১৬৮ বর্গকিলোমিটারের চট্টগ্রাম শহরে বাস করেন ১ কোটিরও বেশি লোক। যাদের অনেকেরই নেই কোনো ঠিকানা। এসব ভবঘুরে মানুষের রাতযাপনের একমাত্র ঠিকানা রাস্তার পাশের ফুটপাত, ডিভাইডার, অন্যের বাড়ি কিংবা দোকানের কার্নিশ। রাতে সড়কের দু’পাশে দেখা মেলে এরকম অসংখ্য অসহায় মানুষের। সড়কে কিংবা অন্যের আঙিনায় থাকেন বলে এসব ভবঘুরেদের ঘুম ভাঙে খুব ভোরে।
ভিক্ষা কিংবা ছোট কোনো কাজ করে দিন পার করে দেওয়া এসব মানুষের ক্ষুধা নিবারণের একমাত্র ভরসা রাস্তার পাশেরই কোনো ছালাদিয়া হোটেল। যেখানে ১০ টাকার মধ্যে মিলে সকালের নাস্তা এবং ৩০ টাকার মধ্যে দুপুর ও রাতে পেটপুরে খেতে পারেন একজন। এভাবেই কাটে এসব মানুষের দিন। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সরকার লকডাউন ঘোষণা করলে বন্ধ হয়ে যায় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রাস্তার পাশের ভ্যানে থাকা এসব ভ্রাম্যমান হোটেল। দিনের অন্য সময় কিংবা রাতে যে কোনোভাবে অল্পস্বল্প খাবার যোগাড় করতে পারলেও সকালে তাদের অসহায়ভাবে অপেক্ষা করতে হয় কখন কোনো দোকান খুলবে কিংবা কারও দরজায় ভিক্ষার হাত পাততে পারবে।
প্রতিদিন সূর্যের আলো ফুটতেই নগরের মোড়ে মোড়ে দেখা মেলে এসব অসহায় মানুষের। কেউ কেউ তখনো হয়তো গভীর নিদ্রায় মগ্ন। জানে না, ঘুম ভাঙলেই সকালের নাস্তাটা তাদের জুটবে কিনা।
এমন দৃশ্য দেখে এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয় লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং ইম্পেরিয়াল সিটি। ক্লাবের সদস্যদের আর্থিক সহায়তায় শুরু হয় এসব অসহায় মানুষের মুখে সকালের নাস্তা তুলে দেয়ার প্রকল্প। ‘ব্রেকফাস্ট ফর স্ট্রিট হাঙ্গার’ শিরোনামে এ প্রকল্পের অধীনে লকডাউন চলা পর্যন্ত প্রতিদিন ভোরে নগরের বিভিন্নস্থানে সড়কের পাশে রাতযাপনকারীদের বিতরণ করা হচ্ছে সকালের নাস্তার প্যাকেট। একটা সিদ্ধ ডিম, দু পিস পাউরুটি, একটা বিস্কিটের প্যাকেট আর একটি কলা থাকছে প্রতিদিনের এ প্যাকেটে। সবার সহযোগিতা নিয়ে চট্টগ্রামের আনাচে কানাচে এ প্রকল্প ছড়িয়ে দেয়ার দৃপ্ত অঙ্গীকার নিয়ে ছুটে চলছেন লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং ইম্পেরিয়াল সিটির প্রেসিডেন্ট লায়ন কাশেম শাহ। লায়ন্স জেলা গভর্নর লায়ন আল সাদাত দোভাষের কল ‘সার্ভ ফর ম্যানকাইন্ড’ বাস্তবায়নে এ উদ্যোগ ছড়িয়ে দেয়া হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৩ জুলাই মঙ্গলবার সকাল ৬টায় গোলপাহাড় মোড়, মেহেদিবাগ, বোটরি গলি ও কাজির দেউড়ি মোড়ে এবং ১৪ জুলাই প্রবর্তক, পাঁচলাইশ ও মুরাদপুর মোড়ে এবং ১৫ জুলাই চকবাজার, প্যারেড কর্নার, গণি বেকারি, জামাল খান, আসকার দীঘি ও কাজির দেউড়ি মোড়ে অসহায়দের মাঝে সকালের নাস্তার প্যাকেট বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লিও ক্লাব অব চিটাগাং ইম্পেরিয়াল সিটির ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট লিও সিরাজুল ইসলাম রিপন, সেকেন্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট লিও সৌমেন বড়ুয়া, লিও সাজিদ বিন জাহিদ, লিও মিনহাজ মাহমুদ, লিও রুম্পা বিশ্বাস, লিও আল ফয়সাল, লিও তানভীর রশিদ, লিও কামরুল ইসলাম মাহিন ও লিও বিভো চৌধুরী সানি।
Developed By Muktodhara Technology Limited