শিরোনাম
মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান | ০০:২৪, মার্চ ৩০, ২০২১
১৯৭১ সালের ৩রা মার্চের অধিবেশন স্থগিত করে দেওয়ায় শুরু হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন। সে আন্দোলনে এদেশের আপামর জনসাধারণ একাত্মতা ঘোষণা করেন, একাত্ম হন সরকারি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারি, বিচার বিভাগসহ সকল প্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধুর অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হতে পারে। বহুমুখী বিশ্লেষণ হতে পারে। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ দৈনিক ইত্তেফাকে মোহাম্মদ মোদাব্বের হোসেন লিখিত একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এ নিবন্ধ থেকে বঙ্গবন্ধুর অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
বঙ্গবন্ধুর অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনঃ যুগের বিস্ময়কর আন্দোলন
তুফানের দিনে সমুদ্রের সর্বনাশা জলোচ্ছাস দেখিনি, কিন্তু তার ভয়বহ পরিণতি লক্ষ্য করেছি। সাবধানী মানুষের কোন বাঁধই সে প্লাবনকে রোধ করতে পারে না। বাংলার রাজনৈতিক জীবনে তেমনি বাঁধভাঙ্গা প্লাবন এসেছে, বিপদ-বাঁধা দু’পায় দলে কোটি মানুষের জয়যাত্রা শুরু হয়েছেÑ নতুন ইতিহাস সৃষ্টির জয়োল্লাসে জনতার কাফেলা এগিয়ে চলেছে। কোটি কণ্ঠ একই কণ্ঠে গেয়ে উঠেছেÑ উদয়ের পথে শুনি কার বাণী বয় নাই ওরে ভয় নাই। নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই।
জীবন দিয়ে অক্ষয় অমর হয়ে থাকার এই যে অভয়মন্ত্র এই যে মহাশক্তিশালী অস্ত্রÑ একেই বলে অহিংস-অসহযোগ। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এই মহামন্ত্রের উদ্গাতা ছিলেন দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানব মহাত্মা গান্ধী। আর বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে এই মহামন্ত্র উচ্চারিত হল বাংলার আদরের ধন, প্রতিক্রিয়াশীল সরকারের হাতে নিয়ত নিপীড়িত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠে। বলতে বাধা নেই, এই অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে শেখ মুজিব যে গতি সৃষ্টি করেছেন দুনিয়ার ইতিহাসে তা চির উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ন সম্প্রতি এক বিবৃতিতে শেখ মুজিব পরিচালিত অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধী পরিচালিত আন্দোলনের তুলনা করেছেন। জয়প্রকাশকে ব্যক্তিগতভাবে জানান সুযোগ আমার হয়েছিল। ১৯৩২ খৃস্টাব্দ থেকে ১৯৩৫ খৃস্টাব্দে পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। আমি জানি, তিনি স্বল্পভাষী এবং বিচার-বিবেচনা করে কথা বলার জন্য সর্বজন সমাদৃত। বিশেষ করে বিনোবাজীর ভ‚দান আন্দোলনে যোগদান করার পর থেকে তিনি রাজনীতিক অপেক্ষা মানববাদী বেশী। সে জন্য বাংলার অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন, তার প্রতিবাদ করার মত ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে উভয় যুগের আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে ঈষৎ আলোকপাত করা হয়ত অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
