image

আজ, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বজ্রপাত হচ্ছে-সাবধান হই

জি.এম সাইফুল ইসলাম    |    ১৮:০৯, মে ১২, ২০২২

image

লেখক : জি.এম সাইফুল ইসলাম

জি.এম সাইফুল ইসলাম :: ‘‘চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষক মারা গেছে। তার নাম জমির উদ্দিন। বয়স ৪৫ । তার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের সুফিপাড়া গ্রামে। গত রোবাবার (৮ মে) বিকাল ৪টার দিকে ইউনিয়নের কাজীর দিঘি গুমাইবিলে এ ঘটনা ঘটে। বিকেলের দিকে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে কৃষক জমির আহত হয়।  পরে অন্য কৃষকরা তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন’’। এ খবরটি ছাপা হয়েছে ১০ মে মঙ্গলবার ‘‘দৈনিক প্রথম আলো” পত্রিকার চট্টগ্রামের খবর অংশে। শুধু প্রথম আলো নয়-জাতীয় এবং আঞ্চলিক অনেক পত্রিকায় প্রতিদিন বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর বের হয়। একই জেলায় একাধিক মৃত্যুর খবরও পাওয়া যায় পত্রিকার পাতায়। 

বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের মানুষের মধ্যে আরেক আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে বজ্রপাত । প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও বজ্রপাত হচ্ছে এবং মানুষ মারা যাচ্ছে। বিগত এক দশকে এর মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে ‘‘জাতীয় দুর্যোগ’’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া বিশ্বের ৫০০-এর অধিক হটস্পটের মধ্যে বাংলাদেশের তিনটি জেলা সিরাজগঞ্জ, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জকে ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রেখেছে নাসা।  

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী বিগত ১১ বছরে তথা ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সালে দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে ২৩৭৯ জন। আর ২০২১ সালে মারা গেছে ৩৬৩ জন। বজ্রপাতে মাঠেঘাটে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। ফলে বজ্রপাতের ফলে প্রাণ হারাচ্ছেন সংসারের কর্মক্ষম পুরুষেরা। এর ফলে বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন সময় বজ্রপাতে হতাহতদের মধ্যে নারী বা শিশু থাকলেও কর্মক্ষম পুরুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তারা কাজ করছিল কেউ মাঠে, কেউ নৌকা চালাচ্ছিল, হয়তো বা কেউ কোনো একটা গাছের নিচে বসে বিশ্রাম করছিল। গবেষণা বলছে, বজ্রপাতে মৃত্যুর দিক থেকে ৭২ শতাংশই কৃষক। 

 বজ্রপাত সাধারণত চার রকমের হয়ে থাকে। প্রথম হলো, বজ্রপাত সরাসরি আকাশ থেকে মাটিতে চলে আসে। এই ধরনের বজ্রপাতই বেশি প্রাণহানি ঘটায়। অপর তিনটি হলো- আকাশ থেকে আকাশে, এক মেঘ থেকে অন্য মেঘে এবং অন্যটি মেঘের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। উঁচু স্থানে বজ্রপাত বেশি হয়। 

পৃথিবীর বজ্রপাতপ্রবণ অঞ্চলের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল এই অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবেই বেশি বজ্রপাত হয়। এই অঞ্চলে বজ্র মেঘের সৃষ্টিই হয় বেশি। বজ্রমেঘ বেশি তৈরি হওয়ার কারণও প্রাকৃতিক। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় সুনামগঞ্জে। হাওরাঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে বজ্রপাতে। আর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় মার্চ থেকে জুন মাসে। তবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আবহাওয়াবিদদের মতে বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলে বজ্রপাতের সংখ্যা বেশি। কারণ সেখানে জলীয় বাষ্প বেশি হয়। সে কারণেই সিলেটের ওই অঞ্চলটিতে বজ্রপাতের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। জুন মাসকে বলা হয় বজ্রপাতের উর্বর মৌসুম। প্রতিদিন ঝড়োবৃষ্টির এসময় দেশের কোথাও না কোথাও বজ্রপাতে মানুষ প্রাণ হারায়। ঋতুভিত্তিক বিন্যাসেও বজ্রপাতের ধরনে পার্থক্য রয়েছে। মার্চ থেকে মে মাসে প্রায় ৫৯ শতাংশ, আর মৌসুমি বায়ু আসার সময়, অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৩৬ শতাংশ বজ্রপাত হয়। তবে মোট বজ্রপাতের প্রায় ৭০ শতাংশ হয় এপ্রিল থেকে জুনে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে আসার আগের দুই মাসে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বজ্রপাতের প্রকোপ অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি হয়। বর্ষাকালে রাঙামাটি, সুনামগঞ্জ ও চট্টগ্রাম বজ্রপাত সংঘটনের দিক থেকে প্রথম তিনটি জেলা। শীতকালে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট আর মৌসুমি-উত্তর ঋতুতে রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে বজ্রপাত সম্পর্কিত গবেষণা বলছে, বিশ্বের সর্বত্র বজ্রপাত সমহারে বাড়ছে না। পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে ৮০ লাখ বজ্রপাত সৃষ্টি হয়।

