শিরোনাম
শিব্বির আহমদ রানা | ০২:০৫, মে ১১, ২০১৯
না বলুন-
#যৌতুককে
#কনে_পক্ষের_মৌসুমী_ফলকে
#রমজানে_ইফতার_সামগ্রী_পাঠানোকে
#ঈদের_পোশাক_পাঠানোকে
#আকীকার_ছাগল_গ্রহণকে
#কোরবানীর_ছাগল_প্রথাকে
[ আপনি সচেতন হলে মুক্তিপাবে দরিদ্র্য পরিবারগুলো, সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ হবে, পারিবারিক জীবনে শান্তি নেমে আসবে।]
চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু প্রথা প্রচলিত আছে যা কেবল জঘণ্যতাও বটে। প্রথা-প্রতিষ্টানের শুরুটা করে কিছু বিলাসী মানুষ ও মুর্খ সম্প্রদায়। এক পর্যায়ে প্রথাপ্রতিষ্ঠান গুলো সমাজকে ধীরে ধীরে কলুষিত করে তুলে। সমাজের একশ্রেনীর মানুষকে লুজার করে ছাড়ে। প্রথা হোক সমাজের মানুষের কল্যাণে এবং ধর্মের অনুসরণে। আমাদের দেশে গ্রামীণ সমাজে নানা কুপ্রথা চালু রয়েছে, যা খুবই অমানবিক পরিবেশের সৃষ্টি করে তুলে। যেমন-
#যৌতুক প্রথা! নারী শাসিত দেশে যৌতুকপ্রথা হাস্যকর ও বড় অমানবিক। এই প্রথা নারী সমাজকে ছোট করে দেখায়। সমাজের প্রত্যেক পরতে পরতে যৌতুক ছড়িয়ে গেছে। একটা নারীর বিয়ে আজ বিয়েতে সীমাবদ্ধ নয়। এখানে কনে পক্ষকে নানা উপকৌঢনের ব্যবস্থা করতে হয় খুড়া, আতুর নামীয় বরের জন্য! টিভি, ফ্রিজ, খাট-পালং, মোটরবাইক সহ নানা উপকরণও কনের সাথে দিতে হয় বর পক্ষকে! মানে কনের সাথে ওই পদার্থ গুলোই যেন তার বিয়ের প্রধান উপকরণ। এখানে বর একজন আপাদমস্তক অপদার্থ। যৌতুক পুরুষত্বের কলংক ও নারীর ভালোবাসাকে ছোট করে দেখার একটি জঘণ্য প্রথা। তাই আসুন, যুবসমাজের স্লোগান হোক- "যৌতুক দিবোনা, যৌতুক নিবোনা, যৌতুক ভালোবাসার অবমুল্যায়ণ।"
#কনের বাড়ীতে মৌসুমী ফল পাঠানোই দক্ষিণ চট্টগ্রামের একটি রীতিমতো জঘণ্য প্রথা প্রচলিত। মৌসুম ভিত্তিক আম, জাম, কাঠাঁল, লিচু, তরমুজ সহ নানা ফলের নানা সমাহার পাঠাতে হয়। না হয় বরপক্ষের লোকজন কনে পক্ষকে প্রেসারকুকারে রেখে কইমাছ ভাজার মতো অবস্থা করে ছাড়ে। কনের সংসারকে সুখে রাখার জন্য নিজে খেয়ে না খেয়ে বর পক্ষের জন্য মৌসুমী ফল পাঠাতে বাধ্য হয় কনে পক্ষের লোকেরা। বেচারা মেয়ের বাপ হওয়াতে যেন বড় পাপ করেছে। আর বরের পক্ষ তখন জনমের এতিম, ফকির, মিসকিন হয়ে যায়। হা-করে থেকে থাকে কবে ছেলের শ্বাশুড় পক্ষ মৌসুমী ফল ভ্যানে, টলিতে কিংবা ট্রাকে করে পাঠাবে! লজ্জা হয়না সমাজের বিবেকের কাছে এসব দৃশ্য দেখে। অনেকে এটাকে গর্ব করে প্রচারে হামাগুড়ি দেয় আমার ছেলের শ্বাশুড় বাড়ী মাশাহ্ আল্লাহ 'অনেক কিছুই পাঠাইছে! হাইরে পুত্রসন্তানের অভিবাবক কবে আপনারা মুক্তি দিবে এই জঘণ্য প্রথা থেকে? কবে আপনারা সভ্যসমাজে মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে?
