image

আজ, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিআরবিতে যদি হয় হাসপাতাল, চট্টগ্রাম হবে উত্তাল

এসএম ওয়াহিদ রনি    |    ২৩:৩৪, জুলাই ১৫, ২০২১

image

রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনির বাসা ভেঙে ফেলা হচ্ছে হাসপাতালের জন্য

পূর্ব রেলের সদর দপ্তর চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) একটি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিআরবি’র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নষ্ট করে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে পুরো চট্টগ্রাম যখন ঐক্যবদ্ধ তখন রেলের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, সিআরবি’র সৌন্দর্য্য অক্ষুন্ন রেখেই গোয়ালপাড়ার দিকে এ হাসপাতাল তৈরী করা হবে। কিন্তু গোয়ালপাড়াতো রেলের সম্পদ নয়, এটা ব্যক্তিগত বসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে কার জায়গায় হাসপাতাল তৈরী করবে রেল ? প্রশ্ন চট্টগ্রামবাসীর।

প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক কারণে সেখানে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিকরা বলছেন, আজগুবি এ সিন্ধান্ত থেকে সরকার বা রেল কর্তৃপক্ষ সরে না আসলে বৃহত্তর আন্দোলন বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে তারা বাধ্য হবে।

রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মচারী নেতাদের দাবি, গুরুত্বপূর্ণ সিআরবি ভবনের পাশে এবং রেল কর্মচারীদের কোয়ার্টার সরিয়ে হাসপাতাল করা হলে রেলের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে।

তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, সিআরবির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত যে অংশে শতবর্ষী গাছ, শিরিষ তলা, সেখানে হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে না। হাসপাতালের জন্য নির্ধারণ করা স্থানে কেবল একটি শতবর্ষী গাছ আছে, যা রক্ষা করা হবে।

অবিভক্ত ভারতের বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম রেলওয়ের সদর দপ্তর সিআরবি ভবনটি হয় ১৮৯৫ সালের। শতবর্ষী বৃক্ষ ঘেরা পাহাড়, টিলা ও উপত্যকা ঘেরা এ এলাকাটি জনসমাগমের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। আশেপাশের পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণির আবাস।সড়কের ডান পাশে পাহাড়ের ওপর সিআরবি ভবন আর বাম পাশে বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল। সিআরবি ভবনের সামনের মোড়টি সিআরবি সাত রাস্তার মোড় নামে পরিচিত। এখান থেকে সাতটি ছোট বড় রাস্তা বিভিন্ন দিকে চলে গেছে।

সিআরবি মোড় থেকে টাইগার পাস, কদমতলী ও জিএম বাংলোমুখী সড়কগুলোর দুপাশে আছে শতবর্ষী রেইন ট্রি ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। টাইগারপাস ও জিএম বাংলোমুখী সড়কের মাঝে বড় মাঠে থাকা শিরীষ গাছের তলায় প্রতি বছর হয় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান।সড়কের বাম পাশে বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল, পাশের খালি জমি, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি রোড এবং এই রাস্তাটির দুপাশে থাকা প্রায় ৫০টি কর্মচারী কোয়ার্টার (একতলা সেমিপাকা) নিয়ে মোট ছয় একর জমিতে হাসপাতালটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভায় প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পিপিপি প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় সিসিইএ সভায়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। এরপর গত বছরের ১৮ মার্চ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সাথে সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তারপর চলতি বছরের শুরুতে নির্ধারিত জমির সামনে প্রকল্পের একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়।

এই প্রকল্পের পরিকল্পনা ও সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কর্তৃপক্ষ (পিপিপি)। কার্যনির্বাহী সংস্থা বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করবে ইউনাইটেড চট্টগ্রাম হাসপাতাল লিমিটেড।

প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১২ বছর। প্রকল্পের আওতায় ১শ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ, ৫০ আসনের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং দুই ধাপে মোট ৫শ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে। ৫০ বছর পর প্রকল্পের মালিকানা হবে রেলওয়ের।

ইতোমধ্যে প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট এবং প্রিমিয়াম বাবদ রেলওয়েকে প্রায় আট কোটি টাকা পরিশোধও করেছে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ। চুক্তি অনুসারে, চুক্তি স্বাক্ষরের তিন বছর পর প্রথম বার্ষিক ফি হিসেবে রেলওয়ে পাবে ৭৫ লাখ টাকা। চতুর্থ বছরে ৭৫ লাখ টাকা। পঞ্চম ও ষষ্ঠ বছরে দেড় কোটি টাকা করে। পরবর্তী সময়ে চুক্তির মেয়াদকাল পর্যন্ত তিন বছর পরপর ১০ শতাংশ হারে ফি বাড়বে।

রেলের জমি, অন্যের হাসপাতাল : সম্প্রতি রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনির ১৫-২০টি বাসা ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় থাকা বাকি বাসাগুলোও সরানোর প্রক্রিয়া চলছে। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলেন, “হাসপাতালে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। হাসপাতাল করতে চাইলে রেলের অনেক অব্যবহৃত জমি আছে। কুমিরা রেলওয়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ৩৫ একর জমি আছে। সেখানেও করতে পারে।”

প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় একটি শতবর্ষী রেইনট্রি ছাড়াও কিছু বড় গাছ আছে। এছাড়া রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনিতে একটি শহীদ মিনার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ নজির আহম্মদের কবর আছে।

“সিআরবি, সাত রাস্তার মোড় ও টাইগার পাস ঘিরে থাকা পাহাড় ও উপত্যকায় গাছপালামণ্ডিত এলাকাটি চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসেবেই গণ্য। হাসপাতালের কারণে জনসমাগম বৃদ্ধি ও ক্লিনিক্যাল বর্জ্য সিআরবি এলাকার নির্জনতা ও পরিবেশ ঝুঁকিতে ফেলবে।” এছাড়াও গড়ে উঠবে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যেটি সিআরবির পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।

সিআরবিতে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে চট্টগ্রামের আপামর মানুষ এককাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের অভিমত, পরিবেশের ক্ষতি না হলেও সিআরবিতে কেন প্রাইভেট হাসপাতাল ? কেউ প্রাইভেট হাসপাতাল করতে চাইলে যেকোন জায়গায় জমি কিনে করতেই পারেন।

ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের সকল রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের নাগরিকদের পক্ষ থেকে এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে স্পষ্ট অবস্থান জানান দিয়েছে। তারপরও ব্যক্তিগত লোভের কারণে কেউ যদি এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় অনড় থাকে, তা হবে আত্মঘাতি।

বিশ্লেষকরা চট্টগ্রামের সিআরবিতে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিরোধীতায় সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে ওঠবে বলে ধারণা করছেন। যা চট্টগ্রামসহ পুরো দেশকে উত্তাল করে দিবে বলেও তাদের ধারণা।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

১২:৪১, মে ১৩, ২০২২

এক হাজার অটোরিক্সা ডাম্পিং করলো চট্টগ্রাম বিআরটিএ


image
image