আবহাওয়াবিদদের মতে বজ্রপাতের অন্যতম কারণ হচ্ছে তাপপ্রবাহ ও পশ্চিমা লঘুচাপের মিশ্রণ। অর্থাৎ দক্ষিণের গরম বাতাস আর পশ্চিমা লঘুচাপের মিশ্রণের কারণে প্রচুর বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়। মেঘের মধ্যে থাকা ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জের গঠন ও পরিবহনের ফলে বজ্রপাত হয়। বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ কী, সেটি নিয়ে বাংলাদেশে তেমন কোনো গবেষণা নেই। তবে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন গবেষক বজ্রপাতের নানা কারণ তুলে ধরেন। কোনো কোনো গবেষক বলেন, তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের আশঙ্কা ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। 

গত বছরের (২০২১) জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে বজ্রপাতে কোন মৃত্যু ছিলনা। মার্চ হতে শুরু হয় ক্ষয়-ক্ষতি। মার্চ মাসে ২ , এপ্রিল মাসে ৭ , মে মাসে ১০২, জুন মাসে ১০৬, জুলাই মাসে ২২, আগস্ট মাসে ৭৩, সেপ্টেম্বর মাসে ২৫, অক্টোবর মাসে ২৬ জন বজ্রপাতে মৃত্যু বরণ করে। আবার নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে কোন মৃত্যু হয়নি। বিগত ২০২১ সালে দেশে মোট ৩৬৩ জন মারা যায়। গত ১১ বছরে অর্থাৎ ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে  মোট ২,৮৩৪ জন মৃত্যু বরণ করেছেন। এর মধ্যে ২০১১ সালে ১৭৯, ২০১২ সালে ২০১, ২০১৩ সালে ১৮৫, ২০১৪ সালে ১৭০, ২০১৫ সালে ২২৬, ২০১৬ সালে ৩৯১, ২০১৭ সালে ৩০৭, ২০১৮ সালে ৩৫৯, ২০১৯ সালে ১৯৮, ২০২০ সালে ২৫৫ ও ২০২১ সালে ৩৬৩ জন মারা যায়। 

যদিও বজ্রপাত ঠেকানো সম্ভব নয়-তবুও এতে প্রাণহানি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সরকার নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আবহাওয়া দফতর বজ্রপাতের আগাম সঙ্কেত জানতে ‘লাইটেনিং ডিটেকটিভ সেন্সর’ বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৮টি ডিটেকটিভ সেন্সরের যন্ত্রপাতি কেনা হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা দিয়ে। পরীক্ষামূলকভাবে এই সেন্সর বসানো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, নওগাঁর বদলগাছি, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনার কয়রা এবং পটুয়াখালীতে। আবহাওয়া দফতর বলছে, ৮টি সেন্সরে পুরো দেশের চিত্র উঠে আসবে। একেকটি সেন্সরের সীমা হচ্ছে ২৫০ কিলোমিটার। প্রতিটি সেন্সর থেকে এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত মনিটরিং করা যাবে। এক মৌসুমে (এপ্রিল থেকে জুন) দেশে কতবার বিদ্যুৎ চমকায় ও বজ্রপাত হয়, সেটিও সংরক্ষণ করা হবে। 

