শিরোনাম
ফজলুর রহমান | ২৩:৫৪, ফেব্রুয়ারী ৮, ২০২১
"শক্তি কখনো শারীরিক গঠন থেকে আসে না,শক্তি আসে ইচ্ছাশক্তি থেকে।"- বলেছেন মহাত্মা গান্ধী। ইংরেজি প্রবাদটি তো আরো বেশি চেনাজানা "Where there is a will, there is a way", মানে- ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।
সবচেয়ে বড় অজুহাতের চেয়ে বড় ইচ্ছা রাখার নামই ইচ্ছাশক্তি। এছাড়া ইচ্ছাশক্তি বলতে বুঝায়, দু’টি ভিন্ন মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব। একটি হলো, যে কিছু পরিবর্তন আনতে চায়। অপরটি হলো, যে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে চায় না। এই দু’ইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বে জিতিয়ে দেয় ইচ্ছাশক্তি।
সফলতা আর ইচ্ছাশক্তি যেন একই সুতোয় গাঁথা। ইচ্ছাশক্তি থাকলে জীবনে হেরে যাওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।
মনোবিদরাও মনে করেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যায়। মাঝে মাঝে নানা কারণে ইচ্ছাশক্তি হারিয়ে যায়। কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজের সামর্থ্য কাজে লাগালে ঠিকই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও বলছে, রোগ জয়ের অন্যতম বড় মহৌষধ হলো ইচ্ছাশক্তি। ঔষধ এর সাথে সাথে মনও ক্যান্সারসহ অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করবার জন্য বড় ভূমিকা রাখে। সুস্থ হবার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে আরো বেশি বেঁচে থাকবার জন্য ইচ্ছা পোষণ করা এবং লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা।
একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রেঙ্গুনের কম্পিউটার স্টাডিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর টিন মে লুইন, যিনি ২০ বছর ধরে বড় বড় বিরুদ্ধে লড়ে চলেছেন, তার মতে, "আমাদের মনের অবস্থ্যা চিকিৎসার জন্য খুবই জরুরি. যদি আমরা মনে করি যে আমরা সুস্থ হবো, তবে আমরা সুস্থ হবো. আমাকে বিশ্বাস করুন , যদি আপনি মনে করেন আপনি সুস্থ হবেন না, তাহলে আপনি সুস্থ হবেন না, আমি একটি সুখী জীবন যাপন করতে চাই। আমি যখন ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগে ভুগছিলাম তখনও আমি আমার সুখকে কেড়ে নিতে দেইনি।"
'মার্ক ইংলিশ’ একজন নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী, যিনি কৃত্রিম পা নিয়ে জয় করেছেন মাউন্ড এভারেস্টের মতো বিশ্বের সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গকে। মার্ক ইংলিশ ২৪ বছর আগে পর্বত আরোহন করতে গিয়ে দু’টি পা হারান। কিন্তু বিন্দুমাত্রও ইচ্ছা ও মনোবলের কমতি দেখা দেয়নি কখনও তার মাঝে। একের পর এক পর্বত চূঁড়োয় উঠে ‘ইংলিশ’ প্রমাণ করেন যে, প্রতিবন্ধীরাও এমন কিছু করতে পারেন- যা গৌরব ও সম্মান বয়ে আনে সামগ্রিক জীবনে।
১৯৮২ সালে ইংলিস নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ পর্বত-‘মাউন্ড কুকে’ আরোহন করতে গিয়ে তুষারে আটকা পড়ে তার পায়ের পাতা থেকে হাঁটু পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। কেটে ফেলতে হয় তার পা’ দু’টি। কিন্তু তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি এই কৃত্রিম পা’ নিয়েই ২০০৪ সালে তিব্বতের ৮ হাজার ২০১ মিটার উঁচু পর্বত মাউন্ড চোউর চূঁড়ায় পৌঁছে দেয় তাকে। আর এ অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ঘটান ইংলিশ (৪৭), ২০০৬ সালে। তিনি ৪০ দিনের কঠোর ও কঠিন পরিশ্রমের পর এই বিরল রেকর্ডটি সৃষ্টি করেন। যা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়। যা বিশ্ববাসীর জন্য হয়ে থাকলো উৎসাহ ও প্রেরণা সৃষ্টিকারী এক মন্ত্রের মতো।
এই ইচ্ছাশক্তি বাড়ানোর কিছু কৌশল নিয়ে বিভিন্ন সময় কাজ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তেমন কিছু কৌশল নিচে তুলে ধরা হলোঃ
১। মেডিটেশন : মেডিটেশন এর কাজ হচ্ছে নিজের মস্তিস্কে (ব্রেন) নিজে নির্দেশনা দেয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ধ্যানমগ্ন থাকলে কিছুদিন পর আপনি যে কোন কাজ বেশি ভালো ভাবে করতে পারছেন। নিয়মিত মেডিটেশন করলে মানসিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়বে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও ইচ্ছাশক্তি। কমবে মানসিক চাপ।
