শিরোনাম
ঢাকা ব্যুরো | ১৩:৫০, মে ১৬, ২০২১
মুসার সঙ্গে ফোনে মাত্র ২৭থেকে ৩০সেকেন্ড কথোপকথনের সূত্র ধরে অবশেষে চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খাতুন মিতু হত্যাকান্ডে মামলার বাদী মিতুর স্বামী চাকরিচ্যুত এসপি বাবুল আক্তারকে আটক দেখালো পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেন(পিবিআই)।
প্রশ্ন হচ্ছে কোন কোম্পানির ফোন কল রেকর্ড নিশ্চয়ই ৫ বছর থাকে না। পাঁচ বছর আগের ফোন কল রেকর্ড এখন পিবিআই এর হাতে এলো কিভাবে? আর যদি কল রেকর্ড ওই সময় সংগ্রহ করা হয়ে থাকে তবে তখনকার দায়িত্ব প্রাপ্ত থানা ও ডিবি পুলিশ কেন এই মামলার খুনী হিসেবে বাবুলকে সনাক্ত করতে পারলো না? যদি তাদের তদন্তে গাফলতি থাকে তবে তাদের কেন দায়িত্ব অবহেলার কারনে কোন ব্যবস্থা নেয়া হলো না?
পাঁচ বছর পর এসপি বাবুল খুনে জড়িত থাকার যে প্রাথমিক প্রমান মিলেছে এ অভিযোগ তো মিতুর বাবা বর্তমান মামলার বাদী মোশাররফ হোসেন বাবুলকে চাকরি থেকে অবহিত দেয়ার পর থেকেই বাবুলের পরকীয়ার কথা বলে আসছিলেন এবং বাবুলকে খুনী হিসেবে অভিযুক্ত করে আসছিলেন। তবে কেন এই মামলার খুনী সনাক্তে পাঁচ বছর সময় লাগলো? এছাড়াও ঘটনার সময় মিতুর ৭ বছরের ছেলের সামনেই তার মাকে কুপিয়েছে খুনীরা সে ছিলো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তবে তখনকার তদন্ত কর্মকর্তারা কেন মিতুর ছেলের কাছ থেকে জানতে চাইলেন না খুনীদের সে চিনতে পেরেছে কিনা? যদি ওই দিনই মুসা সনাক্ত হয়ে যেতো, তাকে গুম হতে হতো না। এ প্রশ্নগুলোই এখন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এক্ষেত্রে ওই সময়ে তদন্তে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা হয় হত্যাকারীদের সনাক্ত করেও বাবুলকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন আর না হয় তদন্তে পেশাদারীত্ব ও দায়ীত্ববোধের কথা ভুলে গিয়েছিলেন।
এদিকে মিতু হত্যার পর চট্রগ্রামের একজন সাংবাদিক(সেলিম) একটি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন "বাবুল তাকে বলেছিলো সে জঙ্গিদের টার্গেট হতে পারে।" মামলায় বাবুলও এমন আশংকার কথা বলেছিলেন। এতে করে মনে হচ্ছে বাবুল তার স্ত্রীকে হত্যার ছক বহু আগে থেকেই করেছিলেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, "তবে কি স্ত্রী হত্যার মিশন বাস্তবায়নেই জঙ্গী অভিযান - ক্রসফায়ারের ঘটনাগুলো ঘটিয়ে ছিলেন এসপি বাবুল?" যাতে তার স্ত্রী হত্যার বিষয়টি জঙ্গীদের কাজ বলে প্রতিষ্ঠা করা যায়। জঙ্গি অভিযানের মাধ্যমে বাবুল স্ত্রী হত্যার গ্রাউন্ড তৈরী করেছিলেন বহু আগে থেকেই।
বাবুলের বাবা ও মিতুর বাবা দুজনই পুলিশে চাকরি করেছেন। বাবুলের বাবা কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক(ওসি), আর মিতুর বাবা এসআই থেকে পরিদর্শক(ওসি) হয়েছিলেন।অনেকটা পুলিশ পরিবারে তাদের বিয়ে হয়েছিলো। বাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ছাত্র অবস্থায় বিয়ে করেন মিতুকে।এরপর একটি বেসরকারী ব্যাংকে চাকরি করেন, চাকরির পাশাপাশি একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পেয়ে যান পুলিশ ক্যাডারে চাকরির। দেশে সেনা শাসিত সরকারের পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে বাবুল চট্রগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি ক্রসফায়ার ও বিপুল পরিমান গ্রেনেড ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে সরকারের প্রশংসা কুড়ান এবং পুলিশ ও সরকারের আস্থাও অর্জন করতে সক্ষম হন। সেই