বাংলাদেশে ১৩টি নদীবন্দরে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় বজ্রপাতের সঙ্কেত ও সংখ্যা নিরূপণের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৬২ কোটি টাকা। এই ব্যবস্থা সঠিকভাবে চালু হলে ঝড়-বৃষ্টির সময় কোন জেলায় বজ্রপাত হতে পারে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবে আবহাওয়া দফতর। এমনকি ১০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা আগে বজ্রপাতের সঙ্কেত দেয়া যাবে। এছাড়া বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সরকারের হাওর অঞ্চলে টাওয়ার নির্মাণ পরিকল্পনা চলমান রয়েছে।

বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে সরকারি কার্যক্রম বিষয়ে ১৪ অক্টোবর ২০২১ তারিখে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে তালগাছ লাগানোর পাশাপাশি “লাইটার অ্যারেস্টার “ সংবলিত বজ্রপাত নিরোধক কংক্রিটের ছাউনি (শেল্টার) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। হাওর অঞ্চলসহ বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় এসব শেল্টার নির্মাণে ৩০০ কোটি টাকা ব্যায়ে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে হাওর এলাকায় ১ কিলোমিটার পর পর ১ হাজার বজ্রপাত নিরোধক কংক্রিটের শেল্টার নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, আরেকটি পদক্ষেপ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে “আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম”। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় এ মেশিন বসানো হবে। প্রাথমিকভাবে ৭২৩টি যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বজ্রপাতের ৪০ মিনিট আগেই সংকেত দেবে যন্ত্রটি। ফলে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে পারবে। মৃত্যুর হারও কমে আসবে। তিনি বলেন, যারা খোলা মাঠে কাজ করেন বা মাছ ধরেন তারাই বজ্রপাতে বেশি মারা যায়। তাদের জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শহর ও গ্রাম-সব স্থানেই জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে গত ২৩ মার্চ ২০২২ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগ আয়োজিত “ আর্লি ওয়ার্নিং  এন্ড আর্লি এ্যাকশন: লাইটেনিং ডিজাস্টার” শীর্ষক সেমিনারেও প্রতিমন্ত্রী উপরোক্ত কথার পুনরাবৃত্তি করেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বজ্রপাতসহ সব দুর্যোগে মৃত্যুর হার শূন্যে নামিয়ে আনতে সরকার বদ্ধ পরিকর। এ জন্য যা করা দরকার আমরা তা করবো। আমাদের লক্ষ্য ২০২৩ সালের মধ্যে দুর্যোগে প্রাণহানি শূন্যে নামিয়ে আনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন বিজ্ঞানীর বজ্রপাতের সম্ভাব্য এলাকা ও সময় সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা দেয়ার মড়েল আবিস্কার বিষয়ে তিনি বলেন, এ মডেল বাস্তবায়নে যে কোন ধরনের আর্থিক ও নৈতিক সমর্থন দিতে সরকার প্রস্তুত। তবে শুধু পূর্বাভাস দিলেই চলেবে না। এ সংকেত দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠির নিকট পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বলেন, এক কোটি তালগাছ রোপণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৩৮ লাখ তালগাছ লাগানো হয়েছে। 

