image

আজ, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ড্রাম বাজিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিকে সচেতন করছে সরকার, দায়িত্বে আছে একদল স্বেচ্ছাসেবক

জি. এম সাইফুল ইসলাম    |    ২১:৪৬, আগস্ট ১৯, ২০২১

image

'আমরা মাস্ক পরিনা। মাস্ক পরলে কেমন যেন লাগে। মুখ ঘামায়, ভাল মতো কথা বলা যায়না। অন্যরা আমার কথা বুঝেনা। আমরা টিকাও নিই না, টিকা নিলে মরি যাইবো,  বেঁচে থাকলেও অনেক রোগে ধরবো - ত্রিপুরা ভাষা থেকে একটু বাংলা বলার চেষ্টার ছলে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের অলিনগরস্থ নলখাঁ ত্রিপুরা পাড়ার রুশ্মি ত্রিপুরা। বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি সড়কের নয়টিলা মাজারের সামনে দিয়ে নেমে যাওয়া প্রায় চলাচল অনুপোযোগী পথ বেয়ে ৭ কিলোমিটার দূরে ১২০ পরিবার নিয়ে গঠিত এই অজপাড়া গাঁয়ের মানুষগুলোর নব্বই শতাংশই জানেনা করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার কথা। তারা ঠিকমতো জানেনা বিশ্বে প্রতিদিন এ ভাইরাসে কত লোক  আক্রান্ত হচ্ছে। কত লোক মারা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত কত লোক মারা গেছে। দেশে প্রতিদিন কত লোক আক্রান্ত হচ্ছে। কত লোক মারা যাচ্ছে। কতজন এ পর্যন্ত মারা গেছে। সরকার প্রদত্ত বিনামুল্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেয়ার কথা শুনেই তারা জানান টিকা নিলে মানুষ মরে যাবে। মাস্ক পরাতো দূরের কথা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া কিংবা তিনফুট দূরত্ব রেখে চলাফেরা করার ন্যূনতম মানসিকতা নেই তাদের। ঠিকমতো না জানা ও সচেতনতার অভাব থেকেই তারা কোন ধরণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেনা।

শুধু এই ত্রিপুরাপাড়ার মানুষই নয়, একই ইউনিয়নের ৮০ পরিবারের সাইবেনীখিল ত্রিপুরাপাড়া, সীতাকুন্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়া, হাটহাজারীর ৬৫ পরিবারের মনাই এবং ৫০ পরিবারের সোনাই ত্রিপুরা পাড়া, মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়াস্থ গহীন অরণ্যের প্রায় ২৫০ পরিবারের জুম্ম ত্রিপুরাপাড়া, ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের বড়বিলের যথাক্রমে ২০০ ও ৬০ পরিবার নিয়ে গড়ে ওঠা ত্রিপুরাপাড়া, একই উপজেলার খিরাম ইউনিয়নের বড়ইতলীর ৯৫ পরিবার নিয়ে গড়ে ওঠা চাকমা পাড়ার বাসিন্দারা করোনা ভাইরাসের মহামারি সম্পর্কে ছিলেন ধারণাহীন। স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিলনা তাদের মধ্যে।

