image

আজ, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ভালোবাসা  প্রতিক্ষণ; কেন ভ্যালেনটাইনস ডে উদযাপন !!!

এন এইচ মাসুম    |    ০০:৪২, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২১

image

১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বাংলাদেশে  এদিবসের সূচনা নব্বই দশকের শুরুর দিকে। আশির দশকের শেষের দিকেও বাংলাদেশের মানুষ এ দিবসটির সঙ্গে ছিল অনেকটা অপরিচিত। ভালোবাসা দিবসের উৎস নিয়ে লেখালেখি করা মানে এ দিবসকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা; আমার কাছে এ দিবস সাংঘাতিক ঘৃণিত। পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আমদানি করা ভালোবাসা দিবস পালন করা মানে স্বকীয় সংস্কৃতির প্রতি অশ্রদ্ধা পোষন করা। আমার কাছে ইসলাম ও দেশীয় সংস্কৃতি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন। মুসলমানদের স্বতন্ত্র কৃষ্টি সংস্কৃতি তার জাতিসত্ত্বাকে সমুজ্জল করে রেখেছে। তারপরও আমরা  ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ ভালোবাসা দিবসের নামে নির্লজ্জতা, বেলেল্লাপনা আর বেহায়াপনাকেই আধুনিকতা বলে মনে করছি! আর মুসলমানদের কৃষ্টি সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে পাখা গজানো উই পোকার মতো আগুনে ঝাপ দিচ্ছি। 

ভালোবাসা এটা আল্লাহ তা'আলার দান । আমরা ইচ্ছা করলেই কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারি না। ভালোবাসা বলতে তরুণ-তরুণী আর যুবক-যুবতীর অবৈধ প্রেম বা তথাকথিত ভালোবাসাকে আমরা বুঝতে চাই না। ভালোবাসার একটা সীমা-পরিসীমা আছে। আবু দাউদ শরীফের হাদিসে উল্লেখ আছে, হজরত আবু উমামা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কেবল আল্লাহর জন্যই কাউকে ভালোবাসল, আল্লাহর জন্যই কাহারো সাথে শত্রুতা করল আর আল্লাহর জন্যই কাউকে কিছু দান করল, আল্লাহর জন্যই কাউকে কিছু দান করা থেকে বিরত রইল, সে ব্যক্তি তার ঈমানকে পূর্ণ করল।” মুসলিম শরীফের অপর একটি হাদিসে উল্লেখ আছে, হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা ঈমানদার হবে। আর তোমরা পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হবে। 

প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। এসব মানবিক গুণ আছে বলেই এখনো টিকে আছে এ নশ্বর পৃথিবী। আল্লাহ তা'আলা নিজেই ঘোষণা করেছেন, ‘আল্লাহর কুদরতের মধ্যে অন্যতম একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও অনুগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ (সূরা আর রুম : ২১)।

ভালোবাসা হলো খোদায়ি অনুভূতি, আত্মার তৃপ্তি ও মনের প্রশান্তি। আল্লাহ তা'আলা আমাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা শিক্ষা দিয়েছেন, যা কোনো বিশেষ দিবসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও উত্তম চরিত্রমাধুর্য দ্বারা আমাদের প্রিয় নবী (সা.) জয় করে নিয়েছেন শত কোটি মানুষের হৃদয়; বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন ইসলামের বিকিরণ। 

প্রতিটি ভালোবাসা হতে হবে আবেগ, বিবেক ও স্রষ্টার সম্মতির সমন্বয়। ভালোবাসার কিছু নিয়মনীতি আছে, ভালোবাসতে হবে নিজকে। তারপর পরিবার পরিজনকে। এর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার পর্যায়ক্রমে নিজের পিতা, মাতা, স্ত্রী, সন্তান, নিকট আত্মীয়, প্রতিবেশীদেরকে ভালোবাসতে হবে। আর এ ভালোবাসার মধ্যে থাকতে হবে আল্লাহ তা'আলার সন্তুুষ্টির প্রত্যাশা আর তাঁর রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ। যে ব্যক্তি নিজকে ভালোবাসে তার উচিৎ তার পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান, নিকট আত্মীয় আর প্রতিবেশীকেও ভালোবাসা। সূরা আত তাহরিম এর ৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়লা ঘোষণা করছেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো আর তোমাদের আহাল পরিজনকেও বাঁচাও।” ভালোবাসা মানে শুধু নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এমনটা নয়।

যে ভালোবাসার পরিচালক হয় শুধু আবেগ বা কুপ্রবৃত্তি, সে ভালোবাসা মানুষের ইহকাল-পরকাল উভয়কে ধ্বংস করে দেয়। ধ্বংস করে মানুষের মনুষ্যত্ব, জাগরিত করে পশুত্বের হিংস্র বৈশিষ্ট্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান বিশ্বে ভালোবাসা দিবসের নামে উৎপত্তি হচ্ছে নানান অপসংস্কৃতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, ছড়িয়ে পড়ছে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা। ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগ্রাসন; যা ইসলামের নীতি ও আদর্শবহির্ভূত। যে কোনো দিবস উদযাপনে সুস্থ ও সুন্দরভাবে আবেগ-অনুভূতি প্রকাশে সচেষ্ট হওয়া ইসলামের শাশ্বত নীতি। আজ পবিত্র ও সত্যিকার ভালোবাসার অভাবে সর্বত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে হিংসা-বিদ্বেষ, ছড়িয়ে পড়ছে গুম, খুন ও ধর্ষণের মতো অসংখ্য অপরাধ। 

ভালোবাসার জন্য দিবস কেন থাকতে হবে?
ভালোবাসা কোনো নির্দিষ্ট স্থান কাল সময়ে বন্দী নয়। ভালোবাসা সব সময়ের। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রতিক্ষণ ভালোবাসাকে যারা ধরে রাখতে পারেন তারাই সত্যিকার ভালো প্রেমিক। তাদের জীবনে বাসা বাঁধে সুখ। নিজের স্ত্রীকে  দিনে অন্তত একবার I Love you বলুন। অতএব আসুন স্লোগান তুলি “ভালোবাসা প্রতিদিন প্রতিক্ষণ, তবে কেন ভ্যালেনটাইনস দিন উদযাপন।”এ ঘৃণিত দিবসকে  'না' বলুন।  আসুন এ বিশ্বকে সুন্দর করতে ভালোবাসাকে নির্দিষ্ট দিনের জন্য না রেখে প্রতিদিন ভালোবাসি। তাই মহান স্রষ্টার সমীপে এই মিনতি যে, সমাজ থেকে চিরতরে নির্মূল হোক সব ধরনের অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও অপসংস্কৃতি। জয় হোক পবিত্র, অকৃত্রিম ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার।

লেখক : এন এইচ মাসুম, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

০১:১৮, ফেব্রুয়ারী ১৭, ২০২১

অনেক বিজয়ও পরাজয়ের গ্লানি বহন করে


Los Angeles

০০:৪২, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২১

ভালোবাসা  প্রতিক্ষণ; কেন ভ্যালেনটাইনস ডে উদযাপন !!!


Los Angeles

১৭:১৮, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০

‘কোথাও কেউ নেই‘ নাটকের বদি আর দুনিয়াতেই নেই 


Los Angeles

১৮:০১, ডিসেম্বর ১২, ২০২০

বাঙালীর বিজয়


Los Angeles

১৩:১৮, নভেম্বর ১, ২০২০

মরু দুলালের আগমনী


Los Angeles

১৬:৫৫, অক্টোবর ১৯, ২০২০

ঘুরে আসুন সাজেক, খেয়াল রাখবেন কিছু বিষয়ে


image
image