বজ্রপাতের সময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এ বিষয়ে সরকার করণীয় নির্ধারণ করেছেন। সকলকে তা মেনে চলতে হবে। যথা- ১. এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রবৃষ্টি হয়, বজ্রপাতের সময়সীমা সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিটি স্থায়ী হয়। এ সময় ঘরে অবস্থান করতে হবে। ২.ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। অতি জরুরি প্রয়োজনে রাবারের জুতা পরে বাইরে বের হতে হবে। ৩. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। ৪. বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলা জায়গায় থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকতে হবে। ৫. যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ৬. উঁচু গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুটি ও তার বা ধাতব খুটি, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দুরে থাকতে হবে। ৭. কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর ডোবা বা জলাশয় থেকে দুরে থাকতে হবে। ৮. বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের  সাথে শরীরের সংযোগ ঘটানো যাবে না। সম্ভব হলে গাড়ি নিয়ে কোন কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ৯. বজ্রপাতের সম বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকা যাবে না। জানালা বন্ধ রাখতে হবে এবং ঘরের ভেতর বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দুরে থাকতে হবে। ১০. বজ্রপাতের সময় মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি ফ্রিজসহ সকল বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে ও এগুলো বন্ধ রাখতে হবে। ১১. বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতল যুক্ত ছাতা ব্যবহার করা যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করতে হবে। ১২. বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখতে হবে। নিজেরাও বিরত থাকতে হবে। ১৩. বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে এ সময় সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করতে হবে। ১৪. বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্ষ করা যাবে না। ১৫. প্রতিটি বিল্ডিং-এ বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে। ১৬. খোলাস্থানে অনেকে একত্র থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দুরে দুরে সরে যেতে হবে। ১৭. কোন বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে-তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে থাকতে হবে। ১৮. বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। বজ্র আহত ব্যক্তির শাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চালিয়ে যেতে হবে। 

যুক্তরাষ্ট্রে বজ্রপাতে বিপদাপন্ন পরিমাপের একটা জনপ্রিয় পদ্ধতির নাম ৩০-৩০ বা ‘৩০ সেকেন্ড ৩০ মিনিট’। ৩০ সেকেন্ড: বজ্রপাত দেখা ও শোনার সময় থেকে ৩০ সেকেন্ড গুনতে হবে। যদি দুটির মধ্যকার সময় ৩০ সেকেন্ডের কম হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হবে। অথবা আপনি যদি বজ্রঝড়ের শব্দ শুনতে পান, তবে নিরাপদ স্থানের সন্ধান করা সবচেয়ে নিরাপদ। কেননা, বজ্রপাত সাধারণত ঝড়ের সময় বা পরপরই হয়ে থাকে। ৩০ মিনিট: বজ্রঝড়ের শেষ শব্দ শোনার পর থেকে ৩০ মিনিট নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে হবে। নয়তো বজ্রপাতে মৃত্যু বা জখমের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তবে বজ্রপাতের ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা বা সতর্কতা অত্যাবশ্যক।
বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে সরকার কাজ করছে। তবে সরকারের একার পক্ষে সব সম্ভব নয়। আমাদেরকেও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা একে অন্যকে সচেতন করতে পারি। সাবধান করতে পারি। আবহাওয়ার অবস্থা বুজে ঘরের বাইরে বের হলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। বের হওয়ার পর বজ্রপাত শুরু হলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে পারি। তাতেও প্রাণহানি কমবে। এছাড়া বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিতে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতীয় দুর্যোগ বজ্রপাতকে আমরা সহনীয় মাত্রায় নিয়ে যেতে পারি।

লেখক : জি.এম সাইফুল ইসলাম, সহকারী তথ্য অফিসার, পিআইডি, চট্টগ্রাম।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

১৮:০৯, মে ১২, ২০২২

বজ্রপাত হচ্ছে-সাবধান হই


Los Angeles

১২:২৮, অক্টোবর ৭, ২০২১

“কয় জন ভালো নয়, সয় জন ভালো হয়”


Los Angeles

০০:৫৯, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১

বাংলাদেশের ফুটবলের কলংকিত দিন ১৯৮২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর !


Los Angeles

১১:৩৪, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১

প্রকৃতিতে নয়, কেবল কাগজের নোটেই আছে ‘জাতীয় পাখি দোয়েল‘


Los Angeles

২২:১২, সেপ্টেম্বর ১, ২০২১

ফুটবলের মরা গাঙে কি আবার জোয়ার আসবে ?


Los Angeles

২৩:০৮, আগস্ট ১৫, ২০২১

শাসক নয় বঙ্গবন্ধু আপাদমস্তক সেবক ছিলেন


Los Angeles

১৮:৫৭, আগস্ট ১৩, ২০২১

আড্ডা যেন এক উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়


Los Angeles

০০:০৪, আগস্ট ৮, ২০২১

বাইরে মুক্তির কল্লোল ও বন্দী একটি পরিবার


image
image