সঙ্গে অল্প সময়ের ব্যবধানে পুলিশের বিপিএম ও পিপিএম পদকে ভূষিত হন। যা পুলিশে বিরল ঘটনা। তৎকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বাবুলের পরিবারকে শান্তনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, বাবুল একজন সৎ, মেধাবী চৌকস পুলিশ অফিসার। দেশী বিদেশী চক্রান্তে তার স্ত্রীকে হত্যা করা হতে পারে। মন্ত্রীর সঙ্গে একই সুরে চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারাও একই সুরে কথা বলেছিলেন। অনেক নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তারা পুলিশের মনোবল ভাঙ্গার জন্য এ কাজ বলে অভিহিত করেছিলেন। সেই সঙ্গে দেশের সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার বার্তা দেয়া হয়েছিলো।
পাঁচ বছর পর স্ত্রীকে হত্যায় গ্রেফতারের পর বলা হচ্ছে বাবুল জামায়াত- শিবির পরিবারের লোক। যতদুর জানা, গেছে বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে তার ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদদাতা সমিতির সভাপতি ছিলেন। এই ভাই শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন অভিযোগ আছে। দেশর একটি প্রাচীন দৈনিকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ছিলেন। একজন শিবির নেতা কিভাবে এ কাগজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ছিলেন সেটা নিয়ও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। তবে কি ওই পেপারও শিবিরের পৃষ্ঠপোষক? নাকি পরকিয়ায় পারিবারিক হত্যাকান্ডডকে এখন রাজনৈতিক রং লাগানো হচ্ছে?
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রী একসময় বাবুলের প্রতিবেশী ছিলেন।ওই সময় গায়ত্রীর সঙ্গে প্রথমে পরিচয় ও পরে পরকিয়ায় রুপ নেয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে বাবুল বাথরুমে থাকাকালে তার ফোনে ম্যাসেজ আসে গায়ত্রীর। সেটা দেখে ফেলে মিতু। এরপর ওই ফোন মিতু তার নিয়ন্ত্রণে নেয়। মিতু ফোনটি তার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর অন্ততঃ ২৯টি ম্যাসেজ পায় গায়ত্রীর, যার মধ্যে বাবুল ও গায়ত্রীর শারীরিক মিলনের তথ্যও জেনে যায় মিতু। শুরু হয় সংসারের অশান্তি। বাবুল মোবাইল ট্রাকিং করে তার হারানো ফোনটি সনাক্ত করে মিতুর আলমারিতে।এরপর থেকেই তাদের পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়। বাবুলের পরকিয়ার কথা মিতু তার বাবা-মাকেও জানিয়েছিলো বলে জানা গেছে।
বিসিএস ক্যাডার সুচতুর বাবুল অত্যন্ত মেধার সঙ্গেই স্ত্রী হত্যার জাল বুনেছিলেন। কিন্তু যে কোন অপরাধী তার অপরাধের একটি না একটি সূত্র রেখে যায়। যেমনটা মুসাকে ফোন করে রেখেছিলেন বাবুলও। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা বাবুল মুসাকে কিলিং মিশনের দায়িত্ব দেয়া ও কিলিং এর সময় ঘটনাস্থলে মুসার উপস্থিতি সিসিটিভিতে ধরা পরায় বাবুলই নিজেকে রক্ষা করতে মুসাকে গুম করিয়ে থাকতে পারেন। মুসার স্ত্রী দাবি করেছেন, "পুলিশের লোকজনই মুসাকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে"। এসপি বাবুল ঢাকায় বদলি হলেও পুলিশে থাকা তার অনুসারীরা তখনও চট্টগ্রামেই ছিলো। বাবুল তাদের সাহায্যেই মুসাকে গুম করিয়ে থাকতে পারে এমনটাই আশংকা করছেন অনেকে। তাই মিতু হত্যার পাশাপাশি মুসার গুম ও নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনে পুলিশের তদন্তে গুরুত্ব দেয়া জরুরি বলে অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
Developed By Muktodhara Technology Limited