image

আজ, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

দোহাজারীতে টমেটোর বাম্পার ফলনেও বিপাকে চাষীরা : দামও কম, হিমাগারও নেই

মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ প্রতিনিধি    |    ২১:২৫, ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০২১

image

চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। টমেটোর ফলনে চাষীদের মুখে খুশির ঝিলিক থাকলেও দাম কম থাকায় তারা কিছুটা হতাশ। ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে বাজারজাত করার সময় চাষিদের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। টমেটো বাজারজাতকরণে সাহায্যের পাশাপাশি সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে হিমাগার নির্মাণের দাবি জানাচ্ছেন চাষীরা।

চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা শঙ্খ নদীর তীরবর্তী শঙ্খ চর দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবজি ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। শঙ্খ নদীর দুই তীরের বিস্তীর্ণ চরে সারা বছর জুড়েই বিভিন্ন শাক-সবজির আবাদ হয়। দোহাজারী পৌরসভার দিয়াকুল, লালুটিয়া, রায়জোয়ারা, কিল্লাপাড়া, বেগম বাজার, চাগাচর এলাকায় শঙ্খ নদী তীরবর্তী চরে 'সেঞ্চুরী', 'মেঘ', 'রাজা-১', 'হিরু প্লাস', 'রংধনু', ও 'ওয়ান্ডারফুল' জাতের টমেটোর চাষ করেছেন কৃষকরা। এছাড়া ঈদ পুকুরিয়া, জামিজুরী, বড়ুয়া পাড়া এলাকার চরেও টমেটোর চাষ করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন এলাকায় আবাদি জমি ও পাহাড়ের ঢালুতেও টমেটোর চাষ হয়েছে এবার। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কার্তিক-অগ্রহায়ন মাসে টমেটো আবাদের পর ক্ষেত থেকে তা তোলা শুরু হয় মাঘ মাসের শেষের দিকে।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে দোহাজারী রেলওয়ে মাঠ সংলগ্ন বাজারে সরেজমিন পরিদর্শনে কথা হয় শঙ্খ চরের টমেটো চাষী কালিয়াইশ এলাকার নাসিরের সাথে। তিনি জানান, "২০ শতক জমিতে 'সেঞ্চুরি' জাতের টমেটো চাষ করেছি। সার, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিকদের মজুরিসহ প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দুই দিন পর পর ক্ষেত থেকে তিন মন টমেটো তুলি। শুরুর দিকে ২০-২৫ টাকা বিক্রি করলেও এখন ৮-১০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেক সময় পাকা টমেটো পাখির ঝাঁক নষ্ট করে ফেলে। এছাড়া লেদা পোকা, গুণগুণি পোকা ও চৈয়া পোকার আক্রমণেও টমেটো নষ্ট হয়।"

আরেক চাষী পূর্ব দোহাজারী এলাকার শামসুল ইসলাম জানান, "৪০ শতক জমিতে 'হিরু প্লাস' জাতের টমেটো চাষ করেছি। ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। দুই দিন পর পর ১০-১২ মন টমেটো তুলি। ইতিমধ্যে ১লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছি।"

টমেটো চাষী হেলাল, জাফর, মাহদু, আহমদ জানান, "আমাদের নিজের জমি নেই, মানুষের জমি বর্গা নিয়ে টমেটো চাষ করেছি, অনেক ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে এখন আশানুরূপ দাম পাচ্ছিনা।" অনেক চাষী স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে এবং বাকিতে স্থানীয় দোকান থেকে সার-কীটনাশক ও কৃষি উপকরণ নিয়ে টমেটো চাষ করেছেন বলে জানান তারা।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাঁচা বাজার দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন বাজারে প্রতি মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার টমেটো বেচাকেনা হয়। এসব টমেটো চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন পাইকারি ক্রেতারা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে বড়, মাঝারি ও ছোট আকারের প্রতি কেজি টমেটো ৮ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন মাঠে আল-আমিন নামে একজন পাইকারের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হওয়ায় আড়ৎদারদের কাছে দাম কিছুটা কম পাচ্ছি। তাই আমরাও কম দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছি। আগে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম ছিলো বিধায় দামও বেশি ছিলো।

দোহাজারীতে টমেটো প্রক্রিয়াজাতকরণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় পাইকারদের বেঁধে দেয়া দামে টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হন চাষীরা। সরকারিভাবে টমেটো সংরক্ষণ এবং বিপণনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকলে শঙ্খ চরে উৎপাদিত টমেটো সারা দেশের ক্রেতাদের কাছে পুরো বছর জুড়েই সরবরাহ করা যেত বলে মত প্রকাশ করছেন সচেতন মহল।

শঙ্খ চরের চাষী পূর্ব দোহাজারী এলাকার আহমদ আলী বলেন, "মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকায়। টমেটো ছাড়াও অন্যান্য সবজি বিক্রিতেও একই দশা হয়। অনেক সময় মজুরি খরচ পোষাতে না পেরে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যায়। বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিতে হয় নদীতে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে অন্তত পুঁজি রক্ষা করা যাবে"।

ষ্টেশন রোডের সার-বীজ ও কীটনাশক বিক্রেতা শাহ্ আলম রুবেল বলেন, "মৌসুম শুরুতে যে কোন সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। কিন্তু ভরমৌসুমে উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যায়। তখন সবজির দাম অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত দর না পেয়ে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই পচে যায়। এতে নিরুৎসাহিত হয় কৃষক। অথচ কৃষকের শ্রমে-ঘামে এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি"।

এব্যাপারে দোহাজারী ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত চন্দনাইশ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি দাশ জানান, দোহাজারী ব্লকে চলতি মৌসুমে ৩০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনূকূল থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। শঙ্খ চরে উৎপাদিত পচনশীল সবজি সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে হিমাগার নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

সবজি সংরক্ষণের জন্য দোহাজারীতে হিমাগার নির্মাণের বিষয়ে আশার বাণী শোনাচ্ছেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের জেলা বাজার কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়া বলেন, ''চট্টগ্রামের সবজি ভান্ডারখ্যাত দোহাজারী এবং  সিতাকুন্ডে সবজি ও ফলমূল সংরক্ষণ উপযোগী দুটি হিমাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে অধিদপ্তর। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে''।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

১৭:৪৪, অক্টোবর ১৬, ২০২১

চট্টগ্রামে বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে ক্যাব’র আলোচনা সভা


Los Angeles

১১:৪৫, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১

ফলের বাগানেই ঘুরে দাড়ালেন মিরসরাইয়ের আকবর


Los Angeles

১৩:১১, জুন ২৩, ২০২১

ইরান নয়, আমিরাত থেকেই বিটুমিন আনছে বে-টার্মিনাল


Los Angeles

২২:৫৩, এপ্রিল ৮, ২০২১

রাউজানের পশ্চিম গুজরায় ওয়ান ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন


Los Angeles

০০:২০, মার্চ ১০, ২০২১

বাম্পার ফলন-দেদারসে বিকিকিনিতে মুখরিত দোহাজারীর কলা’র আড়ত


Los Angeles

২১:২৫, ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০২১

দোহাজারীতে টমেটোর বাম্পার ফলনেও বিপাকে চাষীরা : দামও কম, হিমাগারও নেই


Los Angeles

১৬:৩৮, ডিসেম্বর ১০, ২০২০

তৃপ্তি আর সফলতায় মাছ চাষে মগ্ন রাঙ্গুনিয়ার রাশেদ


image
image