শিরোনাম
এস এম শাহেদ হোসেন ছোটন, বোয়ালখালী প্রতিনিধি | ২২:৪৭, আগস্ট ২৪, ২০২১
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। সংক্রমণের কারণে ঘরে বসে শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি অবসর সময় পার করছেন। বিদ্যালয়ের এসেসমেন্ট ও অনলাইন ক্লাসের পর নিজের অবসর সময়টুকু অপচয় না করে ৫বছর ধরে স্কুলের টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে নিজের বাড়ির ছাদে বিভিন্ন জাতের মুরগি ও কবুতরের ক্ষুদ্র খামার করলেন বোয়ালখালী উপজেলার নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন তাহসিন (১৫) ।
তাহসিন বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাগির হোসেনের পুত্র। তাহসিন স্হানীয় শাকপুরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন তাহসিন বলেন,ছোটবেলা থেকে আমি এলাকায় বড়দের দেখেছি বিভিন্ন প্রকার হাঁস-মুরগি,কবুতরের খামার করতে। সেগুলো দেখে আমার খুব ইচ্ছে হতো আমিও যদি একটা খামার করতে পারতাম।সেই থেকে আমি পরিকল্পনা শুরু করি।আমার আম্মু-আব্বু,ভাইয়া স্কুলে যাওয়ার সময় টিফিন করার জন্য যে টাকা দিত এবং প্রতি ঈদে আমাকে বড়রা ঈদ সালামি হিসেবে যে টাকা দিত সেগুলোও আমি জমিয়ে রাখতাম। এভাবে ৫ বছর পর্যন্ত টাকা জমিয়ে এক পর্যায়ে দেখলাম আমার ৩০ হাজার টাকা হয়েছে।
তারপর কোন প্রকারের মুরগি-কবুতর কিনবো এবং কীভাবে মুরগী-কবুতর লালন-পালন করবো বিস্তারিত জেনে নিলাম মোবাইলের ইউটিউবে। এরপর গত ৬ মাস আগে আমি ৩০ হাজার টাকায় মুরগির ঘর তৈরিসহ ফাউমি জাতের ৫০টি ডিমের মুরগী ও বিভিন্ন জাতের কবুতর ক্রয় করি। আমার খামারের মুরগীগুলো এখন দিনে ৩০ টারও বেশি ডিম দিচ্ছে। তাহসিন বলেন, মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই আমার লাভ এবং মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার টাকা। আগামী সপ্তাহে নতুন করে আরও ৫০টি ডিমের মুরগী কিনব। সেই সাথে আমার মুরগী-কবুতরের খামার ধীরে ধীরে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা করেছি।খামার করলে তো পড়াশোনার সমস্যা হয়? এই প্রশ্নে তাহসিন বলেন, আমার পড়াশোনার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। নিয়মিত বিদ্যালয়ের এসেসমেন্ট ও অনলাইন ক্লাস ও টিউটোরিয়াল চালিয়ে নিচ্ছি। পড়ালেখার যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেভাবে আমি সময় করে রুটিন করেছি।
তাহসিনের বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা বলেন, তাহসিনের খামারের ইচ্ছে শিশুকাল থেকে।পড়া-লেখার পাশাশাশি সে নিজে নিজেই মুরগীর খামার গড়ে তুলেছে। এটি করতে গিয়ে লেখাপড়ায় তার মনোযোগ কমেছে বলে মনে হচ্ছে না।আমরা চাই পড়ালেখার পাশাপাশি এখন থেকেই সে নিজেকে গড়ুক।
বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সেতু ভূষণ দাশ বলেন, তাহসিন আসলে সমাজের জন্য একটা মডেল।সত্যিই আমি আনন্দিত। এত ছোট্ট ছেলে নিজের প্রতিভা ও চেষ্টায় খামার করছে। এ বয়সী খামারি আমি আগে আর দেখিনি।
তিনি বলেন, ‘এমন খামারিদের আমরা সহযোগিতার জন্য খুঁজছি। তাকে সরকারি যত ধরনের সহযোগিতা রয়েছে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করবো। আমার তরফ থেকে এবং প্রাণী-সম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তার তাহসিনের জন্য শুভ কামনা।আমরা তার পাশে থাকব।
Developed By Muktodhara Technology Limited