শিরোনাম
নূর হোসেন শাহেদ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | ১৭:২৯, আগস্ট ২৮, ২০১৮
ছাত্রজীবনে খুব আড়ঙে যাওয়া হতো র্যাপিং পেপার কিনতে। কতো সুন্দর সব ডিজাইনের পেপার মিলতো তখন। নকশীকাঁথাকে তারা কাগজেই ফুটিয়ে রাখতো যেন। রুচির জানান দিতে, ব্যক্তিত্বের টনটনে ভাবকে ফুটিয়ে তুলতে ঘোরলাগা কাঁচা সে বয়সে তাই আড়ং এর বিকল্প অন্যকিছুকে ভাবার সুযোগই ছিলোনা।কালেভদ্রে বড়জোর 'আর্চিস গ্যালারী', ছাড় বলতে এইটুকু পর্যন্তই!
ভেতরে গিফট যাই থাকুক, আগে তো দর্শনধারী, পরেই না গুন বিচারী! ক্রেপ কাগজে বা ইমবোস্ ডিজাইনের মনোহরা দর্শনে প্রিয় মানুষকে নন্দনে ভাসানো, ভেতরের চমকে দ্বিগুণ প্রফুল্লতায় ভাবানো, টানাপোড়নের দিনে এ' ছিল এক মনস্তাত্ত্বিক খেলা! 'ভেতরে কি, ভেতরে কি' অনবদ্য এক অস্থিরতা জাগিয়ে তোলার কালচার নব্বুয়ের দশক জুড়েই ছিল।
ভেতরে সত্যিই কি তা দেখার সুযোগও হয়েছিলো একদিন ভরদুপুরে আন্দরকিল্লায় লাশকাটা ঘরে। রোড এক্সিডেন্টে হারিয়ে যাওয়া মোতাহের ভাইকে দেখতে গিয়ে দেখি আরো পাঁচজন তার সাথে নিথর শুয়ে আছে সে ঘরের মেঝেতে। বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে পারমাতাল ডোম চামড়ার র্যাপিং ফেড়ে বের করে আনছে রবের দেয়া ভেতরের দামী সব গিফট, যা দিয়ে তাঁরা বেঁচেছিলো কালকের দিন পর্যন্তও। যে চামড়ার বাদামী, তামাটে, উজ্জ্বল বর্নে তারতম্য হয় মানুষের মূল্যায়নে, তার আড়ালে এই প্রথম দেখলাম অবিকল একই কিন্তু দামী সব রত্নভাণ্ডার_ মানুষের কলিজা, ফুসফুস, ক্ষুদ্রান্ত্র -বৃহদন্ত্র, আর শরীরের পরতে পরতে জমাট ঘি এর মতো তরতাজা, সতেজ অঢেল চর্বি !
মুক্তচিন্তা, মানবধর্ম কিংবা কি এক অচিন পাখির সন্ধান জাতীয় একটা ভ্রমে জীবনের অনেকগুলো দিন বেহিসাবে কেটেছে। আড়ঙে, রংবেরঙে। কখনো নিজের দিকে ফিরে তাকানোর ফুরসত মিলেনি। লোমশ-ত্বকে মুড়িয়ে দুইশো ছয়টা হাঁড়ের ফ্রেমে এতো এতো গিফট ভিতরে সযত্নে বিন্যস্ত করে যিনি এতটাকাল সচলও রেখেছেন, বিস্ময়ের ধারটুকু পর্যন্ত ধারিনি, ত্বকের যত্ন ছাড়া। রাব্বিগফিরলী, রাব্বিগফিরলী।
এক মহাবিস্ময় শরীর নামের এই মেগা ফ্যাক্টরি। তারও অধিক বিস্ময় তার সচল থাকা, তার টিকে থাকার যোগান! আলহামদুলিল্লাহ্। ভ্রমের জীবনে বিপুল ভোগ আর ভ্রান্তির পরে, ডিজাইনবিহীন মসৃণ কাফনের র্যাপিঙে তলিয়ে যাওয়ার আগে প্রাণপণে তাই এই জীবনের চাওয়াগুলো আমূল বদলে নিতে চাই।
'হে আমাদের পালনকর্তা, সরলপথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে আর বক্র করে দিয়েন না এবং আপনি আমাদের প্রতি করুনা করুন, আপনিই তো মহান দাতা।'
