শিরোনাম
আব্দুল আল মামুন, ফটিকছড়ি প্রতিনিধি | ১৭:৩৩, জুলাই ১৪, ২০২১
কোভিড-১৯ আয় কম কোরবানীর সংখ্যাও কম, হাসি নেই কামার শিল্পীদের মুখে আর কয়েক দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামারপল্লীগুলো হাতুড়ি আর লোহার টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে থাকে। কিন্তু এবার করোনা
প্রাদুর্ভাবে হাসি নেই কামার শিল্পীদের মুখে। করোনা ভাইরাসের কারণে এবার অনেকের পশু কোরবানি দেয়ার সামর্থ নেই। ফলে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে কামার শিল্পীদের মাঝে। আর এ কারণে ক্রেতা ভিড়ছে না কামারীদের দোকানে। তাদের ক্রেতাদের সংখ্যা কমেছে। ভাইরাস সংক্রমণের ভয় আর আর্থিক সঙ্কটের কারণে এ বছর ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন কামার শিল্পীরা।
ফটিকছড়িতে প্রায় দোকানে শতাধিক কামার শিল্পী রয়েছে।হেঁয়াকো, দাতমারা, কাজিরহাট, বিবিরহাট, নাজিরহাট, নানুপুর, আজাদী বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে এসব কামার শিল্পীরা ছুরি, বটি, দা, চাপাতিসহ ধারালো নানা জিনিস বানাতে কাজ করে যাচ্ছেন। ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই কামার শিল্পীদের কাছে পশু কাটার ছুরি, চাপাতি, দা, বটিসহ নানা জিনিস ক্রয় করে থাকে। আবার কেউ কেউ ঘরে থাকা পুরনো দা, ছুরি ধারা করার জন্য আসতো। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর দোকানে ক্রেতাদের ভিড় কম। প্রতিবছর কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে বেচাকেনা ভালো হলেও এ বছর মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে দোকানে ক্রেতারা তেমন একটা আসছেন না। প্রতিবছর কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে কামার শিল্পীদের ব্যস্ততা কয়েক গুণ বাড়তো। এবারের চিত্রটা অন্য রকম। পশু কোরবানির ধারালো অস্ত্র তৈরি করে ক্রেতাদের আসায় বসে আছে কামারীরা। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় তাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে।
কামাররা বলেন, সারা বছর আমরা দা, ছুরি তৈরি করলেও কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকি। এই সময়টাতেই আমাদের সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আমাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে না। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার
ক্রেতাদের সংখ্যা অনেক কম। তারপরও আশাকরি ঈদের আগেরদিন ক্রেতারা হয়তো আমাদের নিকট আসবেন ধারালো জিনিসপত্র ক্রয় করতে।
তারা জানান, বর্তমানে কোরবানির কাজে ব্যবহৃত ধারালো ছোট ছুরি থেকে শুরু করে বড় ছুরিতে শান দেয়ার জন্য ৪০ টাকা থেকে শুরু করে কাজের গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে ৭০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি দা বিক্রি হচ্ছে ৩০০, দা- হাঁসুয়া ১৫০, ছোট ছুরি ৫০, বটি ২০০, চাপাতি ২৫০-৩০০ টাকা করে। এছাড়া বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস প্রকার ভেদে বটি ৩শ’ থেকে ৮শ’, দা সাড়ে ৩শ’ থেকে ৮শ’, বড় আকৃতির ছুরি ৪শ’ থেকে ১ হাজার, ছোট আকৃতির ছুরি ৫০ থেকে ২শ’ এবং চাপাতি ৭শ’ থেকে ১২শ’
টাকায়।
দোকানে আসা কয়েকজন ক্রেতা বলেন, আগামী ২১শে জুলাই ঈদুল আজহা। তাই আগে থেকে কোরবানি দেয়ার জন্য ছুরি, দা কিনতে এসেছি। পাশাপাশি পুরনোগুলোও সান দেয়ার জন্য নিয়ে এলাম। অন্যান্য সময়ের তুলনায় দা, ছুরির দাম অনেক বেশি রাখছে বলে অভিযোগ করেন তারা। তবে এবার করোনা ভাইরাসের কারণে অনেকে কোরবানি না দেয়ার মতামত ব্যক্ত করেছে। তাই ক্রেতাদের সংখ্যাও কমেছে।
এছাড়া এখন মেশিনে দা-ছুরি উৎপাদন, প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, লোহার দাম বৃদ্ধি, নিজেদের পুঁজি ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ পেশার অনেক শিল্পী ও কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়ছে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে কাঁচামালের সহনীয় মূল্য ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করেন এ সংশ্লিষ্ট শিল্পীরা।
Developed By Muktodhara Technology Limited