image

আজ, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪ ইং

চন্দনাইশের পেয়ারা, এতদঞ্চলে সেরা, ভরা মৌসুমেও চাষীরা মনমরা

মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ প্রতিনিধি    |    ২১:৩৮, আগস্ট ৬, ২০২১

image

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় ও পাহাড়ের পাদদেশের বাগানগুলো থেকে 'কাঞ্চন পেয়ারা' পুরোদমে বাজারে আসতে শুরু করেছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই চাষ করা হয় কাঞ্চন পেয়ারা। স্বাদে-গুণে ভরপুর চন্দনাইশের এই কাঞ্চন পেয়ারার কদর রয়েছে সারা দেশব্যাপী।

চন্দনাইশে উৎপাদিত পেয়ারা আকারে বড়, দেখতে সুন্দর, বিচি কম, রসালো, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও সু-স্বাদু হওয়ায় এখানকার পেয়ারা চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের এর চাহিদা ব্যাপক। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা এসে পেয়ারা কিনে ট্রাকে করে নিয়ে গিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকেন। দেশের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, বাহরাইন ও কুয়েতে রপ্তানি হয় কাঞ্চন পেয়ারা।

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার আগে প্রতি বছর পেয়ারার মৌসুম শুরু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাটবাজারগুলোতে পাইকারি ও খুচরা পেয়ারা বিক্রেতাদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেত। কিন্তু এবার সেই হাটগুলোর জৌলুশে ভাটা পড়েছে। হাটে পাইকারি ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি কম। করোনা মহামারিতে বিধিনিষেধের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা পেয়ারা সংগ্রহ করতে আসতে পারছেন না।

এ ছাড়া গত কয়েক বছর ধরে পেয়ারার বাগান যেমন কমে আসছে, তেমনি পেয়ারার ফলনও কমে আসছে। চলতি মৌসুমে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় এবার উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে পেয়ারা বাগানের মালিক ও চাষিরা জানিয়েছেন।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় পেয়ারা চাষ হলেও মূলত চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চন নগর এই জাতের পেয়ারার উৎপত্তিস্থল। এখানকার পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে বিশেষ করে দোহাজারী, ধোপাছড়ি, হাশিমপুর, জঙ্গল হাশিমপুর, ছৈয়দাবাদ, লট এলাহাবাদ, কাঞ্চননগর, পটিয়ার কেলিশহর, হাইদগাঁও, শ্রীমাই এলাকায় উৎকৃষ্টমানের পেয়ারা উৎপন্ন হয়ে আসছে।

জানা গেছে, এ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে নতুন পলি জমার কারণে এখানকার মাটি খুব উর্বর হয়। এর ফলে পেয়ারা চারা রোপণ থেকে শুরু করে গাছ বড় হওয়ার পর পেয়ারা ফলন আসা ও পরিপক্ব পেয়ারা সংগ্রহ করা পর্যন্ত গাছের গোড়ায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ ও গাছে কোনো প্রকার কীটনাশক ছিটানো প্রয়োজন হয় না। এ কারণে এই পেয়ারাকে স্বাস্থ্যসম্মত বা (অর্গানিক) পেয়ারা বলা যায়। তাছাড়া চাষিরা ডাঁটা ও পাতাসহ পেয়ারা সংগ্রহ করে এ কারণে ফরমালিন ও রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো ছাড়াই চার-পাঁচ দিন অনায়াসে এ পেয়ারা সংরক্ষণ করা যায়।

প্রতি বছর মৌসুম শুরু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাট-বাজারগুলোতে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের আনাগোনা বেড়ে যায়। পেয়ারার চাষ, ব্যবসা ও বাজারজাতকরণের কাজে জড়িত রয়েছেন কয়েক হাজার মৌসুমী শ্রমিক। পেয়ারা বহন ও বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে টানা চার মাস ধরে এ পেয়ারা সংগ্রহ করা হয়।

প্রতি মৌসুমে কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয় পেয়ারা চাষি ও শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা। শত-শত শ্রমিক কয়েক মাইল পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে তা বিশেষভাবে লালসালুর পুঁটলিতে মুড়িয়ে কাঁধে করে নিয়ে আসে বাজারে। এরপর লালসালু বাধা অবস্থায় থরে থরে সাজানো হয় পেয়ারা ভর্তি পুঁটলির সারি। তা দেখে ক্রেতা-বিক্রেতারা সহজেই আকৃষ্ট হয়, চলে দরদাম, বেচাকেনা।

প্রতি মৌসুমে দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন মাঠ, খাঁনহাট রেলওয়ে ষ্টেশনের পাশে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠা বাগিচাহাট, খাঁনহাট, কাঞ্চননগর, হাশিমপুর, বাদামতল, রৌশন হাট, চক্রশালা ও কমল মুন্সির হাট এলাকায় পাইকারি পেয়ারার বাজার বসে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পেয়ারা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখানে পাইকাররা কিনে সংখ্যা হিসেবে। আর তারা বিক্রি করে ডজন হিসেবে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি ডজন পেয়ারা ৬০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হয়ে আসছে।

এবার পেয়ারার ফলন গত কয়েক বছরের তুলনায় একেবারে কম হয়েছে উল্লেখ করে খানহাট পেয়ারা বাজারের ইজারাদার মো. শফিকুর রহমান জানান, "পেয়ারার ভরা মৌসুমেও বাজারে তেমন পেয়ারা নেই। দুই বছর আগেও প্রতিদিন এই বাজারে ৪শ ভার পেয়ারা আসতো। এখন আসে ৩০ থেকে ৪০ ভার।

তিনি আরও বলেন, দূরদূরান্ত থেকে পাইকারেরা আসতে না পারায় অনেক সময় অবিক্রীত থেকে যায় পেয়ারা। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর রেলওয়ে থেকে যেই টাকা দিয়ে পেয়ারা বাজারটি লিজ নিয়েছি তার চার ভাগের এক ভাগ টাকাও তুলতে পারিনি। আমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

ইজারাদার মো. শফিকুর রহমান জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর বেশি কড়াকড়ি থাকায় বাজার তেমন একটা বসেনি। এবছর বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। ফলে আশানুরূপ পেয়ারা বাজারে আসছে না।

সরকারিভাবে কাঞ্চন পেয়ারার জাত সংরক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দুই এক বছরের মধ্যে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু অর্গানিক পেয়ারা একেবারেই হারিয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

০১:১৭, মে ১৪, ২০২২

বাঁশখালী ইউপি নির্বাচনে নৌকায় শেষ হাসি যাঁদের


Los Angeles

০০:৩০, মে ১৪, ২০২২

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ঘেষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া


Los Angeles

১৬:২৬, অক্টোবর ১৬, ২০২১

বীর নিবাস পাচ্ছেন বাঁশখালীর ১০ মুক্তিযোদ্ধা


Los Angeles

২০:৩৩, অক্টোবর ১৩, ২০২১

তিন প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে বিপাকে বাঁশখালীর এক দরিদ্র পরিবার


Los Angeles

১১:২৪, অক্টোবর ১০, ২০২১

সীতাকুন্ড ইউপি নির্বাচন : নৌকা দাবি ৪৩জনের


Los Angeles

২০:১৯, অক্টোবর ৮, ২০২১

আবিষ্কারের বিস্ময় বালক বাঁশখালীর আশির, প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা


Los Angeles

২১:৩৮, অক্টোবর ৭, ২০২১

করোনাকালে বাল্যবিয়ে : পড়ালেখায় ইতি টেনে অনেক কিশোরী এখন পুরোদস্তুর সংসারী


image
image