image

একান্ত সাক্ষাৎকারে আমেরিকা জয়ী শাহানা : নিরাপদ ডিস্ট্রিক্ট নিশ্চিতে কাজ করবো

image

আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে ডিস্ট্রিক্ট থার্টিনাইনে বাংলাদেশীমূলের তরুণী শাহানা হানিফ কাউন্সিল মেম্বার হিসেবে জিততে চলেছেন, এটি এখন প্রায় নিশ্চিত। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মেয়ে শাহানা হানিফ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর কথা বলেছেন আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি সিনিয়র সাংবাদিক সোহেল মাহমুদ’র সাথে। তার অভিব্যক্তি এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ নানাবিধ আলোচনার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্যঃ-

"আমি উৎফুল্ল। গর্বিত। বাংলাদেশী বাবা মায়ের সন্তান হিসেবে। একজন মুসলিম নারী হিসেবে। আপনাদের সবার স্বজন হিসেবে। ভোটার, শুভানুধ্যায়ী- সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।" বলছিলেন শাহানা হানিফ।

নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে ডিস্ট্রিক্ট থার্টিনাইনে বাংলাদেশীমূলের এ তরুণী কাউন্সিলমেম্বার হিসেবে যে জিততে চলেছেন, এটি এখন প্রায় নিশ্চিত। র‍্যাঙ্কচয়েস ভোটের জটিল হিসেবনিকেশের পরও মনে করা হচ্ছে, শাহানাই বিজয়ী হবে দলীয় প্রাইমারির এই নির্বাচনে।

বুধবার শাহানার সাথে কথা হলো কেনসিংটনের রাঁধুনী রেস্টুরেন্টে। জানালেন, তিনি কৃতজ্ঞ সবার প্রতি। ভোটাররা তার প্রতি যে আস্থা রেখেছেন, সেটি যেন অব্যাহত রাখা যায়, সেজন্য কাজ করবেন তিনি।

৩৩ শতাংশেরও বেশি ভোট পাওয়া শাহানার সাথে তার কাছের প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটহারের ব্যবধান অন্তত ১০ শতাংশ। এরপরও, অন্তত ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়ার বাধ্যবাধকতা কিভাবে পূরণ করবেন তিনি?

শাহানা জানালেন, "র‍্যাঙ্কচয়েস পদ্ধতি বেশ জটিল মনে হলেও এটি গণতন্ত্রের জন্য উপকারী। এ পদ্ধতিতে কোন প্রার্থী সরাসরি ভোটে যদি অন্তত ৫০ শতাংশ ভোট না পান, তাহলে তালিকার শেষ প্রার্থীর ব্যালটে তিনি দ্বিতীয় হিসেবে যা ভোট পেয়েছেন, সেগুলো যোগ হবে তার মূল ভোটে। এভাবে, জটিল হিসেবনিকেশের মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হবে। নিজের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে আমার ভোটের যে ব্যবধান, আমি শতভাগ নিশ্চিত, জয় আমারই হবে।"

দলীয় প্রাইমারিতে জিতে যাওয়া মানে আপনি নভেম্বরের মূল নির্বাচনেও জিতে যাচ্ছেন, তাই না? "হা।" বললেন শাহানা।

ভয়ঙ্কর ব্যাধি লুপাসের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা শাহানার বাবা মা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থেকে। বাবা মোহাম্মদ হানিফ যুক্তরাষ্ট্রে চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেছেন দীর্ঘদিন। একটা রাজনীতি সচেতন পরিবারে তিন কন্যা সন্তানের মধ্যে সবার বড় শাহানা নিউ ইয়র্কে প্রগ্রেসিভ ঘরানার রাজনীতির সাথে জড়িত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। কিশোর বয়স থেকে সাধারণ মানুষের কল্যাণে, অভিবাসীদের জন্য আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ তাদের মৌলিক অধিকারের পক্ষে আন্দোলন করে আসছেন শাহানা। পড়াশোনা শেষ করে যোগ দিয়েছেন সিটি কাউন্সিলে কর্মকর্তা পদে। সংযুক্ত ছিলেন নিজের এলাকা ডিস্ট্রিক্ট থার্টিনাইনের কাউন্সিল মেম্বার ব্র‍্যাড লেন্ডারের অফিসে, ডাইরেক্টর অব অর্গানাইজিং এন্ড কমিউনিটি এনগেজমেন্ট পদে। এই অফিসে তখন তিনিই ছিলেন একমাত্র বাংলাদেশী। 

শাহানার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, দায়িত্বে গেলে তার অগ্রাধিকার কি? "একটা নিরাপদ ডিস্ট্রিক্ট। আমি চাই, আমার এলাকায় কোন স্কুলে সমস্যা থাকবে না। মানুষের আবাসন নিয়ে সংকট থাকবে না। রাতারাতি সব হয়তো পাল্টাবে না। কিন্তু, শুরু করতে চাই। এই সিটিতে অভিবাসীদের সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবার জন্য সময় এবং নেতৃত্ব দুটোই দরকার। আমাদের নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি আর সংহতির সংযোগটা বাড়াতে চাই আমি।"

শাহানা আরো যোগ করলেন, বাংলাদেশীরা নিউ ইয়র্কে ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছে। আমি সেই ইতিহাসের অংশ হিসেবে এমন কিছু করতে চাই, যেন সাধারণ মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা সুবিধা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে।"