image

কক্সবাজারের বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গারা পাচ্ছে ‘গুচ্ছ ঘর’ 

image

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী শরণার্থী শিবিরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি হচ্ছে মজবুত ‘গুচ্ছ ঘর।’ আগে ত্রিপলের ছাউনির একেকটি শেডে একসঙ্গে ২০-৩০টি পরিবারকে থাকতো হতো। সেই গাদাগাদি অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। ‘গুচ্ছ ঘরে’ ভালো পরিবেশে নতুন মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছেন উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দারা। একটি গুচ্ছ ঘরে পৃথক দু’টি কক্ষে থাকবে দু’টি পরিবার।

গত ২২ মার্চ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী-৯, বালুখালী-৮ ইস্ট ও বালুখালী-৮ ওয়েস্ট শিবিরের ১০ হাজার ১৬৫টি ঘর পুড়ে যায়। আগুনে নিহত হন অন্তত ১১ জন রোহিঙ্গা। ঘটনার পর অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামছু-দ্দৌজা বলেন, তদন্ত কমিটির দেয়া ১৩ দফা সুপারিশের ভিত্তিতে ধ্বংসস্তূপের ওপর গুচ্ছাকারে শরণার্থীদের ঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছে। কিছু ঘর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে হস্তান্তর করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আসন্ন বর্ষার আগে নতুন ঘরে ঠাঁই হবে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার রোহিঙ্গার।

সুত্র মতে, ধ্বংসস্তূপের ওপর ৫০ বাই ৪০ ফুটের নতুন ঘরগুলো তৈরি হচ্ছে বাঁশের বেড়া, কাঠ ও লোহার খুঁটি দিয়ে। আগে ঝুপড়িতে ছাউনি ছিল ত্রিপলের, বেড়াও ত্রিপলের। নতুন ঘরে ছাউনি হিসেবে বাঁশের বেড়ার ভেতরে দেয়া হচ্ছে মোটা ত্রিপল। যেন ঝড়ো হাওয়ায় উপড়ে না যায়। এক ঘর থেকে আরেক ঘরের দূরত্ব ১০ থেকে ১২ ফুট। তাই আগুন কিংবা পাহাড়ধ্বসের ঝুঁকিও কমবে।

তদন্ত কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছিল, প্রতিটি শেল্টারে ঘরগুলো গুচ্ছাকারে নির্মাণ এবং নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করা, এক শিবির থেকে অন্য শিবিরের নিরাপদ দূরত্ব রাখা, ঘর নির্মাণে অগ্নিনিরোধক উপকরণের ব্যবহার, রান্নার একক ব্যবস্থা না রেখে চার থেকে আটটি পরিবারের জন্য একটি কমিউনিটি কিচেন চালু, অগ্নিকাণ্ডের সময় জরুরি প্রস্থানের জন্য গমনপথ স্থাপন ইত্যাদি।
সামনের দুর্যোগ ও বর্ষার মৌসুম মাথায় রেখে এসব আশ্রয়ণ পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি যৌথভাবে ৮০০ পরিবারের জন্য তাঁবু স্থাপনসহ ৭০০টি অস্থায়ী আশ্রয় নির্মাণ করছে। বর্তমানে রেড ক্রিসেন্টের পপুলেশন মুভমেন্ট অপারেশনের আওতায় কাতার রেড ক্রিসেন্টের অর্থায়নে ৭৫টি, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসের অর্থায়নে ৯২৫টিসহ মোট ১ হাজার পরিবারের জন্য অপেক্ষাকৃত অধিক শক্তিশালী আশ্রয়ণ (গুচ্ছ ঘর) নির্মাণ করা হচ্ছে।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কক্সবাজার ইউনিটের প্রধান (অপারেশন) এম এ হালিম বলেন, সামনের দুর্যোগ ও বর্ষার মৌসুম মাথায় রেখে এসব আশ্রয়ণ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্যোগ পরিস্থিতিতেও ক্যাম্প জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা কিছুটা হলেও নিশ্চিত হবে। ৩০ জুন নাগাদ এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।

সুত্র মতে, ইতোমধ্যে কিছু রোহিঙ্গা নতুন ঘরে উঠেছেন। তাদেরই একজন বালুখালী-৯ শিবিরের সি-৩ ব্লকের বাসিন্দা ছেনুয়ারা বেগম (২৮)। তিনি বলেন, নতুন ঘরে আগুন ধরলে লোকজনের দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার পথ, নেভানোর ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে ছেলেমেয়েরাও খুশি।

ঘর পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা বালুখালী-৯ শিবিরের সি-৫ ব্লকের বাসিন্দা আবুল কালাম (৫৫) বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে পরিবারের আট সদস্য নিয়ে ত্রিপলের ঝুপড়িতে আছি। রেশন কার্ডটিও আগুনে পুড়ে গেছে, তাই বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) ত্রাণও তোলা যাচ্ছে না।