শিরোনাম
রাউজান প্রতিনিধি | ১৬:৩০, মে ২৭, ২০২১
দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে নমুনা ডিম দেয় মা মাছ। এসময় হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত নমুনা ডিম সংগ্রহ করে।
বুধবার সকালেও অল্প পরিমাণ নমুনা ডিম দেখা যায়। তবে বিকেলের দিকে আর ডিম পাওয়া যায়নি।
ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা, জালসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি দিয়ে নদীতেই অপেক্ষা করে। বুধবার ভোর রাত ৪ টার দিকে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়তে শুরু করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া।
হাটহাজারীর মাদার্শা এলাকার রামদাস মুন্সিরহাট, অঙ্কুরি ঘোনা, আজিমের ঘাটসহ কয়েকটি পয়েন্টে ডিম সংগ্রহ করতে দেখা যায়। তবে আশানুরুপ ডিম সংগ্রহ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন সংগ্রহকারী। তারা বলছেন, যে পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করবো ভেবেছি তা এখনও পর্যন্ত হয়নি। অল্প ডিম মাত্র পেয়েছি। আমরা এখনও আশায় আছি।
এ বিষয়ে হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, এবার এখনও ভারী বৃষ্টি হয়নি। মা মাছ ডিম ছাড়ার জন্যে বৃষ্টি প্রয়োজন। এ ছাড়া নদীতে লবণাক্ত পানির পরিমাণ বেশি। স্বাভাবিকের চেয়ে ৭২ শতাংশ লবণাক্ত পানি থাকায় ডিম সংগ্রহ কম হচ্ছে।
ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, 'আমরা এখনও নৌকা নিয়ে নদীর মাঝে আছি। প্রায় ৪ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি। এখনও কাঙ্ক্ষিত ডিম সংগ্রহ করতে পারিনি'।
আরেক ডিম সংগ্রহকারী রোশাঙ্গীর আলম বলেন, 'আমরা যা আশা করেছি সেভাবে ডিম পাচ্ছি না। অল্পসল্প ডিম পেয়েছি মাত্র। ডিম সংগ্রহ করার জন্যে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। নৌকা, জাল, কুপ সংস্কার এসবের জন্যে ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। অনেকের আরও বেশি হয়। তবে আমরা এখনও আশাবাদী'।
জানা যায়, এবার ২৪৩ টি নৌকা ও প্রায় ৭'শ ডিম সংগ্রহকারী হাটহাজারীর মাদার্শা এলাকার রামদাস মুন্সিরহাট, অঙ্কুরি ঘোনা, আজিমের ঘাটসহ কয়েকটি পয়েন্টে ডিম আহরণ করছে।
হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, আগামি জুন পর্যন্ত মা মাছ ডিম ছাড়বে। তাই এখনও পুরোপুরি কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আজকে কি পরিমাণ ডিম দিয়েছে মা মাছ তা জানার চেষ্টা চলছে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, এখনও নদীতে আছেন ডিম সংগ্রহকারী। নদীর পানিতে লবণাক্তের পরিমাণ অনেকটা বেশি। আশাকরি এটা কেটে যাবে।
বছরের এপ্রিল থেকে জুনের যেকোনো সময়ে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, পূর্ণিমা বা অমাবস্যার তিথি বা জো থাকতে হবে। একই সময়ে নদীর স্থানীয় এবং খাগড়াছড়ি, মানিকছড়িসহ নদীর উজানে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে হবে। ফলে পাহাড়ি ঢল নামবে এবং নদীতে ফেনাসহ পানি প্রবাহিত হবে। ঠিক এই সময়ে পূর্ণ জোয়ার শেষে অথবা পূর্ণ ভাটা শেষে পানি যখন স্থির হয়, তখনই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে।
হালদা গবেষকরা বলছেন, এ বছরের এপ্রিল মাস শুরু হওয়ার পরে ইতোমধ্যে তিনটি জো চলে গেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় নদীতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তাই মা মাছ ডিম ছাড়েনি। সর্বশেষ ২৪ মে থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণিমার জো। এটা ২৮ মে পর্যন্ত স্থায়ী হবে।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ডিম সংগ্রহকারীরা। যা গত এক যুগের সর্বোচ্চ আহরণ বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
Developed By Muktodhara Technology Limited