একটা সময় পর্যন্ত ধারণা ছিল, ব্রেইন টিউমার মানেই মৃত্যু। ব্রেইন টিউমারের কোন চিকিৎসা নেই কিংবা চিকিৎসা করে কোন লাভ নেই। অনেক রোগী কিংবা রোগীর লোকজন এখনো ব্রেইন টিউমার রোগ ধরা পড়লে তার যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ না করে অপচিকিৎসা করান। এই অপচিকিৎসা যে শুধু অশিক্ষিত লোকজন করেন তা কিন্তু না, অনেক উচ্চ শিক্ষিত লোকজনও এই কাজ করে থাকেন।

ব্রেইন টিউমার হওয়া মানেই পৃথিবী শেষ না। ব্রেইন টিউমার দুই ধরনের হয়, ক্যান্সার ও নন-ক্যান্সার। সব টিউমারই মারাত্মক নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ব্রেইন টিউমার অপারেশনের পরে একজন ব্যক্তি একটি সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে। দ্রুত রোগ সনাক্তকরণ, রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপির সাহায্যে নিউরোসার্জন নিরাপদে চিকিৎসার মাধ্যমে ব্রেইনের ভালো জায়গাগুলোকে সুরক্ষিত করার কাজ করেন।

মনে রাখতে হবে সময়ই জীবন, প্রতি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। যত সময় যাবে টিউমার তত বড় হবে এবং ব্রেইনের যে কোষগুলো ভালো ছিল সেগুলোকেও ইনভল্ভ করবে অথবা চাপ দিয়ে তার কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দিবে।

অনেক সময় ব্রেইন টিউমার সাইজে কত বড় তার চেয়ে ব্রেইনের কোন রিজিওনকে ইনভল্ভ করেছে এবং টিউমারের ধরন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্রেইন স্টেমের এক সেন্টিমিটারের একটা টিউমার ব্রেইনের বাইরের দিকের ৬-৭ সেন্টিমিটারের টিউমারের চেয়ে বেশি বিপদজনক।

কিন্তু, গত দুই দশক ধরে ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসায় অভিভূত রকমের সাফাল্য লক্ষ্য করা গেছে। আগে সাধারণত সার্জারীর টার্গেট থাকতো সর্বোচ্চ কতটুকু টিউমার রিসেকশন করা যায় এবং কতদিন বাঁচিয়ে রাখা যায় ।কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে অস্ত্রোপচারের পরে রোগীদের জীবনমান উন্নতি করা বা স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।

ব্রেইন টিউমার চিকিৎসায় নিউরোসার্জন, নার্স, মেডিকেল অনকোলজি টিম এবং রেডিয়েশন অ্যানকোলজিস্টদের সমন্বয়েএকটি দল হিসাবে কাজ করে এবং তারা নিয়মিত সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং সুবিধাগুলি মূল্যায়ন এবং আলোচনা করে এবং সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতির সিদ্ধান্ত নেয় ।

ব্রেইন টিউমার সার্জারীর ক্ষেত্রে minimally invasive neurosurgical options গুলোর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এটি ব্রেইন টিউমার রোগীদের চিকিৎসার কার্যকারিতার সাথে আপোষ না করেই জীবনমানের উন্নতি করছে।

নিউরোনেভিগেশন : একটি জিপিআরএস ধরণের কম্পিউটার অ্যাসিস্টড টেকনোলজি যা নিউরোসার্জনকে টিউমারটির সঠিক অবস্থান নির্ণয়ে সহায়তা করে।

অ্যাডভান্সড নিউরো : মাইক্রোস্কোপগুলির ব্যবহারের কারণে সার্জনরা ব্রেইনের গভীরে অবস্থিত টিউমারগুলোর অপারেশন সহজভাবে করতে পারছেন।

স্টেরিওট্যাকটিক রেডিও-সার্জারি (এসআরএস) : ব্রেইনের ছোট টিউমারগুলির চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত একটি নন-সার্জিকাল রেডিয়েশন থেরাপি।

এন্ডোস্কোপিক সার্জারি : একটি minimally invasive surgery যা মাথার খুলি কেটে অপারেশন এড়াতে পারে। এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে পিটুইটারি টিউমারগুলি নাক দিয়ে সার্জারি করে ফেলা যায়।

লেখক : ডাঃ মু ইসমাঈল হোসেন, নিউরোসার্জন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।