image

আজ, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধী হাফিজকে খুন

ঢাকা অফিস    |    ১২:৪৯, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১

image

নিহত হাফিজ (ফাইল ছবি)

দিন দিন কিশোর গ্যাং ভয়ংকর হয়ে উঠছে। মানবাধিকার আর আইনের ফাঁক ফোঁকড়ের সুযোগে কিশোর গ্যাং এর দৌড়াত্ম্য থামানোই যাচ্ছেনা।গত ৩সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে পুরান ঢাকার লালবাগ থানা এলাকার ৪৭/১ ডুরি আঙ্গুল লেনের নির্মাণাধীন ৫তলা ভবনের ছাদে নির্মমভাবে খুন করা হয় ১১ বছরের প্রতিবন্ধী শিশু হাফিজকে।ওই রাতেই পুলিশ  ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হাফিজের লাশ উদ্ধার করে। লালবাগ থানা পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪জনকে আটক করে হত্যার মোটিভ এবং কারা জড়িত তা জানতে পেরেছেন বলে দাবি করলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি। রবিবার ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় জনসাধারণ ও নিহত হাফিজের পিতা-মাতা,বোনজামাইয়ের সঙ্গে আলাপকালে বের হয়ে এসেছে এক ভয়ংকর কিশোর গ্যাংয়ের কাহিনি। 

পরিকল্পিত নির্মম হত্যাকান্ড : বাঘ যেমন শতশত হরিণের মধ্যে একটি দুর্বল হরিণকে শিকারে টার্গেট করে আক্রমণ করে, তেমনিভাবে কিশোর গ্যাং এর নেতা ইফান প্রতিবন্ধী শিশু হাফিজকেই হত্যার জন্য বেছে নেয়। পূর্বপরিকল্পিতভাবেই তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৫বন্ধু একত্রিত হয়ে জুম্মার নামাজের পর জনপ্রতি ২০টাকা চাঁদা দিয়ে ১০০টাকা ফান্ড করে একটি চাকু ক্রয় করে। ইফান জানায়, তাদের হত্যার টার্গেট হাফিজ যাকে তারা প্যাপে বলে ডাকতো। এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে তারা নাম কামাতে চায়। শুধুমাত্র নাম কামানোর উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবেই ঠান্ডা মাথায় নির্মমভাবে তাকে চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে কেটে কেটে জবাই করে হত্যা করা হয়।

যেভাবে  হত্যা করা হয় হাফিজকে : অত্যন্ত নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় হাফিজকে। বিকেলের দিকে নিউমার্কেটে হকারি কাজ শেষে হাফিজ যখন বাড়িতে ফিরছিলো তখনই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইফান হাফিজের কলার ধরে ডুরি আঙ্গুল লেনে তাদের বাড়ির ছাদে নিয়ে যায়। এরপর তার হাত-পা বেঁধে ফেলে। তার মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে রাখে যাতে চিৎকার করতে না পারে। এরপর অন্ধকার নেমে আসলে সন্ধ্যায় তারা হাফিজের পরনের প্যান্ট, গায়ের জামা খুলে ফেলে তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। নির্মম পাশবিক নির্যাতনের পর চাকু দিয়ে পেট কেটে ফেলা হয়। এ সময় হাফিজ তাদের হাত-পায়ে ধরে মাফ করে দেয়ার আকুতি জানিয়ে তাকে তার মায়ের কাছে যেতে দেয়ার আকুতি জানায় আর বলতে থাকে আমি কারো নাম বলবো না, আমাকে মা হাসপাতালে নিয়ে গেলে আমি বেঁচে যাবো। তার এই আকুতি পাশান কিশোর গ্যাংয়ের ইফানদের মনে দাগ কাটেনি। এরপর তারা তার পায়ূপথ ও মলদ্বারে চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে আর বলতে থাকে তোর এইখানে আমরা যে কাজ করেছি তার যেন কোন প্রমাণ না থাকে তাই এই জায়গা কেটে কেটে নষ্ট করে দিচ্ছি। এই বলে তাকে বারবার চাকু দিয়ে আঘাত করতে থাকে। রক্তাক্ত দেহে বারবার প্রতিবন্ধী হাফিজ তাদের কাছে আকুতি জানাচ্ছিল আমাকে আমার মায়ের কাছে যেতে দাও, আমি কারো নাম বলবো না। হাসপাতাল নিলে আমি বেঁচে যাবো। এরপর তারা প্রথমের গলায় চাকু দিয়ে জবাই করার চেষ্টা করে।এতে কাজ না হওয়ায় তার ঘারের পেছন দিয়ে চাকু চালিয়ে জবাই করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। এ সময় পুরো ছাদ রক্তে ভেসে যায়। তাদের জামাকাপড় রক্তাক্ত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে হাফিজের নিথর দেহটি একটি বস্তায় ভরে পাশে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদের বাথরুমে এনে ফেলে তারা ঘরে ফিরে যায়। ঘরে ফিরে রক্তমাখা জামাকাপড় ধুয়ে ফলে। কিন্তু তারা তখনো বুঝতে পারেনি তাদের ছাদের রক্ত ধুয়ে ফেললেও লাশের বস্তা টেনে নেয়ার সময় তাদের রক্তাক্ত হাতের দাগ ওয়ালে লেগে আছে। টেনে পাশের বাড়িতে নিয়ে আসায় ছোপ ছোপ রক্ত আর টেনে আনার চিহ্ন তখনও বিদ্যমান।