( রাব্বানা লা’তুযিগ কুলুবানা বা’দা ইয হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুনকা রাহমাতান, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহাব। ) - (সুরা আল ইমরান ৩/৮)।
'হে আল্লাহ! আপনার গায়েবী জ্ঞান এবং সকল সৃষ্টির উপর আপনার সার্বভৌম ক্ষমতার অসিলায় আমাকে আপনি জীবিত রাখুন সে-সময় পর্যন্ত, যে সময় পর্যন্ত জীবিত থাকা আপনার জ্ঞানে আমার জন্য কল্যাণকর; আর আমাকে মৃত্যু দিন যখন আপনি জানেন যে, মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট চাই গোপনে ও প্রকাশ্যে আপনাকে ভয় করা।
আপনার নিকট চাই সন্তুষ্টি ও ক্রোধ উভয় অবস্থায় সত্য কথা বলা; আপনার নিকট চাই দারিদ্র্যে ও প্রাচুর্যে ভারসাম্যপূর্ণ (মধ্যম) পন্থা। আপনার নিকট চাই এমন নে‘আমত, যা কখনো শেষ হবে না; আপনার নিকট চাই এমন নয়নাভিরাম বস্তু, যা কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না। আর আমি আপনার নিকট চাই (তাকদীরের) ফয়সালার পর সন্তোষ।
আমি আপনার নিকট চাই মৃত্যুর পর প্রশান্ত জীবন। আমি আপনার নিকট চাই আপনার চেহারার প্রতি দৃষ্টিপাতের স্বাদ, আপনার নিকট চাই আপনার সাথে সাক্ষাৎ লাভের ব্যাকুলতা; এমন যে, তাতে থাকবে না কোনো ক্ষতিকর কষ্ট কিংবা ভ্রষ্টকারী ফেতনা। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ঈমানের সৌন্দর্যে সৌন্দর্যমণ্ডিত করুন এবং আমাদেরকে হেদায়াত-প্রাপ্ত পথপ্রদর্শক বানান।'
[আল্লা-হুম্মা বি‘ইলমিকাল গাইবি ওয়া কুদরাতিকা ‘আলাল খালক্বি আহয়িনী মা আলিম্তাল হায়া-তা খাইরাল্ লী ওয়া তাওয়াফ্ফানী ইযা আলিম্তাল ওয়াফা-তা খাইরাল লী। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাশইয়াতাকা ফিল গাইবি ওয়াশ-শাহাদাতি,
ওয়া আসআলুকা কালিমাতাল হাক্বক্বি ফির-রিদা ওয়াল-গাদাবি। ওয়া আসআলুকাল কাসদা ফিল গিনা ওয়াল ফাক্বরি, ওয়া আসআলুকা না‘ঈমান লা ইয়ানফাদু, ওয়া আসআলুকা ক্বুররতা আইনিন লা তানকাতি‘উ, ওয়া আস্আলুকার-রিদা বা‘দাল কাদায়ি,
ওয়া আসআলুকা বারদাল ‘আইশি বা‘দাল মাওতি, ওয়া আসআলুকা লাযযাতান-নাযারি ইলা ওয়াজহিকা, ওয়াশ-শাওক্বা ইলা লিক্বাইকা, ফী গাইরি দাররাআ মুদিররাতিন ওয়ালা ফিতনাতিম মুদিল্লাহ। আল্লা-হুম্মা যাইইন্না বিযীনাতিল ঈমানি ওয়াজ‘আলনা হুদাতাম মুহতাদীন ]
- নাসাঈ ৩/৫৪, ৫৫, নং ১৩০৪; আহমাদ ৪/৩৬৪, নং ২১৬৬৬। আর শাইখ আলবানী সহীহুন নাসাঈ ১/২৮১ তে একে সহীহ বলেছেন।
Developed By Muktodhara Technology Limited