শিরোনাম
শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী প্রতিনিধি | ১৭:০৯, এপ্রিল ১৩, ২০২১
মুসলিমদের পবিত্রতম মাস মাহে রমজান আসন্ন। এ উপলক্ষে রয়েছে ধর্মীয় নানা ইবাদত বন্দেগী। রমজান মাসে চলমান বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে হতাশা বিরাজ করছে বাঁশখালীর সর্বস্তরের জনমনে। এমনিতেই গ্রীষ্মের প্রখরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাঁশখালীতে লোডশেডিং বেড়ে যায় চরমাকারে। ইদানিং পল্লীবিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রায় ৯৮ হাজার গ্রাহক।
এ অঞ্চলের মানুষ নিত্য লোডশেডিংয়ে ভোগছে। প্রতিদিনই বিদ্যুৎতের লুকোচুরি খেলায় জনজীবন চরমভাবে অতিষ্ঠ। সভ্যতার চরম উৎকর্ষতায় আজও বিদ্যুৎতের চরম হেয়ালীপনা থেকে রেহায় পায়নি বাঁশখালীবাসী। রাত আর দিন বলে নেই কোন তফাৎ, বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকেনা। পুরো বছর জুড়েই বিদ্যুতের লুকোচুরি থাকে অস্বাভাবিকভাবে। বিদ্যুৎতের এহেন লুকোচুরি খেলায় মারাত্মকভাবে অস্বস্তিতে আছেন বাঁশখালীর লোকজন। এমনকী গভীর রাতেও বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না বলেই চলে। সামান্য বৃষ্টিপাতে, হালকা বাতাসেও বিদ্যুৎ চলে যায় দীর্ঘ বিরতীতে। সপ্তাহের শুক্রবার কখনো নোটিশ দিয়ে, কখনো নোটিশ ছাড়া গাছ কাঁটার অভিযোগে পুরোদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখে কতৃপক্ষ। পুরো বছর জুড়েই গাছকাঁটা যেন ট্রাডিশনালে পরিণত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সোস্যাল এক্টিভিটিসদের মতে, বর্তমানে বাঁশখালীর প্রধান সমস্যা বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের ভেলকিবাজি।
পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, 'চলতি মাসের গত এক সপ্তাহে বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন স্পটে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে ৩ টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। শিলকূপ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে গত ৭ এপ্রিল রাতে ১০ কেভি এবং পরের দিন শনিবার রাতে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫ কেভি, চাম্বলে ১০ কেভির তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। গত দুই মাস আগেও পুঁইছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব পুঁইছড়িতে দু'টি কেভি চুরি করে চোরের দল। চুরির বিষয়ে বাঁশখালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কতৃপক্ষ।'
তারা আরো জানিয়েছেন, 'আবাসিক-অনাবাসিক সহ প্রায় ৯৮ হাজার গ্রাহকদের সেবা দিতে চট্টগ্রাম পল্লীবিদ্যুৎ সমিটি-১ জোনাল অফিস সহ উপজেলার নাপোড়া, জলদী, বৈলছড়ি, গুনাগরি ৪ টি সাবস্টেশন রয়েছে। লোকবল কম থাকায় অনেক সময় বিচ্ছিন্ন সংযোগ চালু করতে সময় লাগে। তাই বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতে একটু দেরী হয়। তাছাড়া দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া হয়ে দীর্ঘ ৪৬ কি.মি অতিক্রম করে বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ আসে। সড়কে গাছপালা থাকার কারণে অব্যবস্থাপনার ফলে বৃষ্টি-বাদলের সময় সাময়িক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। সামনে কালবৈশাখীর প্রভাবে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে যাতে অনাখাংকিত ঘটনার সৃষ্টি না হয় তাই গাছপালা কেটে দেওয়াতে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে।
