শিরোনাম
ইকবাল কবির, ঢাকা ব্যুরো চীফ | ১৭:১৯, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১
বলছিলাম, কুখ্যাত খুনী গালকাটা কামালের গ্রেফতারের কথা। আটকের পর তেজগাঁও শিল্প এলাকার ভেতর থেকে হাতে কড়া পরিয়ে গালকাটা কামালকে জিপে তুলে আকরাম হোসাইন নিয়ে এলেন তৎকালীন পুরান ঢাকার লালবাগ থানায়। আকরাম হোসাইনের বিশ্বস্ত টিমের সদস্যরা ছাড়াও তাকে গ্রেফতারে সহযোগিতা করেছিলেন মহাখালী পুলিশ বক্সের সার্জেন্ট ইব্রাহিম। তখন ঢাকায় পুলিশের মাত্র দু’জন ডিসি ছিলেন। উত্তর এবং পশ্চিম। অর্থাৎ ডিসি নর্থ, ডিসি সাউথ। ডিসি সাউথ ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসাইন। কুখ্যাত খুনী গালকাটা কামালের গ্রেফতারের সংবাদটি বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হয় তার কাছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে গালকাটা কামালকে দুপুর ১১টার দিকে লালবাগ থানা থেকে মিন্টু রোড ডিবি অফিসে নিয়ে আসা হয়। চৌকস পুলিশ অফিসার আকরাম হোসাইন গত এক সপ্তাহে টিকাটুলি, গোপীবাগ ও সূত্রাপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ যুবদল নেতা জাফর ও রানাকে হত্যার অভিযোগে গালকাটা কামালকে গ্রেপ্তার করেন। প্রথমে সে অস্বীকার করলেও পরে সব স্বীকার করতে বাধ্য হয়। খুনের পর কোথায় তাদের লাশ ফেলা হয়েছে তা জানতে চান। এছাড়া সূত্রাপুরের ব্যবসায়ী তারই বন্ধু ফিরোজ আলম মামুনকে কেন খুন করা হয়েছে তাও জানতে চান।
দুর্দন্ড প্রতাপশালী গালকাটা কামালের সামনে যখন একের পর হত্যা কান্ডগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরছিলেন আকরাম হোসাইন, তখন গালকাটা কামাল মাথা নিচু করে বসেছিলেন। কোন প্রশ্নেরই উত্তর দিচ্ছিলেন না। তাকে এ-ও জানানো হয় এখন রক্ষা করতে কোন মন্ত্রী- নেতা আসবে না। পুরান ঢাকার সন্ত্রাসের মূর্তিমান আতংক গালকাটা কামাল অনেকটা অসহায় হয়ে পরেন। এরপর আস্তে আস্তে মুখ খুলতে শুরু করেন। তখন সন্ত্রাসীদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বের হয়ে বন্দুকযুদ্ধের গল্পের সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে শুরু হয়নি। তাই বিকেলেই তাকে নিয়ে বের হন টিকাটুলির অভয় দাশ লেন ও শহীদ নবী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। যেটাকে সে খুনখারাবির আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করতেন। এক সময় তার প্রিয় এই এলাকায় যখন হিংস্র বাঘের মতো দুই হাতে অস্ত্র উঁচিয়ে বাইকে চালিয়ে মহড়া দিতেন। যার সঙ্গেই শত্রুতা থাকতো তাকে প্রকাশ্যে গুলি করতেন অথবা তুলে নিয়ে যেতেন। সেই সম্রাজ্যেই আজ হিংস্র দানবটির হাতে হ্যান্ডকাপ। যে কোমড়ে থাকতো অস্ত্র সেই কোমড়ে বাঁধা মোটা রশি। পুলিশের গাড়ি থেকে নামানোর সময়ে অনেকের কাছেই বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই ছিলো সন্ত্রাসী জীবনের উল্থান-পতনের বাস্তবতা।
যুবদল নেতা জাফর, রানাসহ আরো অনেককই হত্যার পর শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে গানি ব্যাগে ভরে অভয়দাশ লেনের যে পুকুরটিতে ফেলে দিয়েছিলেন তা দেখিয়ে দেয় গালকাটা কামাল। খবর দেয়া হয় ফায়ারসার্ভিসের ডুবুরি দলকে। গালকাটা কামালের অসহায়ত্বের দৃশ্যটি একনজর দেখতে উৎসুক জনতা জড়ো হতে থাকে। ফায়ারসার্ভিসের ডুবুরি দল গালকাটা কামালের দেখানো জায়গাগুলোর পানি"র নীচে ডুব দিয়ে দিয়ে তল্লাশি চালাতে থাকে মানুষের কাটা মস্তকের সন্ধানে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত।একে একে গানি ব্যাগ উদ্ধার করে নিয়ে আসছে ফায়ারসার্ভিসের ডুবুরিরা। ভেতর থেকে বের করা হচ্ছে মানুষের কাটা মস্তক।এভাবেই তিনটি মস্তক উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে দুটি মাথা ছিলো সপ্তাহ খানেক আগে খুন করা আব্দুল খালেক রানা আর জাফরের।আরেকটি বেশীদিনের পুরনো মাথার কংকাল। রাতেই ডিবি অফিসে জিজ্ঞাবাদে গালকাটা কামাল তারই বন্ধু সূত্রাপুর থানা যুবদলের নেতা ফিরোজ আলম মামুন কেও খুনের কথা স্বীকার করেন। সূত্রাপুরে তার সঙ্গে থাকা জোড়া খুনে তার সঙ্গী আবুল কাশেম মানিক, মহিউদ্দিন আহম্মেদ ঝিন্টু ও শহীদ হোসেনসহ অর্ধডজন সহযোগীর নাম জানায়।
