শিরোনাম
ফজলুর রহমান | ২১:৪৩, জুলাই ১৪, ২০২০
"ভয় দেখিয়ে কাজ আদায় করা যায়, ভালোবাসা নয়"- নাটক-সিনেমায় বহুল চর্চিত শব্দ এটি। তবে বাস্তবতা বিবর্জিতও নয়। বরং নানাভাবে প্রতিফলিত।
এই করোনাকালে সংক্রমিত হয়ে বিপদে পড়ার ভয় পৃথিবীতে মানুষকে তাড়া করছে। ভয়মুক্তির দিশা মিলেনি।
বেশিরভাগ সময় মানুষ ভয় পেলে 'ফাইট অর ফ্লাইট' অর্থাৎ ভীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়ে সেটা সামলানোর চেষ্টা করে। অথবা সে পরিস্থিতির মুখে পালিয়ে যায়। বা সম্পূর্ণ এড়িয়ে যায়।
সেই হিসবে কেউ কাতরাচ্ছে। কেউ সামলাচ্ছে। কেউ পালাচ্ছে। করোনা থেকে সুরক্ষায় আপাতত ভয়টাই বেশি জয়ী বিশ্বে।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের মনোবিজ্ঞানী এবং ভীতি সংক্রান্ত এক বইয়ের লেখক ড. ওয়ারেন ম্যানসেল বলছেন, "ভয় হলো অভিব্যক্তিমূলক, এটা জীববিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত এবং এর মূল ব্যাপার হচ্ছে টিকে থাকা।যেকোনো ধরণের ভীতি বা ঝুঁকির মুখে পালানো বা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের শরীরের একটা প্রস্তুতি থাকা দরকার।"
সমাজবিজ্ঞানী ড. মারগী কের বলেছেন, "ভয়ের কারণ দ্রুত শনাক্ত করা এবং পরিত্রাণের উপায় বের করা জরুরী। এটাই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।"
এমনই ভয়ে ভরা এক ভয়াল সময়ে আমরা। ভালোবেসে পরিস্থিতি মোকাবিলার অবসর মিলছে কম। তারপরও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমলে নিয়ে জীবন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারাতেই মুক্তি দেখছে বিশ্ব।
আসলেই Live for life or Life to live? এই হিসাব করতে গিয়ে নিজেদের অবমুল্যায়ন করা উচিত হবে না। আমাদের সময় সীমিত। তাই প্রাপ্ত জীবন নিয়ে খুশিমনে সুন্দর সময় পার করে যেতে হবে। প্রতিটা দিন আলাদা। প্রতিদিনই সুন্দর। এক একদিনের জন্য বাঁচতে পারলে পুরো জীবনটা সুন্দরভাবে কাটতে পারে। কঠিন পরিস্থিতিকে সহজভাবে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।
সহজ কথায় বিদ্যমান ভয়কে জয় করে জীবনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবেই। এরইমধ্যে বদলে যাওয়া জীবন দেখতে শুরু করেছি আমরা। এই যেমন করোনাকালে ক্রীড়াঙ্গনও ফিরেছে পরিবর্তিত রূপে।
ধীরে ধীরে সব ক্রীড়া মাঠে ফিরলেও খেলোয়াড় চিরচেনা পরিস্থিতির বাইরে এসে নতুন বিষয়গুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত হচ্ছে। ফুটবল খেলতে নামার আগে দুই দলের খেলোয়াড়রা একে অপরের সঙ্গে করমর্দন করতেন। কিন্তু এখন আর তা করতে পারছেন না। অনেকে আগের মতোই অভ্যাসবশত হাতে মেলানোর জন্য গিয়েও পিছিয়ে আসছেন। ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসি নিষিদ্ধ করে করেছে, স্যালাইভা বা লালা দিয়ে বল শাইন করা। বাস্কেটবলে দেখা যেত স্কোর করার পর ‘হাইফাইভ’ করতে। কিন্তু এখন আর তা দেখা যাবে না। টেনিস কোর্টে দেখা যেত খেলোয়াড়রা ঘাম মুছে টাওয়েলটা নিক্ষেপ করে দিত বয়দের দিকে। কিন্তু এখন আর তা করতে পারবেন না খেলোয়াড়রা। গলফে দেখা যেত, শট ভালো হলে কিংবা বার্ডি বা ডাবল বার্ডি হলে খেলোয়াড়রা তাদের সঙ্গে থাকা কেডির সঙ্গে উচ্ছ্বাসে হাত মেলাতেন। কিন্তু এখন আপাতত আর তা দেখা যাবে না। বিশ্বের অনেক দেশে খেলাধুলা চালু হলেও গ্যালারিতে তেমন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না দর্শককে।
খেলার মাঠের মতো জীবনযাপনটাও নতুন করে গড়ে চলার সময় এখন। স্রেফ ভয় থেকে নয়, সুস্বাস্থ্যের জন্যও এই নতুন ধাঁচের লাইফস্টাইল দরকার।
বর্তমানে গবেষকরা সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে অনেক কিছুই প্রকাশ করেছেন। করোনার মতো বিপদ জয়ে যা বড় ভূমিকা পালন করে। দেখা যায়, বিজ্ঞানসম্মত উপায়েই এক মাসে জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন আনা যায়, যাতে আগের তুলনায় অনেক সুস্থ হয়ে যাওয়া সম্ভব। এক ধাক্কায় একদম কেউ সুস্থ হয়ে যাবেন না হয়তোবা। কিন্তু নিজেকে নিয়ে অনেক ভালো বোধ করা যায়। উপায়গুলোর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত ব্যায়াম করা, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত এবং অতি নোনতা খাবার বর্জন, ফল-সবজি-বাদামসহ ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া, সাত-আট ঘণ্টার নিয়মিত ও নিরাপদ ঘুম, পর্যাপ্ত পানি পান, ধ্যান বা প্রার্থনা করা, ইতিবাচক থাকা ইত্যাদি। এসব অভ্যাস গড়ে তোলা যায় নিজেকে সুস্থ ও সুখী করে তোলার জন্য। আর এসব অভ্যাস ধরে রাখাটাও জরুরি। মূলত, ভীতি থেকে নয়, ভালোবেসেই এই নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা দরকার।
দীর্ঘদিনের লাইফস্টাইলে সংশোধনী এনে নতুন আদলে গড়তে একটু কঠিন হতে পারে। তবে অসম্ভব নয়। এই কঠিনকে ভালোবাসার আরেক নামই তো জীবন! কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ জীবন সায়াহ্নে লেখা কবিতায় সে ছবক দিয়ে গেছেন আমাদের-
"রূপনারানের কূলে
জেগে উঠিলাম,
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ,
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,
সে কখনো করে না বঞ্চনা।"
লেখক : ফজলুর রহমান, সহকারী রেজিস্ট্রার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।
সুস্থ আছেন মানে আপনার মাথায় রাজমুকুট
মনে নেয়া মেনে নেয়া মানিয়ে নেয়া
করোনাকালে যেসব আনন্দের অভাব খুব অনুভূত হচ্ছে
২০৫০ সালের মধ্যেই মানব সভ্যতায় নতুন মোড় !
উঠতি বয়সে অপরাধ: কিশোরদের আরো কিছু কাজ দিন
Developed By Muktodhara Technology Limited