খুঁজে খুঁজে এই মানুষগুলোর কাছে যাচ্ছে চট্টগ্রামের একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবী। ছেলেদের পাশাপাশি এ দলে রয়েছে নারী স্বেচ্ছাসেবীও । শুধু এসব দূর্গম এলাকার ত্রিপুরাপাড়া-ই নয়, হাটহাজারী উপজেলার গুচ্ছগ্রাম (আদর্শপাড়া), সন্দ্বীপপাড়া, ফটিকছড়ি উপজেলার খিরাম ইউনিয়নের মগকাটা গ্রাম, মিরসরাই উপজেলার নিজতালুকের ভূঁইয়া পাড়ার ঘরে ঘরে গিয়ে এই তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের দলটি পৌঁছে দিচ্ছে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার নানান বার্তা। স্বাস্থ্যবিধির তথ্য। শারীরিক ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার তথ্য। তথ্য প্রদান শেষে প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়া স্বাস্থ্যবিধি না মানা নারী বা পুরুষকে পরিয়ে দেয়া হচ্ছে  সুরক্ষিত কাপড়ের মাস্ক। হাতে হ্যান্ড মাইক, ড্রাম, ফেস্টুন, স্ট্যান্ড ব্যানার নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের এই দলটি মানুষকে করোনা মোকাবেলায় মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে নিয়ম মেনে হাত ধোয়া ও পরিস্কার থাকা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়গুলো বলার পাশাপাশি সবাই যেনো করোনা প্রতিরোধক টিকা গ্রহণ করেন সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করছে। তথ্য পেয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠা কোনো কোনো নারী-পুরুষকে নিবন্ধন করে দেয়ার মাধ্যমে সবাইকে নিবন্ধনের পদ্ধতি সম্পর্কে যেমন বলছে, তেমনি যারা নিবন্ধন নিতে অপারগ তারা যেনো পরিচয়পত্র নিয়ে সরকার নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্র থেকে কোভিড-১৯ সুরক্ষায় টিকা গ্রহণ করেন সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছে। সরকার দেশের সব মানুষকে বিনামূল্যে করোনার টিকা দেবে, গণটিকা কার্যক্রম ইতোমধ্যে সফলভাবে একদফা শেষ হয়েছে, বিদেশ থেকে প্রতিদিন কোন না কোন টিকা আসছে এসব তথ্য জানাচ্ছে কিছুটা পিছিয়ে থাকা এসব জনগোষ্ঠিকে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়াধীন গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কারপ্রাপ্ত সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'ভোরের আলো'কে। আর সার্বিকভাবে এতে সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এর চট্টগ্রাম অফিসের কমিউনিকেশন ফর ডেভেলপমেন্ট সেকশন। স্বেচ্ছাসেবকের দলটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে বলছেন। তাদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। কি করতে হবে বা কি বর্জন করতে হবে সে বিষয়ে পরিস্কার ধারণা দিচ্ছেন। টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে সেকথাও বলছেন। আধুনিকতা থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকা এসব পাড়া গাঁয়ের  মানুষ উৎসুক হয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের কথা শুনছেন। সচেতন হচ্ছেন।

ফটিকছড়ির ২১ নম্বর খিরাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, 'আমার ইউনিয়নটি খুবই দূর্গম এবং অনেক বড়। এখানে এই ধরণের প্রচার কার্যক্রম কখনোই হয় নি। দূর্গমতার কারণে সরকারি সেবাগুলো এখানে সবসময় পৌঁছাতে পারেনা। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এমন একটি উদ্যোগে সহযোগিতা করায়। ধন্যবাদ জানাই ইউনিসেফ বাংলাদেশকেও। 

ইউনিসেফ বাংলাদেশের সহযোগিতায় ‘শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক যোগাযোগ কার্যক্রম (৫ম পর্যায়)'  এর আওতায় ‘ড্রাম বাজিয়ে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় করণী বিষয়ক সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম’ টি পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন চট্টগ্রাম জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে চট্টগ্রামে চলছে এ কার্যক্রম।  বিগত দু’সপ্তাহ ধরে প্রথম পর্যায়ে সীতাকুন্ড, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, মিরসরাইয়ের ২০টি এলাকায় এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রাঙ্গুনিয়া, রাউজানসহ অন্য উপজেলার আরো ২২টি এলাকায়  সচেতনতামূলক এ প্রচার কার্যক্রম চালানো হবে।

লেখক : জি. এম সাইফুল ইসলাম, সহকারী তথ্য অফিসার, পিআইডি, চট্টগ্রাম।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

১৮:০৯, মে ১২, ২০২২

বজ্রপাত হচ্ছে-সাবধান হই


Los Angeles

১২:২৮, অক্টোবর ৭, ২০২১

“কয় জন ভালো নয়, সয় জন ভালো হয়”


Los Angeles

০০:৫৯, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১

বাংলাদেশের ফুটবলের কলংকিত দিন ১৯৮২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর !


Los Angeles

১১:৩৪, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১

প্রকৃতিতে নয়, কেবল কাগজের নোটেই আছে ‘জাতীয় পাখি দোয়েল‘


Los Angeles

২২:১২, সেপ্টেম্বর ১, ২০২১

ফুটবলের মরা গাঙে কি আবার জোয়ার আসবে ?


Los Angeles

২৩:০৮, আগস্ট ১৫, ২০২১

শাসক নয় বঙ্গবন্ধু আপাদমস্তক সেবক ছিলেন


Los Angeles

১৮:৫৭, আগস্ট ১৩, ২০২১

আড্ডা যেন এক উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়


Los Angeles

০০:০৪, আগস্ট ৮, ২০২১

বাইরে মুক্তির কল্লোল ও বন্দী একটি পরিবার


image
image