রাতেই পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাশের ছাদে ফেলে রাখা হাফিজের জামাকাপড় খুঁজে পায়। এতে পুলিশ নিশ্চিত হয়ে যায় কোথায় তাকে খুন করা হয়েছে। কিভাবে তার লাশ টেনে এই নির্মাণাধীন বাড়ির বাথরুমে নিয়ে আসা হয়েছে। রাতেই প্রথম ২জনকে আটক করা হয়। এরপর সকালে আরো ২ জনকে আটক করলে হত্যার নির্মমতা পুলিশও জানতে পারে।

হাফিজ হত্যার নির্মম বর্ননা এভাবে করছিলেন তার মা মোছাম্মত ডালিম বেগম।

তিনি জানান, পুলিশ স্থানীয়, এলাকাবাসী বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আমার ছেলেকে হত্যার কথা আমি এভাবেই জানতে পেরেছি।

তিনি বলেন, খুনীর পরিবার আমাদের মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে, না হয় আগে এই এলাকায় যেভাবে বহু খুন করেছে তাদেরও একইভাবে হাফিজের মতো খুন করা হবে।

স্হানীয় এলাকায় অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুনী কিশোর গ্যাংয়ের নেতা ইরফানের পূর্বপুরুষরাও খুনখারাবির সঙ্গে জড়িত ছিলো। তার পিতা ইমরান ছিলো স্হানীয় এক ল্যাংরার গ্যাংয়ের লোক। ২০০২ সালে ইমরান নবাবগঞ্জ বড় মসজিদের পেছনে জাহাঙ্গীর নামে একজনকে ঠিক একইভাবে গলা কেটে হত্যা করেছিলো। সেই মামলায় কোন বিচার হয়নি। খুনী ও সন্ত্রাসী বাবার মতো ছেলেও গ্যাং তৈরী করে খুনের পথে পা বাড়িয়েছে।

নিহত হাফিজের মা মোছাম্মত ডালিম বেগম বলেন, আমার প্রতিবন্ধী ছেলে হত্যার বিচার আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী"র কাছে চাই।আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা গরিব বলে যদি এ হত্যার বিচার না হয় তবে এই খুনিরা এলাকার মানুষের সন্তানদের খুন করবে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। ছেলেহারা শোকে বিহ্বল ডালিম বেগম বার বর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আর তার নিষ্পাপ প্রতিবন্ধী ছেলেকে কেন তারা এমন নির্মমভাবে হত্যা করলো তা জানতে চান।

এদিকে পুলিশের লালবাগ ডিভিশনের ডিসি, জসিম উদদীন মোল্লা সিটিজি সংবাদকে জানিয়েছেন, হাফিজ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত চার জনের মধ্যে রিফাত ও ওয়াহিদ গতকাল রোববার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া হত্যাকান্ডে ব্যবহার করা ছুরি, বস্তা, রশি, হাফিজের রক্তাক্ত জামাকাপড় আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।

তদন্ত অব্যাহত আছে। সম্পৃক্ত অন্য কাউকে পাওয়া গেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।


পুরান ঢাকায় কিশোরকে জবাই করে হত্যা


image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

২০:০৫, জুন ১৩, ২০২২

চন্দনাইশে ইয়াবা ও চোলাই মদসহ আটক ২


Los Angeles

২৩:৩৩, জুন ১১, ২০২২

ইয়াবা পাচারকালে চন্দনাইশে আটক ১


Los Angeles

২৩:১৯, জুন ১১, ২০২২

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবকের মরদেহ উদ্ধার


Los Angeles

২০:৪৮, জুন ৩, ২০২২

লোহাগাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ৪


Los Angeles

২২:১৮, জুন ২, ২০২২

লোহাগাড়ায় ৫ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকে তালা


Los Angeles

১৭:৫১, জুন ১, ২০২২

লোহাগাড়ায় ট্রাকের ধাক্কায় যুবক নিহত


Los Angeles

২২:৩৭, মে ৩১, ২০২২

রাউজানে ইভটিজিংয়ের দায়ে গ্রেপ্তার ১


Los Angeles

২২:৩১, মে ৩১, ২০২২

দিন মাস পেরিয়ে গেলো বছর, তবু মিললো না স্বামীর খবর


image
image