একদিকে ঘন ঘন বিদ্যুতের লুকোচুরি অন্যদিকে ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় চরম ভোগান্তিতে জনজীবন। কেভি চুরি হওয়া এলাকায় ট্রান্সফরমার না থাকায় দেড় শতাধিক পরিবার বিদ্যুৎবিহীন চরম ভোগান্তিতে আছে বেশকয়েকদিন ধরে। ঘনঘন লোডশেডিং এর কারণে বাড়ির নিত্য প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এমনও অভিযোগ করেছেন বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহকেরা।
উল্লেখ্য যে, দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলেও মিটার ভাড়া ও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির নির্ধারিত মূল্যে। ভূক্তভোগীর অনেকে অভিযোগ করেন যে, দিনের এক-তৃতীয়াংশ সময় বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও প্রতিমাসেই অতিরিক্ত বিল দিতে হচ্ছে।
দেশে চলছে করোনার মহামারি। সরকারী-বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বিরতিহীন সেবা দিতে গিয়ে লোডশেডিংয়ের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ নির্ভর বাসস্থানগুলোর আলো-বাতাস-পানি বন্ধ থাকার মত অনাকাংখিত ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন বিদ্যুতের গ্রাহক ও ভুক্তভোগীরা। ঘনঘন লোডশেডিং যখন নিত্য রুটিনে পরিণত হয়েছে তখন উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে অনেকে দু'টাকার ম্যাচ নিয়ে এক কাঠিতে এগিয়ে আছে। ঘরে ঘরে, সোলার সিষ্টেম, আইপিএস, জেনারেটর, চার্জার লাইট-ফ্যান, মোমবাতি, কেরোসিন নিয়ে প্রস্তুত থাকেন বাঁশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসচ্ছ্বল পরিবার গুলো। সুপেয় পানির জন্য বিদ্যুৎচালিত মোটরের উপর নির্ভর করে হাজার হাজার লোকজন। এতে লোডশেডিং থাকায় ভোগান্তির অন্ত থাকেনা গৃহকর্ত্রী থেকে শুরু করে সবার।
পল্লীবিদ্যুতের স্বেচ্ছাচারিতাকে অনেকেই নিরীহভাবে মেনে নিয়েছেন। তারা সংশ্লীষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি বার বার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও মিলছেনা কোন সমাধান। লকডাউনে স্কুল-মাদরাসা বন্ধ রয়েছে। দিনেরাতে সমানতালে লোডশেডিং থাকায় স্কুল মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পড়াশুনার ক্ষতি করছে। অনেকের আবার অনলাইন ক্লাসে ঘটছে বিপত্তি। বাঁশখালী উপজেলার মানুষ কি বিদ্যুৎ-এর অনবরত লোডশেডিং এর কবল থেকে রেহাই পাবেনা? এমন প্রশ্ন উঠে আসে সচেতন মহল থেকে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পল্লীবিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে আশুপ্রতিকার চান আবার অনেকে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে দেখা গেছে। করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে। এতে মানুষ হয়ে পড়বে গৃহবন্ধী। বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সেবার কোন বিকল্প নেই বলে জানান গ্রাহকেরা।
বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মু. জসিম উদ্দিন বলেন, 'বাঁশখালীতে ইদানিং বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক চলছে। অন্য দিকে কালবৈশাখীর প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য গাছ কাটা হচ্ছে। অপ্রতুল জনবলের কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সংযোগ চালু করতে সময় লাগায় লোডশেডিং হচ্ছে। তবে বাঁশখালীতে যে পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে তা নিয়ে কোন সংকট নেই। বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনগুলো গাছপালার সাথে থাকাতে ঝড়বৃষ্টির সময় ও বাতাসে ডালপালা ভেঙ্গে পড়ে। এতে সাময়িক অসুবিধার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া হয়ে বিদ্যুৎ বাঁশখালীতে আসাতে ওখানেও কোন সমস্যা হলে তার প্রভাবও বাঁশখালীতে পড়ে তাই লোডশেডিং হয়। শীঘ্রই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
Developed By Muktodhara Technology Limited