গান্ধীজীর অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন সম্ভবত: দুনিয়ার প্রথম এই ধরণের আন্দোলন। সত্যের সঙ্গে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এবং অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের পর এই আন্দোলন দানা বাঁধে। অবিভক্ত ভারতের শ্রেষ্ঠতম রাজনৈতিক মনীষীরা ছিলেন গান্ধীজীর সহকর্মী। মওলানা আবুল কালাম আজাদ, মওলানা মোহাম্মদ আলী ও শওকম আলী, পন্ডিত মতিলাল ও জওয়াহেরলাল নেহরু, ডা: এম. এ. আনসারী, পন্ডিত মদনমোহন মালব্য, বল্লবভাই প্যাটেল, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, সুবাস চন্দ্র বসু, মওলানা আকরাম খা, মওলবী মুজীবুর রহমান, মওলানা তমিজউদ্দীন খাঁঁ প্রমুখ অসংখ্য নেতৃপুরুষ তাঁদের সহযোগিতা ও শক্তি দিয়ে এই আন্দোলনে প্রাণবন্যা এনেছিলেন। কিন্তু তবুও বার বার আন্দোলন ব্যাহত হয়েছে। চৌরিচৌরাতে অহিংসÑসৈনিকরা হিংসার পথ গ্রহণ করায় মহাত্মা গান্ধীকে আন্দোলন স্থগিত রাখতে হয়।
গান্ধীজীর আন্দোলনের ধারা ও প্রকৃতি সম্পর্কে আরো দু’এক বিষয়ের উল্লেখ করা প্রয়োজন। ১৯২১ সাল থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত অহিংসÑঅসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে আরো ানেক আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, তার মধ্যে সন্ত্রাসবাদ, সাম্যবাদ এবং প্রতিক্রিয়াশীল হিন্দুদের হিন্দু-মহাসতা আন্দোলন বা শুদ্ধি আন্দোলন। কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের মুসলিম বিদ্বেষ পরে মুসলমানদের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষের সৃষ্টি ঘটায়। এগুলি তৎকালীন অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের পতিপথে অনেকখানী বাধা সৃষ্টি করেছিল একথা অনস্বীকার্য।
অবিভক্ত ভারতের বত্রিশ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় দশ কোটি মানুষ সক্রিয়ভাবে অহিস-অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল এবং প্রায় সমসংখ্যক প্ররাক্ষা সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু পুলিস, সিভিলিয়ান ও অন্যান্য সরকারী কর্মচারীর মধ্যে অতি নগণ্য সংখ্যক এই আন্দোলনে শরীক হয়েছিল। তবুও এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, এটা ছিল মতাব্দীর বিস্ময়কর রাজনৈতিক আন্দোলন।
এখন ১৯৭১ সালের বাংলার অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনে আসা যাক। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর স্বাধীন রাষ্ট্রে একটি প্রদেশ যা সংখ্যাগুরু প্রদেশ, গত তেইশ বছর ধরে শোষিত হয়েছে, যার ঐশ^র্য লুণ্ঠিত হয়েছে, যাদের মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, ভাষার মর্যাদা রাখতে গিয়ে যাদের বুকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে, তাদের ধুমায়িত রোষ আজ বিষুবিয়াসের লাভাপ্রবাহের মত ফেটে বেরিয়েছে। স্বাধীনতা পাওয়ার পরও পরাধীনতার লা না আর তারা সহ্য করতে রাজী নয়। এই প্রলংকর মুহুর্তে বাংলার নির্যাতিত সন্তান দেশের ভাাগ্য-তরণীর হাল ধরেছেন। তাঁর নেতৃত্বে জাতিকে নির্ভুল পথ নির্দেশ হয়েছে। তাই, আজ সিভিলিয়ান, পলিশ, আইন-আদালত, ব্যাঙ্ক-বীমা, শিল্প-বাণিজ্য, স্কুল-কলেজ, সর্ব স্তরের মানুষ তাঁর ডাকে পথে নেমেছে। সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ এককণ্ঠে আওয়াজ তুলেছে ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে।’ আন্দোলনে এই যে একাত্মতা পৃথিবীর ইতিহাসে এর নজীর পাওয়া যায় না। সেদিক থেকে বলতে গেলে এ কথাই বলতে হয় যে, শেখ মুজিবের আন্দোলন পরিপূর্ণভাবে সারা প্রদেশের সার্বিক আন্দোলন। গান্ধীজীর আন্দোলনের অপেক্ষাা মুজিবের আন্দোলন এদিক থেকে অধিকতর সাফল্যের দাবীদার।