আকরাম হোসাইন তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালান। বেশ কিছু অস্ত্র ও কয়েকজনকে আটক করা হয়। এর মাস দুই পরই দেশে সেনাশাসন জারি করেন হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। বিচারপতি সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা চ্যুত করে দেশ শাসনের দায়িত্ব নেন সেনাপতি এরশাদ। গালকাটা কামাল, দিলা, মোখলেস, লিয়াকত, ইমদুসহ অর্ধডজন কুখ্যাত খুনীর সামরিক আদালতে বিচার শুরু হয়। ঢাকার ৯নং বিশেষ সামরিক ট্রাইবুনালে সূত্রাপুরের জোড়া খুনসহ একাধিক হত্যা মামলায় গালকাটা কামাল, আবুল কাশেম মানিক, মহিউদ্দিন আহম্মেদ ঝিন্টু, শহীদ হোসেনের ফাঁসির আদেশ হয়। গালকাটা কামাল গ্রেফতার থাকায় তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
একই মামলার পলাতক আসামী আবুল কাশেম মানিক সম্ভবতঃ ১৯৮৭ সালের ৫ ডিসেম্বর পলাতক অবস্থা থেকে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যান। পরে এরশাদ সরকারের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রাণ ভিক্ষা চাইলে প্রেসিডেন্ট এরশাদ ক্ষমা করে দেন। মানিক জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। অপর আসামী মহিউদ্দিন আহম্মেদ ঝিন্টু সুইডেন ২২ বছর রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকার পর থেকে ২০০৫ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির শাসনামলে সুইডেন থেকে মৃত্যুদন্ডের দন্ড মাথায় নিয়ে দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করেন।
অভিযোগ আছে ওই সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আইনমন্ত্রী থাকাকালে সুইডেন সফরে গেলে তার থাকার খাওয়া,আতিথিয়েতা দেখবাল করেছিলেন মৃত্যুদন্ড পাওয়া আসামি মহিউদ্দিন আহম্মেদ ঝিন্টু। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের কাঁধে ভর করেই ফাঁসির দন্ড পাওয়া ঝিন্টুর প্রাণ ভিক্ষার ফাইল পৌঁছে যায় প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের কাছে। প্রেসিডেন্টের ক্ষমায় ঝিন্টু মাত্র ১০ দিন কারাভোগ করেই ১৩ জানুয়ারী ২০০৫ মুক্তি লাভ করেন। পুরান ঢাকার জামদানি দিলা ও মোখলেসও এরশাদ সরকারে প্রাণ ভিক্ষার অনুকম্পায় কারা জীবন থেকে মুক্তি লাভ করেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য গালকাটা কামালের। আকরাম হোসাইনের জালে ধরা পরে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দড়িতে ঝুলে মৃত্যু দন্ড কার্যকরের মাধ্যমে তার জীবনাবসান ঘটলো।
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ দুর্ধর্ষ খুনি গালকাটা কামাল গ্রেফতারের শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনি
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ পুরান ঢাকার এক মূর্তিমান আতংকের নাম গালকাটা কামাল
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ আইজিপির অধীনস্থ কর্মকর্তা হলেও মূলত আমরা পাবলিক সার্ভেন্ট
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ রুবেল খুনের অভিযোগে জেলে যাওয়ার পেছনের ঘটনা
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ ছুটিতে থেকেও রুবেল হত্যার আসামি হয়েছিলাম
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ ফ্রীজ কিনেই কারাবন্দী হলেন সুইডেন আসলাম
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ গ্রেনেড হামলায় পন্ড করা হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর খুনির জনসভা
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ ঢাকার অপরাধ জগতের ত্রিরত্নের কথা
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ ডাকাত মকিম গাজী আমাদের বোকা বানিয়ে পালাতে চেয়েছিলো
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চুকে খুন করতেই ফ্লাট ভাড়া করা হয়
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ প্রেমিকাকে নিয়ে ছবি তুলতে এসে আটক হলেন বুদ্দু
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ বাড়ির ক্রেতা সেজে বাচ্চু ডাকাতকে আটক
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ দেশের প্রথম হেরোইনের চালান আটক
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ ১৯ ঘন্টার অভিযানে আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের মালামাল উদ্ধার
এসি আকরামের জবানবন্দি : উদ্ধার হলো জিল্লুর রহমানের মেয়ের জামাতার ল্যাপটপ
এসি আকরাম হোসাইনের জবানবন্দিঃ একটানা ১৭দিনের অভিযানে পুরান ঢাকার শিশু রাজু উদ্ধার
এসি আকরামের জবানবন্দিঃ ৯৬ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানে টাকাসহ ব্যাংক ডাকাত গ্রেপ্তার
গোয়েন্দা পুলিশের এক মুকুটহীন সম্রাটের নাম এসি আকরাম
চোখ রাখুন সিটিজি সংবাদ ডট কম এক্সক্লুসিভেঃ এসি আকরামের জবানবন্দি
Developed By Muktodhara Technology Limited