শিরোনাম
এম.বশিরুল আলম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি | ১৭:৫৭, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
পার্বত্য চট্টগ্রামের জুমিয়ারা পাহাড়ে শতশত বছর ধরে চাষ করে আসছে জুম। পাহাড়ের ঢালে বিশেষ পদ্ধতিতে এক জাগায় একাধিক ফসলের চাষ করা হয় বলে এর নাম ‘জুম চাষ’ । তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরই পাহাড়ের আবহাওয়ার পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুক’লে থাকায় চলতি মৌসুমে পাহাড়ে পাহাড়ে জুমচাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্যান্য বৎসরের তুলনায় এবারে জুমে ধানসহ সকল ফসলের ভাল ফলন হয়েছে ।
জানা গেছে, লামা উপজেলার সর্বত্রই জুমধান কাটার ধূম পড়েছে। জুম চাষিরা সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই ধানকাটতে শুরু করেছেন। বহু পাড়ায় জুমের নতুন ধানের ভাতও খাচ্ছেন অনানুষ্ঠানিকভাবে। আরো দু’মাস চলবে ধান কাটার কাজ।
ধান কাটা শেষে জুমঘরে তা মাড়াই করছে তারা। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় পাকা ধান শোভা পাচ্ছে। মৌসুমের প্রথম দিকে এমন দৃশ্য দেখা যায় উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের তেলুনিয়া এলাকায়। দল বেঁধে ধান কেটে জুম ঘরে তুলছে জুমচাষীরা। সেসব ধান আবার জুমেই মাড়াই করা হয়। মাড়াইকৃত ধান থুরংয়ে করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে জুমচাষীরা।
তামাছিং মার্মা ,চিংবাইং মার্মা,লেপ্রূ মার্মা, উমোচিং মার্মা, মংব্রাচিং মার্মাসহ কয়েকজন জুমিয়াচাষীরা জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাহাড়ে জুমের ফলন ভালো হয়েছে। চাষিরা আরো জানান,জুমে শুধু ধান নয়, চাষ হয় মিশ্র ফসল, যেমন মারফা, মিষ্টিকুমড়া, ভুট্টা, তুলা, তিল, আদা, হলুদ, মরিচ, বেগুন, জুরো আলু, সাবারাং, মারেশ দাদি (ডাঁটা), পোজি, আমিলে, ওলকচু, সাম্মো কচু, ঢেঁড়স, কলা, পেঁপে, যবসহ প্রায় ৩৫/৪০ জাতের ফসল।
আবার অনেকে আক্ষেপ করে জানান, আমরা জুম চাষের সাথে নানা প্রজাতের বনাজী ও ফলজ গাছ লাগাই। যার কারনে এবছর এই পাহাড়ে জুম চাষ করলে আর এখানে জুম চাষ করা যায় না। এ ভাবে করতে করতে জুম চাষের পাহাড় বনায়ন হয়ে যাচ্ছে। যার কারনে জুম চাষ বিলুপ্তি হতে চলছে।
লামা প্রেস ক্লাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রিয়দর্শী বড়ুয়া বলেন, জুম চাষের উপর নেতিবাচক ধারণা থাকলেও পার্বত্য অঞ্চলের বড় ছোট প্রায় ১৪টি বিভিন্ন ভাষাভাষীর উপজাতীয় জনগোষ্ঠি সাধারণত এ জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে যুগ যুগ ধরে। তবে বনায়নসহ নানা কারনে এই জুম চাষ এখন বিলুপ্তির পথে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কৃষি অফিসার রতন চন্দ্র বর্মন জানান, পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবিকার প্রধান উৎস জুম চাষ। বলতে গেলে বাংলাদেশে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো এ চাষাবাদ বেশি হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, বিশেষ করে পাহাড়ে চারটি জাতের মধ্যে বিরি-২৪ ও বিরি-২৭ এর ধান ভাল , এবং জুম চাষিরাও এ জাতের ধান বেশিকরে। তাছাড়া স্থানিয় ভাবে এক জাতের কালো বিন্নি ধানেরও চাষ জুমে করে থাকে, এবং এর চাহিদাও অনেক।
Developed By Muktodhara Technology Limited