শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৬:১০, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১
অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ, চাঁদাবাজিতে সিদ্ধহস্ত সামান্য বেতনের চেইনম্যান এখন কোটি টাকার মালিক। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহন (এলএ)শাখার চেইনম্যান আহমদ করিমের গড়ে তোলা সিন্ডিকেট ও বলয়ে জিম্মি সেবা গ্রহীতারা তাদের দুর্দশার কথা ভুমিমন্ত্রীকে জানালেও তেমন কোন প্রতিকার মিলেনি। মন্ত্রীর নির্দেশে তাকে সন্দ্বীপ বদলী করা হলেও তিনি এখনও নানাভাবে দখলে রেখেছেন চট্টগ্রামের এলএ শাখা।
চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা ভূমি অধিগ্রহণ কার্যালয়ের কর্মচারী (চেইনম্যান) আহমদ করিম, মো. হানিফ এবং সার্ভেয়ার সৈকত চাকমা ও মো. মোবারক হোসেনের সিন্ডিকেট আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে এলএ শাখার দুয়ার। সামান্য বেতনের কর্মচারী হলেও আহমদ করিম গ্রামে পাঁচতলা বাড়ী করেছেন। নিজের, স্ত্রী এবং আত্মীয় স্বজনের নামে-বেনামে রয়েছে অনেক জমিজমা। চট্টগ্রাম শহরে নাছিরাবাদ এলাকায় সানমার গার্ডেন গ্রাভে আলিশান ফ্লাট (সি-৩), জিইসি মোড় এ্যামবাসেডর বিল্ডিংয়ে বিলাস বহুল ফ্লাট, চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় “সুন্দরম“ (১৯৮নং দোকান) নামে একটা দোকান রয়েছে। ইতোমধ্যে সানমার গার্ডেন গ্রাভের ফ্লাটটি নাকি জনৈক ডাক্তার মোস্তাফিুজুর রহমানের কাছে ১কোটি ১০লক্ষ্ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন এবং শপিং কমপ্লেক্সের “সুন্দরম“ নামের দোকানটিও বিক্রি করার জন্য গোপনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুদকের তদন্ত থেকে বাঁচতে দুর্নীতি ও অবৈধভাবে ক্রয় করা সম্পদ গোপনে বিক্রি করে সাধু সাজার চেষ্টা করছেন বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী দুপুরে চট্টগ্রাম ভূমি অফিসের এলএ শাখায় আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ শোনেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী মো. সাইফুজ্জামান চৌধুরী। সেখানে সেবাগ্রহীতারা তাঁর কাছে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেন। প্রতিমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকটি অভিযোগ যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেন। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় কার্যালয়ের কর্মচারী আহমদ করিম এবং মো.হানিফকে তাৎক্ষণিক বদলির নির্দেশ দেন। মৌখিকভাবে সতর্ক করেন সার্ভেয়ার সৈকত চাকমা ও মো. মোবারক হোসেনকে। এছাড়া রফিক আহমদ নামের এক দালালকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির নির্দেশ দেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত রফিককে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দেন। মন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৯ সালের শেষের দিকে এডিসি দৌলতুজ্জামান খান আহমদ করিমকে সন্দ্বীপে বদলী করেন। সেই সাথে তার অনিয়ম ও দূর্নীতির তদন্তে নামেন দুদক।
বদলির পরও আহমেদ করিম এবং তার সিন্ডিকেট এলএ শাখাকে জিম্মি করে রেখেছে। প্রবল ক্ষমতাধর এ কর্মচারী সন্দ্বীপ না গিয়ে চট্টগ্রাম শহরের নিউমার্কেটসহ কয়েকটি জায়গায় তার নিজস্ব দালালের মাধ্যমে এলএ শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে এখনও অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়। মন্ত্রীর নির্দেশকে উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম শহরে এলএ শাখায় তার যাতায়াতের খুটির জোর নিয়েও তাই অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সন্দ্বীপের ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, তিনি মাঝে মধ্যে অফিসে আসেন বলে শুনেছি। বিস্তারিত না জেনে বলতে পারছিনা।
এদিকে আহমদ করিমের দুর্নীতি অনুসন্ধানে ঢাকা থেকে এক সহকারী পরিচালক এসে তদন্ত করছেন বলে জানা গেছে। তবে তদন্ত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে না পারায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চট্টগ্রাম অফিসের উপ-পরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন কোন কিছু না জানিয়ে ঢাকায় যোগাযোগ করার কথা বলে ফোন কেটে দেন।তিনি ঢাকার অনুমতি ছাড়া কোন কথা বলা যাবে না বলেই ফোন রেখে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকায় দুদক কার্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফ সাদিক বলেন, তদন্তনাধীন বিষয়ে এভাবে কথা বলা যাবে না। আপনারা লিখিত আবেদন করলে আইনে যতটুকু কাভার করে তা দেয়া হবে।
এদিকে অভিযুক্ত আহমদ করিমকে একাধিকবার ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
Developed By Muktodhara Technology Limited