শিরোনাম
মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান | ১৩:৫৭, মার্চ ২৭, ২০২১
১৯৭২ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা বার্ষিকী। এদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন যে, আজকের দিনটি আমি একান্তে অনুভব করতে চাই। কেন বলেছিলেন, সেটা পাঠক মাত্রই অনুধাবন করতে পারেন। তাঁর প্রিয় দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাঁর প্রিয় মানুষেরা আজ স্বাধীন! কিন্তু যে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে হানাদার পাকিস্তানী নরপিশাচরা, তা কি হৃদয়ে বহন করা যায়? একদিকে পরম আনন্দ, আরেক দিকে গভীর বেদনার ক্ষত।এদিন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা দৈনিক বাংলায় ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। নতুন প্রজন্মের কাছে এটি নতুন জানার জগৎ তৈরি করবে বলে মনে করছি-
প্রথম থেকেই ইয়াহিয়া পশুটাকে আমি বিশ্বাস করতাম নাঃ বেগম মুজিব
গত বছরের এই দিনের স্মৃতি চারণ করতে গেলে প্রথমেই আমার মন কেঁদে উঠে। সেই ভয়াল ২৫শে মার্চের কালো রাত থেকে ১৬ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এদেশের পরিজনহারা লাখো লাখো পরিবারের কথা ভেবে অশান্ত হয়ে উঠে মন। তাই পৃথক করে হিংস্র এই রাতটার কোন কথা বলতে বা ভাবতে আমার মন সায় দেয় না।-বললেন বেগম মুজিব।
কথা বলছিলাম ৩২ নং রোডের সেই বাড়ীটাতে। একটা বছর আগের একরাশ স্মৃতির ছায়ায় বসে বেগম মুজিব বলছিলেন অবিস্মরণীয় সেই ২৫ শে মার্চের রাত ও তারও আগেকার দিনগুলোর কথা।
অসহযোগ আন্দোলনের সেই অনন্য দিনগুলো। ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত বাংলার মানুষ এক হয়ে গেছে। ঠিক এমনি মুহুর্তে আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে ইয়াহিয়া চক্র বাংলায় এলো। প্রথম থেকেই পাকিস্তানী নৃশংস এই পশুটাকে আমি বিশ্বাস করতে পারতাম না। আলোচনা বৈঠকের প্রথম থেকেই এক অশুভ কালো ছায়াকে আমি যেন দেখতে পেয়েছিলাম সেদিনের জাগ্রত বাংলার অঙ্গনে। শেখ সাহেবকেও আমি বলেছিলাম যারা তাঁকে আগরতলা মামলায় জড়িয়েছে, তারা ভালোভাবেই জানে যে শেখ সাহেব বাংলাদেশ আর বাঙালীদের চিন্তাভাবনাই করেন- পাকিস্তান প্রশ্নে তাঁর আগ্রহ নেই। পাকিস্তানের ক্ষমতা তারা শেখ সাহেবকে দিবে না। কাজেই আলোচনা আরম্ভ করে তারা অন্য কোন নতুন কৌশল বের করার সুযোগ খুঁজছে মাত্র। আমার কথা শেখ সাহেব শুনলেন। মুখে কিছুই বললেন না। তিনি দলীয় নেতাদের বৈঠক ছাড়া বাইরে তেমন কিছু বলতেন না তখন।
গত বছর ২৫ শে মার্চের সকাল থেকে বাড়ীর অবস্থা ভার ভার লাগছিল। দুপুর তখন প্রায় সাড়ে বারোটা। আমাদের বাসার সামনে দিয়ে সৈন্য বোঝাই দুটো ট্রাক চলে গেল। দোতলা থেকেই ট্রাকগুলো দেখে আমি নিচে নেমে এলাম। শেখ সাহেব তখনও আগত লোকদের সাথে কথাবার্তায় ব্যস্ত। তাঁকে ভেতরে ডেকে মিলিটারী বোঝাই গাড়ী সম্বন্ধে বলতেই দেখলাম পলকের মধ্যে মুখটা তাঁর গম্ভীর হয়ে গেল। পরক্ষণেই তিনি বেরিয়ে গেলেন। সমস্ত দিনটা কেটে গেল থমথমে ভাবে। এলো রাত। সেই অশুভ রাত। রাত সাড়ে আটটায় তিনি সাংবাদিকদের বিদায় দিলেন। আওয়ামী লীগ সহকর্মীদেরও কিছু কিছু নির্দেশ দিয়ে দ্রুত বিদায় দিলেন।
