশাপাশি আউটার রিং রোডটি নির্মাণাধীন কর্ণফুলী টানেলের সাথে যুক্ত হলে মহানগরীসহ চট্টগ্রামের প্রধান সড়কগুলো যানজটমুক্ত হবে। ৯০ ফুট চওড়া ও সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৩০ ফুট উঁচু সড়কটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে পতেঙ্গা, ইপিজেডসহ বেসরকারি আইসিডির পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যানগুলো রিং রোড দিয়েই সীতাকুণ্ড হয়ে  রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়া আসা করছে।

এদিকে সড়কটি পুরোদমে চালুর আগেই প্রভাবশালীদের কালো দৃষ্টি পড়েছে সড়কটিতে। ইতোমধ্যে সড়কটির আশেপাশে কয়েকটি অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড তৈরি করা হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা রাখার জন্য প্রত্যেক ট্রাক থেকে তিনশ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত ফি নেওয়া হয় ট্রাক স্ট্যান্ডগুলোতে। সিডিএ থেকে কোনো প্রকার অনুমোদন ব্যতিরেকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে স্ট্যান্ডগুলোর সাথে সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রিং রোডের সীতাকুন্ড  অংশে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রাস্তার উপর সারি সারি করে ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কয়েক স্থানে সড়কের উপর দুই লাইন করে ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এতে ফৌজদারহাট এলাকা থেকে আসা গাড়িগুলো দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আউটার রিং রোডের সাথে গড়ে উঠা ট্রাক স্ট্যান্ডগুলো অবৈধ। তাছাড়া সড়কে ট্রাক দাঁড় করিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করাও অবৈধ। ইতোমধ্যে ট্রাক স্ট্যান্ড ও গাড়িগুলো উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা ট্রাক রাখছে তাদেরকেও বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে সিএমপির উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) মো. তারেক আহমেদ বলেন, ‘লকডাউনের সময়ে গাড়ি চলাচল তেমন না করায় ট্রাফিকের অভিযান কম ছিল। এখন সড়কে গাড়ি রাখা হলে অভিযান চালানো হবে। রাস্তার উপর যাদের গাড়ি পাওয়া যাবে তাদের মামলা দেওয়া হবে। তবে রাস্তার বাইরে হওয়ায় স্ট্যান্ডের বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগের কিছু করার থাকে না।’