অবশ্য মহাত্মা গান্ধীর বিশাল ব্যক্তিত্বকে ছোট করে দেখানোর মত নীচতা যেন আমার না হয়, তবে দুইটি যুগের একই ধরণের দুইটি আন্দোলনের তলিনামূলখ বিচার করতে গিয়ে এই কথাগুলো বলতে হল। বিশেষ করে আমার পুরাতন বন্ধু জয়প্রকাশ নারায়ন দূর থেকে এখানকার আন্দোলনের ব্যাপকতা হয়ত উপলব্ধি করতে পারছেন না। তা যদি পারতেন তাহলে তিনি আমার সঙ্গে নিশ্চয়ই একমত হতেন।
লেখকঃ মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান, প্রকল্প পরিচালক, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালো রাত ও বেগম মুজিব
সেই বিভীষিকাময় রাতঃ ঢাকার আকাশ যেদিন নৃশংসতার আগুনে জ্বলছিল
৭ কোটি মানুষ যখন ঐক্যবদ্ধ হইয়াছে তখন দাবী আদায় করিয়া ছাড়িব : বঙ্গবন্ধু
বুলেট-বেয়নেট দ্বারা কখনও সাড়ে ৭ কোটি বাঙালীর দাবীকে স্তদ্ধ করা যাইবে না : বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধুর অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন ও তার ব্যাপকতা
বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া দুদিনের আলোচনায় কোন ফল আসে নি, বঙ্গবন্ধুর জবাব আলোচনা চলবে
৫২তম জন্মদিনে আপনার সব চাইতে বড় ও পবিত্র কামনা কি? বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘জনগণের সার্বিক মুক্তি
বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের অসহযোগ আন্দোলনের ৩৫ দফা নির্দেশ জারি
শেখ মুজিবের উপর ভরসা রাখুন, অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন
দোষ করিল লাহোর আর বুলেট বর্ষিত হইল ঢাকায়
১৯৭১ সালের ১২ মার্চ : কুর্মিটোলা মার্শাল ল’ অফিস ছাড়া কোথাও পাকিস্তানী পতাকা ওড়ে নাই
বিদেশী সাংবাদিকদের প্রতি শেখ মুজিবের আহবান
পূর্বাঞ্চলে যে ‘ভয়াবহ অবস্থা’ চলিতেছে, পশ্চিম পাকিস্তানের লোকেরা তাহা জানে না
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শর্ত মানিয়া লও
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম : বঙ্গবন্ধু
ঢাকার রাজপথে স্বাধিকারকামী জনতার দৃপ্ত পদচারণা কন্ঠে কন্ঠে ক্ষুব্ধ গর্জন, প্রাণে প্রাণে সংগ্রামী শপথ
ঢাকার উত্তপ্ত রাজপথ, নানা জল্পনা-কল্পনা ও রাজনৈতিক ধোঁয়াশায় কাটে ৬ই মার্চ
দেশে যদি বিপ্লবের প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে সে বিপ্লবের ডাক আমিই দিব, আমিও কম বিপ্লবী নই: বঙ্গবন্ধু
দানবের সঙ্গে সংগ্রামের জন্য যেকোন পরিণতিকে মাথা পাতিয়া বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত : বঙ্গবন্ধু
৩ হইতে ৬ মার্চ প্রতিদিন সকাল ৬টা হইতে দুপুর ২টা পর্যন্ত সমগ্র প্রদেশে হরতাল পালন করুন : বঙ্গবন্ধু
২ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সাংবাদিক সম্মেলন
আসুন, পরিষদেই সমাধান খোঁজা হইবে : বঙ্গবন্ধু
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা : প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ
ঘুরে আসুন সাজেক, খেয়াল রাখবেন কিছু বিষয়ে
নারী ও শিশু নির্যাতন: সভ্য সমাজের বর্বর বার্তা
Developed By Muktodhara Technology Limited