রাত প্রায় ১০টার কাছাকাছি কলাবাগান থেকে এক ভদ্রলোক এসে শেখ সাহেবের সামনে একেবারে আছড়ে পড়লেন। তাঁর মুখে শুধু এক কথা- আপনি পালান! বঙ্গবন্ধু পালান! ভেতর থেকে তাঁর কথা শুনে শঙ্কিত হয়ে উঠলো আমারও মন। বড় মেয়েকে তার ছোট বোনটাসহ তার স্বামীর বাড়ীতে পাঠিয়ে দিলাম। যাবার মুহুর্তে কি ভেবে যেনো ছোট মেয়েটা আমাকে আর তার আব্বাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো। শেখ সাহেব তার মাথায় হাত বুলিয়ে শুধু বললেন- বিপদে কাঁদতে নেই মা।
তখন চারদিকে সৈন্যরা নেমে পড়েছে। ট্যাঙ্ক বের করেছে পথে। তখন অনেকেই ছুটে আসছিলেন ৩২ নং রোডের এই বাড়ীতে। বলেছিল- বঙ্গবন্ধু আপনি সরে যান। উত্তরে দৃঢ়ভাবে মাথা নেড়েছিলেন তিনি- না, কোথাও আমি যাব না। রাত ১০টা থেকেই গোলাগুলী শুরু হয়ে গেল। দূর থেকে তখন গুলির শব্দ ভেসে আসছিল। দেখলাম প্রতিটি শব্দ-তরঙ্গের সাথে সাথে শেখ সাহেব সমস্ত ঘরটার মাঝে পায়চারী করছিলেন। অস্ফুটভাবে তিনি বলছিলেন- এভাবে বাঙালীকে মারা যাবে না- বাংলা মরবে না। রাত ১২টার পর থেকেই গুলির শব্দ এগিয়ে এলো। ছেলেমেয়েদের জানলা বন্ধ করতে যেয়ে দেখতে পেলাম পাশের বাড়ীতে সৈন্যরা ঢুকে পড়েছে। স্পষ্ট মনে আছে এই সময় আমি বাজের মতই এক ক্রুদ্ধ গর্জন শুনছিলাম- গো অন, চার্জ---
সেই সাথে সাথেই শুরু হলো অঝোরে গোলাবর্ষণ। এই তীব্র গোলাগুলির শব্দের মধ্যেও অনুভব করলাম- সৈন্যরা এবার আমার বাড়ীতে ঢুকেছে। নিরুপায় হয়ে বসেছিলাম আমার শোবার ঘরটাতে। বাইরে থেকে মুসলধারে গোলাবর্ষণ হতে থাকলো এই বাড়ীটা লক্ষ্য করে। ওরা হয়তো এই ঘরটার মাঝেই এমনিভাবে গোলাবর্ষণ করে হত্যা করতে চেয়েছিল আমাদেরকে। এমনভাবে গোলাবর্ষণ হচ্ছিল যে, মনে হচ্ছিল সমস্ত বাড়ীটা বোধ হয় ধ্বসে পড়বে। বারুদের গন্ধে মুখচোখ জ¦লছিল। আর ঠিক সেই দুরন্ত মুহুর্তটাতে দেখছিলাম ক্রুদ্ধ সিংহের মত সমস্ত ঘরটার মাঝে অবিশ্রান্তভাবে পায়চারী করছিলেন শেখ সাহেব। তাঁকে এভাবে রেগে যেতে কখনো আর দেখিনি।
রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে ওরা গুলী ছুড়তে ছুড়তে উপরে উঠে এলো। এতক্ষণ শেখ সাহেব ওদেরকে কিছু বলেন নি। কিন্তু এবার অস্থিরভাবে বেরিয়ে গেলেন তিনি ওদের সামনে। পরে শুনেছি সৈন্যরা সেই সময়ই তাঁকে হত্যা করে ফেলতো যদি না কর্নেল দ’ুহাত দিয়ে তাঁকে আড়াল করতো। ধীর স্বরে শেখ সাহেব হুকুম দিলেন গুলি থামাবার জন্য। তারপর মাথাটা উঁচু রেখেই নেমে গেলেন তিনি নিচের তলায়। মাত্র কয়েকমুহুর্ত। আবার তিনি উঠে এলেন উপরে। মেঝ ছেলে জামাল এগিয়ে দিল তাঁর হাতঘড়ি ও মানিব্যাগ। স্বল্প কাপড় গুছানো স্যুটকেস আর বেডিংটা তুলে নিল সৈন্যরা। যাবার মুহুর্তে একবার শুধু তিনি তাকালেন আমাদের দিকে। পাইপ আর তামাক হাতে নিয়েই বেরিয়ে গেলেন তিনি ওদের সাথে। সোফার নীচ থেকে, আলমারীর পাশ থেকে বেরিয়ে এলো কয়েকজন দলকর্মী। ওরা আস্তে আস্তে বললো- মাগো আমরা আছি। আমরা আছি। ওদের সকলের মাঝে দাঁড়িয়ে সে-রাতে কেঁদে ফেলেছিলেন বেগম মুজিব। বলেছিলেন- খোদার কাছে হাজার শোকর তোদের অন্তত ফেরৎ পেয়েছি। তোরা অন্তত: ধরা পড়িস নি। এই পর্যন্ত বলেই তিনি শেস করলেন সেই রাতটার কথা।