২। শারীরিক অঙ্গভঙ্গি : ইচ্ছাশক্তি বাড়াতে শারীরিক অঙ্গভঙ্গির গুরুত্ব অনেক। বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে দু’দল লোকের উপর পর্যবেক্ষণ করে একদল লোককে সাধারণভাবে চলাচল করতে বলেন এবং অন্য দলকে তাদের চলাচলে সামান্য একটু পরিবর্তন করতে বলেন। পরিবর্তনটি হচ্ছে যখনি তারা নিজেদের মধ্যে আড়ষ্টতা অনুভব করবেন তখনই সোজা হয়ে বসবেন। অবাক বিষয় হচ্ছে এ সাধারণ অভ্যাস পরিবর্তন তাদের ইচ্ছাশক্তি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
৩। স্বল্প শর্করা জাতীয় খাবার : খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার, যা মস্তিষ্কে শক্তি জোগাবে এবং মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করবে। আমাদের খাদ্য থেকে শরীর গ্লুকোজ উৎপাদন করে থাকে। এটি রক্তের সাথে প্রবাহিত হয়ে আমাদের ব্রেনে চলে যায় এবং আমাদের চিন্তাশক্তি, নতুন কিছু তৈরী করার বুদ্ধি আর ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে সেটা পরিমিত হওয়া চাই যেন আমাদের রক্তে চিনির স্বল্পতা বা আধিক্য দেখা না দেয়।
৪। পর্যাপ্ত ঘুম : গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাবে আমাদের মস্তিষ্কের কিছু অংশ কম সক্রিয় হয়ে পড়ে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম আমাদের ইচ্ছাশক্তিকে অনেকখানি প্রভাবিত করতে পারে। ঘুম ঠিকমত না হলে এর প্রভাব পড়ে মনে। ব্রেনে একটা চাপ তৈরী হয়। ফলে ব্রেনের যতটুকু চালিকা শক্তি প্রয়োজন ততটুকু শক্তি পায় না। এতে মনের জোর বা ইচ্ছাশক্তি ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
৫। শরীর চর্চা : মানুষের শরীরে যা সহ্য করানো হয়, তাই সহ্য হয়ে যায়। তাই প্রথমে আলসেমি লাগলেও একটু একটু করে প্রতিদিন শরীরচর্চা করলে শরীর হালকা ঝরঝরে অনুভুত হয়। তখন যে কোন কাজ উদ্যম নিয়ে করতে পারছেন। আর শরীর যখন আপনার কমান্ড মানতে শুরু করবে ঠিক তখনি আপনার ইচ্ছাশক্তি হাজারগুণ বেড়ে যাবে।
৬। বর্তমান কাজে মনোনিবেশ : যখনি একটি কাজ হাতে নিবেন তখন সেই কাজটির প্রতি পূর্ণ মনোনিবেশ করুন। একসাথে একাধিক কাজ হাতে না নিয়ে একটি করে শেষ করুন। এতে মনোযোগ বাড়বে। এ প্রক্রিয়াটি আপনার ব্রেনকে সাহায্য করে মনকে কেন্দ্রীভূত করে। প্রতিদিন চর্চার ফলে আপনার ইচ্ছাশক্তি বাড়বে।
৭। নিজের সাথে কথা বলুন : আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের খুঁত বের না করে নিজের গুণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনার আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি বেড়ে যাবে ইচ্ছাশক্তি।
৮। অনুপ্রেরণা খোঁজা : কী আপনাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে থাকে? আপনাকে উদ্দীপ্ত করে থাকে এমন কোন উপদেশ, কারো কথা বা বাণী, কারো সহচর্য, কোন কাজ, মিউজিক, খেলাধূলা ইত্যাদি যাই হোক না কেন অনুপ্রেরণার উৎস খুঁজুন। এ অনুপ্রেরণাই আপনার ইচ্ছাশক্তিকে বাড়িয়ে দিবে।
৯। পরিবেশ পরিবর্তন : অনেক সময় একই কাজ একই পরিবেশে দীর্ঘদিন ধরে করার ফলে ইচ্ছাশক্তি দিন দিন কমে যেতে থাকে। ইচ্ছাশক্তি বজায় রাখতে পরিবেশ পরিবর্তন করা যেতে পারে। এই নতুন পরিবেশ নতুন উদ্দীপনা জাগাতে সাহায্য করতে পারে।
লেখক : ফজলুর রহমান, রচনা সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং সহকারী রেজিস্ট্রার, চুয়েট।
যেভাবে সোনালি ভোরটা নিজের হতে পারে
স্বপ্নের প্রকল্প : চুয়েটের শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর
মানবীয় সম্পদের ভান্ডার গড়ে তোলার উপায়
জগতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান হলো নিজেকে জানা
সুস্থ আছেন মানে আপনার মাথায় রাজমুকুট
মনে নেয়া মেনে নেয়া মানিয়ে নেয়া
করোনাকালে যেসব আনন্দের অভাব খুব অনুভূত হচ্ছে
২০৫০ সালের মধ্যেই মানব সভ্যতায় নতুন মোড় !
উঠতি বয়সে অপরাধ: কিশোরদের আরো কিছু কাজ দিন
Developed By Muktodhara Technology Limited