#রমজানে ইফতার সামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হয় কনে পক্ষকে। অপর দিকে হা করে চেয়ে থাকে এতিমসম্প্রদায়ের বর পক্ষরা। আমাদের বর পক্ষরা কনে পক্ষের ইফতার সামগ্রীতে এতো সন্তুষ্টি কেন? রোজা রাখবেন আপনি কিন্তু ইফতার কেন অন্যজনের বস্তুতে? রোজাদারকে ইফতার করানোর অনেক ফজিলত। তা কিন্তু বরপক্ষ মনে করে এই কাজটাও কনেপক্ষের। রোজার শুরুতে বা মাঝখানে কনেপক্ষের কথা থেকে বাঁচানোর জন্য অপারগতাবসতও ইফতার সামগ্রী পাঠাতে হয় কনের পক্ষ থেকে। তবে এই প্রথা আমাকে ভাবিয়ে তুলে! বর পক্ষ হারামজাদা একবারও কি ভেবেছে সে আসলে যে ছোটলোকের পরিচয় দিচ্ছে? জনাব বরপক্ষ- রোজা যেহেতু আপনি রাখবেন সেহেতু ইফতার সামগ্রী আপনিই যোগার করবেন। প্রিয় বিলাসী ফ্যামিলি! আপনারা কিন্তু এসব প্রথার প্রতিষ্টাতা মাস্তান। আপনাদের লোক দেখানো প্রথা গুলো আজ সমাজে প্রভাব বিস্তার করছে। আপনাদের কারণে, দরিদ্য, গরীব পরিবার গুলো হিমশিম খাচ্ছে। তাই আসুন মন্দকে পরিহার করি। ইফতার পাঠানো প্রথাকে না বলি। নিজেররব্যক্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে এই প্রথা বর্জন করি। তাই সবার আগে নতুন প্ররজন্মের ডাক আসুক।
#ঈদের পোশাক পাঠানো আরেক অভিনব রেওয়াজ প্রচলিত আমাদের সমাজে। কনে পক্ষ থেকে বর পক্ষের আন্ডা-বাচ্চা, নাতি-নাতনীসহ সবার জন্য কাপড় কিনে পাঠাতে হয়। কি অাজিব প্রথা! কি অঘোষিত ফিতরা যাকাত দেওয়ার চমৎকার রেওয়াজ। আমি মনে করি, অনিচ্ছাকৃত, অমানবিক এই প্রথা যখন সমাজে সমাদৃত তখন কনে পক্ষ নিজেকে আত্মশুদ্ধি প্রদানের জন্য কাপড় পাঠানো পদ্ধতিকে ফিতরা হিসেবে ধরে নিতে পারেন! কারণ বরপক্ষের এসব আবদার কিংবা দাবী কিংবা রেওয়াজের পক্ষে সহমত ফিতরা গ্রহণের পর্যায়ে পড়ে। হ্যালো বর পক্ষ? আপনারা ছেলে সন্তানের মা-বাবা হয়ে কি এতিম হয়ে গেলেন? কেন কনে পক্ষের কাপড় নিয়ে আন্ডাবাচ্চা সহ বেজায় খোশমেজাজে মহাখুশি হোন। জঘণ্য এই প্রথাকে নিন্দা জানানো ছাড়া আমার কোন অভিদা নেই মানবিক চিত্তে। তাই কনে পক্ষকে বাধ্য করে, কিংবা সামাজিক ইস্টিটাসের কথা ভেবে এপ্রথাকে জিইয়ে রাখবেন না। এতে বরপক্ষেরই সবচেয়ে বেশী অপমানিত হওয়ার কথা। আসুন ঈদের পোশাক প্রদানে কনে পক্ষকে প্রেসার দিয়েন না। ভাবতে শিখুন- আমরা মানুষ, অামরা সেরাজীব।
#কনের সন্তান হলে তার আকীকা দেওয়ার জন্য ছাগল পাঠাতে হয় কনে পক্ষ থেকে! আপনার সন্তানের আকীকা কেন শ্বশুরালয় দিবে? কেন বা তাদের থেকে ছাগল দাবী করবে? কনের পরিবার মেয়ের জন্মদিয়ে কি পাপ করেছে? নাকি কনের বিয়ের পর ছাগল উৎপাদনের ক্ষেত্রও তৈরি করতে হবে? এই অসভ্য প্রথা থেকে বেরীয়ে আসুন জনাব পিত্রালয়!
#কোরবানীর ছাগল প্রথাও প্রচলিত আছে আমাদের সমাজে। আচ্ছা কোরবানী দিবেন আপনি, ছাগলটা কেন বর পক্ষের? এতে কি আপনারা (বরপক্ষ) কসাইয়ের দায়িত্ব নিয়ে ছাগল জবাই দিয়ে বরপক্ষের হয়ে কোরবানী দিচ্ছেন না? বেরিয়ে আসুন এসব নোংরা প্ররথা থেকে। আপনি/আপনার ছেলের অভিবাবক হয়েছেন মানে এই নয় যে, পুলিশের ভাষায় কনে পক্ষের সবাই 'এই শালা!' আবেগের দিন শেষ এখন বিবেকের দিন শুরু। সভ্যতার চরম উৎকর্ষতায় এসব জঘণ্য প্রথা থেকে বেরিয়ে আসুন।
ভালোবাসা আর দাবী এক নয়। ভালোবেসে কিছু গ্রহণ করা আর প্রথার ঘোলক ধাঁধায় পেলে কিছু গ্রহণ করা মানে চরম ডাকাতি। উপরে বর্ণিত সব কর্মই বরের ডাকাতি ছাড়া বৈ কিছুই নয়। সমাজকে কলংক মুক্ত করতে এসব প্রথাকে না বলুন, ঘৃণা দেন মনপ্রান থেকে, এড়িয়ে চলুন সর্দি কাশির মতো। দরিদ্র বাবাদের আজাদ করুন এসব জঘণ্য প্রথা বন্ধ করে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
Developed By Muktodhara Technology Limited