লেখকঃ মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান, প্রকল্প পরিচালক, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর।
সেই বিভীষিকাময় রাতঃ ঢাকার আকাশ যেদিন নৃশংসতার আগুনে জ্বলছিল
৭ কোটি মানুষ যখন ঐক্যবদ্ধ হইয়াছে তখন দাবী আদায় করিয়া ছাড়িব : বঙ্গবন্ধু
বুলেট-বেয়নেট দ্বারা কখনও সাড়ে ৭ কোটি বাঙালীর দাবীকে স্তদ্ধ করা যাইবে না : বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধুর অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন ও তার ব্যাপকতা
বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া দুদিনের আলোচনায় কোন ফল আসে নি, বঙ্গবন্ধুর জবাব আলোচনা চলবে
৫২তম জন্মদিনে আপনার সব চাইতে বড় ও পবিত্র কামনা কি? বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘জনগণের সার্বিক মুক্তি
বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের অসহযোগ আন্দোলনের ৩৫ দফা নির্দেশ জারি
শেখ মুজিবের উপর ভরসা রাখুন, অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন
দোষ করিল লাহোর আর বুলেট বর্ষিত হইল ঢাকায়
১৯৭১ সালের ১২ মার্চ : কুর্মিটোলা মার্শাল ল’ অফিস ছাড়া কোথাও পাকিস্তানী পতাকা ওড়ে নাই
বিদেশী সাংবাদিকদের প্রতি শেখ মুজিবের আহবান
পূর্বাঞ্চলে যে ‘ভয়াবহ অবস্থা’ চলিতেছে, পশ্চিম পাকিস্তানের লোকেরা তাহা জানে না
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শর্ত মানিয়া লও
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম : বঙ্গবন্ধু
ঢাকার রাজপথে স্বাধিকারকামী জনতার দৃপ্ত পদচারণা কন্ঠে কন্ঠে ক্ষুব্ধ গর্জন, প্রাণে প্রাণে সংগ্রামী শপথ
ঢাকার উত্তপ্ত রাজপথ, নানা জল্পনা-কল্পনা ও রাজনৈতিক ধোঁয়াশায় কাটে ৬ই মার্চ
দেশে যদি বিপ্লবের প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে সে বিপ্লবের ডাক আমিই দিব, আমিও কম বিপ্লবী নই: বঙ্গবন্ধু
দানবের সঙ্গে সংগ্রামের জন্য যেকোন পরিণতিকে মাথা পাতিয়া বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত : বঙ্গবন্ধু
৩ হইতে ৬ মার্চ প্রতিদিন সকাল ৬টা হইতে দুপুর ২টা পর্যন্ত সমগ্র প্রদেশে হরতাল পালন করুন : বঙ্গবন্ধু
২ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সাংবাদিক সম্মেলন
আসুন, পরিষদেই সমাধান খোঁজা হইবে : বঙ্গবন্ধু
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা : প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ
ঘুরে আসুন সাজেক, খেয়াল রাখবেন কিছু বিষয়ে
নারী ও শিশু নির্যাতন: সভ্য সমাজের বর্বর বার্তা
Developed By Muktodhara Technology Limited