শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১২:২৬, মে ১৩, ২০২২
জালিয়তির মাধ্যমে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে চাকরী নেয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর তাকবীর হোসেন নানা অনিয়ম দুর্নীতি করেও বহাল তবিয়তে চাকরী করে যাচ্ছেন সরকারী এ হাসপাতালে। চমেক হাসপাতালের বøাড ব্যাংক থেকে প্রাইভেট বøাড ব্যাংকে রক্ত পাচারের অভিযোগে এক বছর আগে বøাড ব্যাংক থেকে প্রশাসনিক বøকে সরিয়ে দিলেও পুনরায় স্বপদে ফিরে পুরোনো রূপে চালিয়ে যাচ্ছে কর্মযজ্ঞ।
সরকারি বিধি অনুযায়ী চাকরি প্রার্থীর বয়স ৩০ পেরিয়ে গেলে আবেদনের অযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে। অথচ তাকবীর হোসেন নামের একজনকে চাকরির বয়সসীমা ১০ মাস ১৭দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে চাকরির নিয়োগবিধি সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে।
টিআইবি চট্টগ্রাম দায়িত্বশীলরা বলেছেন, বিষয়টি সুশাসনের পরিপন্থী। তদন্ত করে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, তাকবীর হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম নামের একটি প্রকল্পে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) দ্বারা প্রকল্পটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ওই এনজিও কার্যক্রমকে সরকারি চাকরি দেখিয়ে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে চমেক হাসপাতালে চাকরির জন্য আবেদন করেন তাকবীর হোসেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ০১ (এক) এর (ঙ) এবং ০৫ (পাঁচ) নং শর্তাবলী মোতাবেক ১৮-০৮-২০১১ ইংরেজি তারিখে তাকবীর হোসেনের বয়স (১৮/০৮/২০১১ - ০১/১০/১৯৮০) ৩০ বছর ১০ মাস ১৭ দিন। অর্থাৎ চাকরির আবেদন ঘোষণার তারিখ পর্যন্ত তার বয়স ১০ মাস ১৭ দিন বেশী।
চমেক হাসপাতালের স্মারক নং-চমেকহা/শাখা-১/নিয়োগ -২০২১/৩১৯৫, তারিখ ৭/৭/২০১১ অনুযায়ী নিযোগ বিজ্ঞপ্তির ৯ নং শর্ত অনুযায়ী সরকারি চাকরিরত প্রার্থীদের বিধিমতে বয়স শিথিলযোগ্য উল্লেখ থাকলেও তাকবীর হোসেন এনজিওর প্রকল্পের অধীনে কর্মরত ছিলেন। তার প্রথম সরকারি চাকরিতে যোগদানের তারিখ ছিল ২৮/১২/২০১১ ইং। সেহেতু বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে তার আবেদন করার সুযোগ নেই।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার বয়সসীমা পার হলেও বিভাগীয় প্রার্থী দেখিয়ে তাকবীর হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে চমেক হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ের কাগজপত্র জাল জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। ২০১১ সালের ৮ আগষ্ট (স্মারক নং-চমেকহা/ডিএনএ/২০১১/২২) চমেক হাসপাতালের পরিচালকের প্যাড ব্যবহার করে তাকবীর হোসেনকে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দেন তাকবীরের আপন বড় ভাই ডা. মো.আবুল হোসেন। তবে ওই ভুয়া প্রত্যয়নপত্রে চমেক হাসপাতালের পরিচালকের কোনো স্বাক্ষর ছিল না। ডা. আবুল হোসেন বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তিতে কর্মরত।
অভিযোগ রয়েছে, বড় ভাইয়ের তৈরি করা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তাকবীর হোসেন এই চাকরি বাগিয়ে নেন। তৃতীয় শ্রেণির চাকরি পেয়েই নানা তদবিরের মাধ্যমে তিনি হাসপাতালের বøাড ব্যাংকে যোগ দেন। এর পরই চমেক হাসপাতালের বøাড ব্যাংক থেকে বেসরকারি বøাড ব্যাংকে রক্ত পাচারের অভিযোগ উঠতে থাকে। এ নিয়ে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক তাকবীর হোসেনের বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগসহ বøাড ব্যাংকের রক্ত পাচারের বিষয়টি তদন্ত করে চমেক হাসপাতালের পরিচালককে প্রতিবেদন দেয়। সদ্য চাকরিচ্যুত দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দীন এই তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাকবীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। শরিফ উদ্দীনের বদলির পরবর্তী ১১ মাসে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ব্যপারে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি তদন্ত টিমের প্রধান ও দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্য়ালয়ের উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম অফিসে গিয়ে কথা বলার অনুরোধ জানান।
তাকবীরের অনিয়মের ব্যপারে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে বদলী ও পদায়ন কমিটির সভাপতি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যক্ষ ডাঃ আহমেদুল কবিরের মোবাইলে কল ও বার্তা দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
Developed By Muktodhara Technology Limited